শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ২ - আল্লাহ তাআলা সকল সৃষ্টির উপরে হওয়া ও নিকটবর্তী হওয়া এবং সকল সৃষ্টির পূর্বে ও সকল সৃষ্টির শেষে বিদ্যমান থাকা ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
আল্লাহ্ তাআলার বাণী: আর তিনি সর্ব বিষয়ে অবগত

আল্লাহ্ তাআলার বাণী: আর তিনি সর্ব বিষয়ে অবগত: অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার ইলম অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল বিষয়কে পূর্ণরূপে পরিবেষ্টন করে আছে। উর্ধ্ব জগতের এবং নিম্নজগতের কোন কিছু্ই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সবকিছুই তিনি অবহিত। আসমান ও যমীনে একটি সরিষার দানা পরিমাণ জিনিষও তাঁর ইলম থেকে অনুপস্থিত নয়।

উপরের আয়াত থেকে আল্লাহর জন্য এমন চারটি সম্মানিত নাম সাব্যস্ত হলো, যার দাবী হচ্ছে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক সৃষ্টিকে ঘিরে আছেন। তিনি অতীত, বর্তমান, এবং ভবিষ্যৎ তথা সকল যামানা ও তার মধ্যে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার সবকিছুকেই জ্ঞানের মাধ্যমে বেষ্টন করে আছেন। সেই সাথে সকল স্থান ও তাতে ছোট-বড় যত প্রকার মাখলুক রয়েছে, সে সম্পর্কেও তিনি অবহিত।

অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

وقوله سبحانه ﴿وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ﴾ وقوله ﴿وَهُوَ الْحَكِيمُ الخَبِيْرُ﴾

আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘‘তুমি সেই চিরজীবন্ত সত্তার উপর ভরসা করো, যিনি কখনোই মৃত্যু বরণ করবেন না’’। (সূরা ফুরকানঃ ৫৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ তিনি প্রজ্ঞাবান ও সর্বজ্ঞ’’। (সূরা সাবাঃ ১)


ব্যাখ্যা: অর্থাৎ তোমার সকল বিষয় সেই চিরজীবন্ত সত্তার নিকট সোপর্দ করে দাও, যার কখনোই মৃত্যু হবে না।

التوكل (তাওয়াক্কুল)এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে التفويض তথা অন্যের নিকট কোন বস্ত্ত সোপর্দ করা। আরবরা বলে থাকে, وكلت أمري إلى فلان أي فوضته অর্থাৎ আমার বিষয়টি অমুকের নিকট সোপর্দ করলাম।

আর পরিভাষায় উপকারী বস্ত্ত অর্জন করার জন্য এবং ক্ষতিকর জিনিষ দূর করার জন্য অন্তর দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করাকে توكل বলা হয়। অন্তর দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করা এবাদতের অন্যতম একটি প্রকার। সুতরাং বান্দার সকল কাজে আল্লাহর উপর ভরসা করা অপরিহার্য।[1]

কল্যাণ অর্জনের জন্য কিংবা অকল্যাণ দূর করার জন্য উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা আল্লাহর উপর ভরসা করার পরিপন্থী নয়; বরং পরিশ্রম ও চেষ্টা করার সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করার পূর্ণ মিল রয়েছে। তাওয়াক্কুলের ব্যাপারে আল্লাহর হায়াতকে খাস করার মধ্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যিনি চিরজীবন্ত, কল্যাণ লাভের জন্য কেবল তাঁর উপরই ভরসা করা উচিৎ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ছাড়া অন্য কেউ চিরজীবন্ত নয় কিংবা অন্য কারো হায়াত চিরস্থায়ী নয়। মাখলুকের হায়াত যেহেতু মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়ে যায়, তাই যে ব্যক্তি মাখলুকের উপর ভরসা করে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মোট কথা, এই আয়াতে আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য হায়াতে কামেলা (পূর্ণাঙ্গ জীবন) সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং একই সাথে তাঁর পবিত্র সত্তার মৃত্যু হওয়াকে অস্বীকার করা হয়েছে। সুতরাং এই আয়াতের মধ্যেও আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করার বেলায় নফী ও ইছবাতকে একত্র করা হয়েছে।


[1] - শুধু তাই নয়, আল্লাহর উপর ভরসা করা ঈমান বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেন, ﴿وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ﴾ ‘‘তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক, তাহলে একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করো।’’ (সূরা মায়িদাঃ ২৩) কুরআনের আরো অনেক স্থানে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, মুমিনদের কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করা আবশ্যক। সুতরাং কল্যাণ অর্জনের নিয়তে কিংবা অকল্যাণ দূর করার উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি তার অন্তরে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে সম্পর্ক কায়েম করল, সে বিনা সন্দেহে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক নির্ধারণ করল।

তবে দুনিয়ার কাজ-কর্ম অন্যকে দিয়ে সম্পাদন করানোকে অন্যের উপর توكل তথা ভরসা করা বলেনা। ইহাকে توكيل তথা উকীল বানানো বলা হয়। কোন মানুষকে উকীল বানিয়ে কর্ম সম্পাদন করা জায়েয। তবে উকীলের উপর ভরসা করা যাবেনা। উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য অন্তর দিয়ে কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করতে হবে।