শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৪৫. আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত ও তাক্বদীরের মাঝে বৈপরীত্যের অভিযোগ করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত ও তাক্বদীরের মাঝে বৈপরীত্যের অভিযোগ করা

ভাগ্যের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আতের বিরোধিতা করা।

.........................................

ব্যাখ্যা: এ বিষয়টিও ভাগ্য সম্পর্কিত। কেননা ভাগ্যের মাধ্যমে যারা আল্লাহর শরী‘আতের বিরোধিতা করে বলে, আল্লাহ তা‘আলা কুফরী ও ঈমানকে কিভাবে নির্ধারণ করতে পারেন? অতঃপর আল্লাহর আদেশাবলী পালন ও নিষেধসমূহ বর্জনকে বান্দার জন্য তিনি বিধিবদ্ধ করে দেন অথচ সকল বিষয় ফায়ছালা ও নির্ধারণ হওয়ার পর আদেশ-নিষেধ পালন করায় কোন উপকার থাকে না। মানুষ কি এরূপ ভাগ্যের উপর নির্ভর করবে? এটি জাহিলদের একটি মারাত্নক সমস্যা। যারা ধারণা করে, শরী‘আত ও ভাগ্যের মাঝে বৈপরীত্য আছে তাদের প্রত্যেকেই কিয়ামত পর্যন্ত এ বিতর্কের পদ্ধতিই অনুসরণ করবে। এটিই হলো বাতিল পদ্ধতি। শরী‘আত ও ভাগ্যের মাঝে কখনোই বৈপরীত্য নেই। আল্লাহ তা‘আলা শিরক, পাপ এবং কুফরী নির্ধারণ করেছেন এবং তা নিষেধও করেছেন। আর ঈমান, প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং সংশোধন হওয়াকে তিনি বিধিবদ্ধ করেছেন। শরী‘আত ও ভাগ্যের মাঝে কোন বিরোধ নেই। কেননা বান্দা স্বাধীনভাবে তার উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা অনুযায়ী এসব কর্ম করে। তাই কর্ম বান্দার দিকেই সম্পৃক্ত হবে। আর একারণেই বান্দার পাপের কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং আনুগত্যের কারণে ছাওয়াব দেয়া হবে। যদিও ভাগ্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়, তবুও বান্দার কর্মের উপর তাকে প্রতিদান দেয়া হয়, ভাগ্যের উপর নয়। কেননা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীদের উদ্দেশে বর্ণনা করে বলেন,

ما منكم من أحد إلا ومقعده معلوم من الجنة أو النار" قالوا: يا رسول الله، ألا نتكل على كتابنا ونترك العمل؟ قال صلى الله عليه وسلم: "اعملوا، فكل ميسر لما خلق له

তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সকলেই বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে কি আমরা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকবো? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা আমল করতে থাক। কারণ যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমল সহজ করে দেয়া হয়েছে।[1] আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন,

(فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى) [الليل: 5-10]

সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়াহ অবলম্বন করেছে এবং উত্তম কে সত্য বলে বিশ্বাস স্থাপন করেছে আমি তার জন্যে সুগম করে দিব সহজ পথ। আর যে কার্পন্য করেছে এবং নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করে, এবং উত্তম কে মিথ্যা বলে মনে করেছে, আমি তার জন্যে সুগম করে দিব কঠিন পথ (সূরা লাইল ৯২:৫-১০)।

নেক বান্দা ভাল আমল করে এবং মন্দ পরিহার করে। আর ভাগ্য আল্লাহ তা‘আলার একটি গোপনীয় বিষয়। এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক না করাই ভাল। কারণ তাতে লাভ হবে না এবং এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে না।

ভাগ্য সংক্রান্ত বিষয়ের সার-সংক্ষেপ: উদাহরণস্বরূপ, ভাগ্য বিষয়ে মানুষ চার ভাগে বিভক্ত:

প্রথম: জাবরিয়্যাগণ (الجبرية) ভাগ্যকে মেনে নেয় ও শরী‘আতকে অস্বীকার করে।

দ্বিতীয়: কাদরিয়্যাগণ (القدرية) শরী‘আত মেনে নেয় এবং ভাগ্যকে অস্বীকার করে।

তৃতীয়: মুশরিকরা (المشركون) শরী‘আত ও ভাগ্যকে সাব্যস্ত করে এবং তারা মনে করে যে উভয়ের মাঝে বৈপরীত্য আছে।

চতুর্থ: আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের (أهل السنة والجماعة) অনুসারীরা শরী‘আত ও ভাগ্য উভয়টি স্বীকার করে এবং তারা উভয়টির মাঝে বৈপরীত্য অস্বীকার করে।

[1]. ছ্বহীহ বুখারী, হা/ ৪৯৪৫, ৪৯৪৭, ছ্বহীহ মুসলিম, হা/২৬৪৭।