উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) নির্দিষ্ট অর্থবোধক শব্দ (خاصًّ) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
খাস (خاص)

خاصًّ এর সংজ্ঞা: আভিধানিকভাবে خاصًّ শব্দটি عام এর বিপরীত।

পারিভাষিক অর্থ:

اللفظ الدال على محصور بشخص أو عدد، كأسماء الأعلام والإشارة والعدد

خاصًّ এমন শব্দ যা কোন ব্যক্তি বা সংখ্যার দ্বারা সীমায়িত কোন কিছু বুঝায়। যেমন: নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম, ইঙ্গিতসূচক বিশেষ্য, নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রভৃতি।

আমাদের ভাষ্য: على محصورঅংশটুকুর মাধ্যমে عام বিলুপ্ত হয়েছে।

التخصيص (নির্দিষ্ট করা) এর সংজ্ঞা: আভিধানিক অর্থ: এ শব্দটি التعميم বা ব্যাপক করণের বিপরীত।

পারিভাষিক অর্থ:

إخراج بعض أفراد العام

অর্থাৎ التخصيص (নির্দিষ্ট করা) হলো العام এর কিছু একককে বিলুপ্ত করা।

المخصِص (ছোয়াদ বর্ণে যের দিয়ে) ব্যবহৃত হলে অর্থ হবে خاص কারী। তিনি হলেন শরীয়ত প্রণেতা। শব্দটি ঐ দলীলের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে خاص অর্জিত হয়। خاص করার দলীল দু’প্রকার। যেমন: ১. متصل (সংযুক্ত দলীল) ২. منفصل (অসংযুক্ত দলীল)।[1]

১. متصل (সংযুক্ত দলীল) : হলো যা স্বতত্র আলাদাভাবে ব্যবহৃত হয় না।

২. منفصل (অসংযুক্ত দলীল): যা স্বতত্র আলাদাভাবে ব্যবহৃত হয়।

خاص কারী সংযুক্ত দলীলের অন্যতম হলো:

প্রথমত استثناء :এটি আভিধানিকভাবে الثني থেকে নির্গত। এর অর্থ হলো কোন জিনিসের কিছু অংশকে অন্যে অংশের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া। যেমন:ثنى الحبل -দড়ির একাংশকে অপর অংশের উপর রাখা।

পারিভাষিক অর্থ:

إخراج بعض أفراد العام بإلا أو إحدى أخواتها

অর্থাৎ استثناء হলো الا বা তার সমগোত্রীয় কোন অব্যয়ের মাধ্যমে عام এর কিছু একককে বের করে দেওয়া। যেমন: আল্লাহর বাণী:

إِنَّ الْأِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ) [العصر:2] (إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ) [العصر:3]

নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের (সূরা আল-আছর ১০৩:২,৩)।’’

আমাদের বক্তব্য: بإلا أو إحدى أخواتها তথা الا বা তার সমগোত্রীয় কোন অব্যয়ের দ্বারা شرط ও অন্যান্য উপায়ে خاص করা বিলুপ্ত হয়েছে।[2]

استثناء এর শর্ত : استثناء শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে।

তন্মধ্যে অন্যতম হলো:

(১) এটি مستثني منه এর সাথে প্রকৃত অথবা বিধানগত ভাবে সংযুক্ত থাকবে।

প্রকৃতভাবে متصل বা সংযুক্ত থাকা হলো: حرف الاستثناء টি مستثني منه এর সাথে এমনভাবে সংযুক্ত হয়ে থাকা যে, উভয়ের মাঝে কোন فأصل বা বিভাজনকারী শব্দ থাকে না।

বিধানগতভাবে متصل বা সংযুক্ত থাকা হলো: উভয়ের মাঝে এমন فأصل থাকে, যা প্রতিরোধ করা যায় না। যেমন: হাঁচি, কাশি ইত্যাদি।

যদি উভয়ের মাঝে এমন فأصل আসে, যা প্রতিরোধ করা সম্ভব অথবা উভয়ের মাঝে নিরব থাকে, তাহলে استثناء শুদ্ধ হবে না। যেমন: এটা বলা যে, আমার দাসগুলো স্বাধীন। এটা বলার পর চুপ থাকে অথবা অন্য কোন কথা বার্তা বলে। অতঃপর বলে, তবে যাইদ ব্যতীত। তাহলে এভাবে বলাতে استثناء শুদ্ধ হবে না। বরং সবাইকে স্বাধীন করতে হবে।

এ ব্যাপারে এটাও বলা হয় যে: মাঝখানে চুপ থাকলে অথবা فأصل থাকলেও استثناء শুদ্ধ হবে, যদি (سكوت বা فأصل এর আগে ও পরের) কথা একই প্রসঙ্গে হয়। এ ব্যপারে দলীল হলো,

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের হাদীস। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন: আল্লাহ তা‘য়ালা যখন আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকেই তিনি এ শহরকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং এখানের কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ কেটে ফেলা যাবে না এবং এখানকার ঘাসও মুলোৎপাটন করা যাবে না। তখন আব্বাস (রা:) বললেন: হে আল্লাহর রসুল! ইযখির ঘাস ব্যতীত। কারণ এটি আমাদের কবর ও ঘরের কাজে ব্যবহৃত হয়। অতঃপর তিনি বললেন: তবে ইযখির ঘাস ব্যতীত।

অত্র হাদীছটি এর উপর প্রমাণ বহন করার কারণে এ মতটি অধিকতর অগ্রগণ্য।

(২) مستثني টি مستثني منه এর অর্ধেকের বেশি হবে না। সুতরাং কেউ যদি বলে, আমার উপর আবশ্যক হলো তাকে ছয় কম দশ দিরহাম প্রদান করা। এভাবে استثناء শুদ্ধ হবে না। সুতরাং তাকে দশ দিরহামই প্রদান করতে হবে।

এ ব্যাপারে এটাও বলা হয় যে, এটি শর্ত নয়। কাজেই استثناء শুদ্ধ হয়ে যাবে, যদিও مستثني টি مستثني منه এর অর্ধেকের বেশি হয়। সুতরাং উল্লেখিত উদাহরণে তার জন্য চার দিরহাম প্রদান করাই আবশ্যক হবে।[3]

কিন্তু যদি সম্পূর্ণটাকেই استثناء করে, তাহলে উভয় মত অনুসারেই استثناء শুদ্ধ হবে না। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি বলে, আমি তাকে দশ কম দশ দিরহাম টাকা প্রদান করবো, তাহলে তার জন্য সম্পূর্ণ দশ দিরহামই প্রদান করা আবশ্যক হবে।

استثناء যখন সংখ্যা বাচক হবে তখনই এ শর্তটি প্রযোজ্য হবে। কিন্তু استثناء যদি গুণ বাচক হয়, তাহলে তা শুদ্ধ হবে, যদিও مستثني منه থেকে مستثني সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ বেরিয়ে যায়। যেমন: ইবলিসের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন,

إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ

‘‘যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে (সূরা হিজর ১৫:৪২)।’’

এমনকি যদি বলি: أعط من في البيت إلا الأغنياء - বাড়ীতে যারা আছে তাদেরকে দান করো, তবে ধনীদের নয়। অতঃপর দেখা গেল যে, বাড়ীর সবাই ধনী।

তাহলেও استثناء শুদ্ধ হবে। এবং কাউকেই কিছু দেওয়া হবে না।

দ্বিতীয়ত: خاص কারী দলীল যা مستثني منه এর সাথে সংযুক্ত থাকে, তার মধ্যে আরেকটি হলো الشرط (শর্ত)।

شرط এর আভিধানিক অর্থ হলো: আলামত বা নিদর্শন।

এর দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলো:

تعليق شيء بشيء وجودا أو عدما بإِنْ الشرطية أو إحدى أخواتها

কোন কিছুর অস্তিত্ব লাভ করা বা না করা ক্ষেত্রে শর্তবোধক إِنْ বা তার সমগোত্রীয় অব্যয়ের মাধ্যমে কোন বস্ত্তকে অপর কোন বস্ত্তর সাথে ঝুলিয়ে দেয়া।’’

عام -شرط কে خاص করে দেয়। চাই শর্তটি مستثنى منه এর আগে ব্যবহৃত হোক অথবা পরে ব্যবহৃত হোক। شرط আগে ব্যবহৃত হওয়ার উদাহরণ হলো: মুশরিকদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,

فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُم

‘‘কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও।’’ (সূরা আত-তাওবাহ ৯:৫ )।

شرط পরে আসার উদাহরণ হলো: আল্লাহর বাণী:

وَالَّذِينَ يَبْتَغُونَ الْكِتَابَ مِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرا) [النور: من الآية 33]

‘‘তোমাদের অধিকারভুক্তদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায়, তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর যদি জান যে, তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে (সূরা আন-নূর ২৪:৩৩)।’’

তৃতীয়ত: صفة বা গুণবাচক শব্দ। আর তা হচ্ছে,

ما أشعر بمعنى يختص به بعض أفراد العام من نعت أو بدل أو حال

صفة হলো যা গুণ, বদল, অবস্থার বিবরণ ইত্যাদির এমন অর্থ নির্দেশ করে যার সাথে عام এর কিছু فرد (একক) বিশেষিত থাকে। যেমন:

نعت (গুণ) এর উদাহরণ হলো: আল্লাহর বাণী:

فَمِنْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ مِنْ فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ

‘‘সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে।’’ (সূরা আন-নিসা ৪:২৫)।[4]


بدل এর উদাহরণ হলো: আল্লাহর বাণী:

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ

‘‘এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।’’ (সূরা আলে-ইমরান ৩:৯৭)।[5]

حال এর উদাহরণ হলো: আল্লাহর বাণী:

وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا.

‘‘ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে।’’ (সূরা আন-নিসা ৪:৯৩)।[6]

خاص কারী বিচ্ছিন্ন দলীল:

خاص কারী বিচ্ছিন্ন দলীল হলো: যা স্বয়ং সম্পূর্ণভাবে আসে। এগুলি ৩টি। যথা: ১. الحس (অনুভূতি) ২. العقل (বিবেক) ৩. الشرع (শরীয়ত)

الحس বা অনুভুতির মাধ্যমে خاص করার দলীল হলো: আ‘দ জাতীর উপর প্রেরিত বায়ু সম্পর্কে আল্লাহর বাণী:

تُدَمِّرُ كُلَّ شَيْءٍ بِأَمْرِ رَبِّهَا

‘‘তার পালনকর্তার আদেশে সে সব কিছুকে ধ্বংস করে দেবে (সূরা আল-আহক্বাফ ৪৬:২৫)।’’

আমাদের অনুভুতি প্রমাণ করে যে, উক্ত বায়ু আসমান ও জমিনকে ধ্বংস করেনি। জ্ঞানের মাধ্যমে عام কে خاص করার দলীল: আল্লাহর বাণী:

اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ

‘‘আল্লাহ সর্বকিছুর স্রষ্টা’’

আমাদের জ্ঞান প্রমাণ করে যে, তার সত্তা সৃষ্টি নয়।

কিছু বিদ্বান মনে করেন, জ্ঞান ও অনুভুতির মাধ্যমে যে خاص হয়, এটি মূলত عام থেকে খাস হয়নি। বরং এটি এমন عام যার দ্বারা خاص উদ্দেশ্য। কারণ خاص কৃত বিষয়টি শুরু থেকেই বক্তা বা শ্রোতা কারোই উদ্দেশ্য ছিলো না। এটি হলো বাস্তবে ঐ عام , যা দ্বারা خاص উদ্দেশ্য।

তৃতীয়ত: শরীয়তের মাধ্যমে خاص করা। কেননা কুরআন ও হাদীছকে অনুরূপ জিনিস অর্থাৎ কুরআন, হাদীস, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা خاص করা হয়।

কুরআনকে কুরআন দ্বারা خاص করার উদাহরণ: আল্লাহর বাণী:

وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ

‘‘আর তালাক প্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত (সূরা আল-বাক্বারা ২:২২৮)।’’

উক্ত আয়াতটি নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা خاص হয়েছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا

‘‘মুমিনগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নেই (সূরা আল-আহযাব ৩৩:৪৯)।’’[7]

কুরআনকে হাদীছ দ্বারা خاص করার দলীল হলো: মীরাছের আয়াত:

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন, একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান (সূরা আন-নিসা ৪:১১)।’’

এ আয়াত এবং এর মত অন্যান্য আয়াতসমূহ নিচের হাদীছ দ্বারা خاص হয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لا يرث المسلم الكافر ولا الكافر المسلم

‘‘কোন মুসলিম কাফের ব্যক্তির উত্তরাধিকার হবে না এবং কোন কাফের মুসলিম ব্যক্তির উত্তরাধিকার হবে না।’’[8]

কুরআনকে ইজমা এর মাধ্যমে خاص করার দলীল হলো:

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً

‘‘যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে (সূরা আন-নূর ২৪:৬৪ )।’’

আয়াতটি নিম্নোক্ত ইজমার মাধ্যমে خاص হয়েছে। এখানে ইজমা হলো অপবাদ দানকারী দাসকে ৪০ টি বেত্রাঘাত করা হবে।

উক্ত উদাহরণটি সঠিক হওয়ার ব্যাপারে ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আমি এর ক্রটিমুক্ত কোন উদাহরণ খুঁজে পাইনি।[9]

ক্বিয়াসের মাধ্যমে কুরআনকে خاص করার উদাহরণ: আল্লাহর বাণী:

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ

‘‘ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর (সূরা আন-নূর ২৪:২ )।’’

প্রসিদ্ধ মতানুসারে ব্যভিচারের ক্ষেত্রে দাসীর শাস্তির অর্ধেক করে পঞ্চাশ বেত্রাঘাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়ার উপর ব্যভিচারী দাসকে ক্বিয়াস করে অত্র আয়াতটি خاص করা হয়েছে।[10]

হাদীছকে কুরআন দ্বারা خاص করার উদাহরণ: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

أمرت أن اقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله

আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষদের সাথে যুদ্ধ করতে, যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআল্লাহর রসূল।’’[11]

হাদীছটি নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা خاص হয়েছে। আল্লাহ বলেন:

(قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّىٰ يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ).

তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম জানে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে (সূরা আত-তাওবাহ ৯:২৯)।’’

হাদীছকে হাদীছের মাধ্যমে خاص করার উদাহরণ: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

فيما سقت السماء العشر.

‘‘বৃষ্টির পানিতে যে শষ্য উৎপন্ন হয়, তাতে এক দশমাংশ ওশর দিতে হবে।’’[12]

অত্র হাদীসটি নিম্নোক্ত হাদীছ দ্বারা خاص করা হয়েছে।

ليس فيما دون خمسة أوسق صدقة

‘‘পাঁচ ওয়াসাক এর কম ফসলে কোন যাকাত নেই।’’[13]

ইজমার মাধ্যমে হাদীছকে خاص করার কোন উদাহরণ আমি খুঁজে পাইনি। ক্বিয়াসের মাধ্যমে হাদীসকে خاص করার উদাহরণ: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

البكر بالبكر جلد مائة وتغريب عام

‘‘অবিবাহিত পুরুষ অবিবাহিত নারীর সাথে যেনা করলে, একশত বেত্রাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে।’’[14]

প্রসিদ্ধ মতানুসারে ব্যভিচারের ক্ষেত্রে দাসীর শাস্তি অর্ধেক করে পঞ্চাশ বেত্রাঘাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়ার উপর ব্যভিচারী দাসকে ক্বিয়াস করে হাদীছকে خاص করা হয়েছে।

[1]. একটি শব্দের অর্থের আওতায় যতগুলি একক রয়েছে, যদি ঐ শব্দ দ্বারা সবগুলো একক বুঝায়, তাহলে ঐ শব্দকে عام বলে। অত:পর কোন শব্দ ‍যদি عام এর কিছু একককে হুকুমের সাথে নির্দিষ্ট করে অন্য কিছু একককে বের করে দেয়, তবে তাকে خاص বলে। যেমন: কুরআনে বলা আছে-

إن الإنسان لفي خسر- إلا الذين آمنوا وعملوا الصالحات وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر

এখানে প্রথম আয়াতের الإنسان দ্বারা উদ্দেশ্য সমস্ত মানুষ। কাজেই শব্দটি عام। কিন্তু পরের আয়াতগুলো প্রথম আয়াতের عام কে خاص করে দিয়েছে। কাজেই এখন ক্ষতিগ্রস্ত সব মানুষ নয়। বরং যারা ঈমান আনে না এবং সৎর্কম করে না, তারাই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত।

অত:পর যে দলীল عام কে خاص করে দেয়, তা দু’ভাবে ব্যবহৃত হয়। যদি خاص কারী দলীল عام এর সাথে ব্যবহৃত হয়, তবে তাকে متصل বলে। পক্ষান্তরে خاص কারী দলীল যদি عام এর সাথে সংযুক্ত ভাবে ব্যবহৃত না হয়ে আলাদা ভাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে منفصل বলে।

[2]. عام কে বিভিন্ন উপায়ে خاص করা যায়। যেমন: শর্ত, গুণবাচক শব্দ,حرف الاستثناء ইত্যাদি।

[3]. এ ব্যাপারে দ্বিতীয় মতটিই সহীহ।কাজেই مستثني টি مستثني منه এর অর্ধেকের বেশি হলেও استثناء শুদ্ধ হয়ে যাবে।

[4]. অর্থাৎ প্রথমে فَتَيَاتِكُمُ বলাতে সব দাসীকে বিবাহ করা বুঝাচ্ছিল। কিন্তু পরের الْمُؤْمِنَاتِ গুণবাচক শব্দ দ্বারা শুধু মাত্র মুমিন দাসী খাস হয়ে গেলো।

[5]. আয়াতে النَّاسِ বলাতে সব মানুষের উপর হজ্জ ফরয বুঝা যাচ্ছিল। কিন্তু النَّاسِ থেকে بدل হওয়া مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا বলাতে হজ্জের বিধানটি যাদের সামর্থ আছে, তাদের সাথে খাছ হয়ে গেলো ।

[6]. আয়াতে مُتَعَمِّدًا না বলা হলে অর্থ হতো কাউকে হত্যা করলেই তার পরিণাম জাহান্নাম হবে। কিন্তু শব্দ দ্বারা হুকুমটি খাছ হয়ে গেলো যারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তাদের সাথে।

[7]. প্রথম আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, কোন নারী তালাকপ্রাপ্তা হলেই তাকে তিন হায়েয পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। কিন্তু আয়াতের মাধ্যমে উক্ত হুকুম খাছ হয় যে, যদি বিবাহের পর মেলামেশা করার আগেই তালাক হয়, তাহলে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না।

[8]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৪২৮৩, ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৬১৪।

[9]. অর্থাৎ দাস অপবাদ দিলে তাকে অর্ধেক শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে সব বিদ্বান একমত নন। বরং কিছু বিদ্বান তাদেরকে স্বাধীন ব্যক্তির মতই ৮০ টি বেত্রাঘাত করার কথা বলেছেন। সুরা নূর /২।

[10]. অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, যে ব্যভিচার করবে, তাকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। কিন্তু দাসী যেনা করলে, তাকে ৪০ বেত্রাঘাত করা হয়। দাসীর উপর দাসকে কিয়াস করে, দাসকেও ৪০ বেত্রাঘাত করার বিধানের মাধ্যমে আয়াতটি খাছ করা হয়।

[11]. ছ্বহীহ বুখারী হা/১৩৯৯, ছ্বহীহ মুসলিম হা/২০

[12]. ছ্বহীহ বুখারী হা/১৪৮৩

[13]. ছ্বহীহ বুখারী হা/১৪৮৪। অর্থাৎ প্রথম হাদীস দ্বারা বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন যে কোন পরিমাণ ফসলে যাকাত ফরয বুঝা যায়। কিন্তু দ্বিতীয় হাদীসটি যাকাত খাছ করে দিচ্ছে ফসল নূন্যতম পাঁচ ওয়াসাক হওয়ার সাথে। উল্লেখ্য যে, এক ওয়াসাক সমান ৬০ সা‘; এক সা‘ সমান ২ কেজী ৪০ গ্রাম ভাল গম। সুতরাং পাঁচ ওয়াসাক হলো: ৩০০ সা’ = ৬১২ কেজি বা ১৫.৩ মণ বা ১৫ মণ ১২ কেজি।

[14]. ছ্বহীহ মুসলিম হা/১৬৯০