ইসলামী জীবন-ধারা অপরের সাথে সাক্ষাতের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী
আগন্তুকের জন্য উঠে দাঁড়ানো

আগন্তুকের তা’যীমে উঠে খাড়া হওয়া বিধেয় নয়।

আবূ উমামাহ বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) একটি লাঠির উপর ভর দিয়ে আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হলেন। তাঁকে দেখে আমরা উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, ‘‘তোমরা দাঁড়ায়ো না; যেমন অনারব (পারস্যের) লোক তাদের বড়দের তা’যীমে উঠে দাঁড়ায়।’’[1]

আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, ‘‘ওঁদের (সাহাবাদের) নিকট রাসুল (ﷺ) অপেক্ষা অন্য কেউ অধিক প্রিয় (ও শ্রদ্ধেয়) ছিল না। কিন্তু ওঁরা যখন তাঁকে দেখতেন তখন তাঁর জন্য উঠে দাঁড়াতেন না। কারণ এতে তাঁর অপছন্দনীয়তার কথা তাঁরা জানতেন।’’[2]

প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, লোক তার জন্য দণ্ডায়মান হোক, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে ক’রে নেয়।’’[3]

অবশ্য প্রয়োজনে আগন্তুককে সাহায্য করতে, তার সাথে মুআনাকা করতে, তাকে নিজের জায়গায় বসাতে উঠে দাঁড়ানো বৈধ।

রাসুল (ﷺ)-এর কন্যা ফাতেমা তাঁর নিকট এলে তিনি তাঁর প্রতি উঠে গিয়ে তাঁর হাত ধরতেন (মুসাফাহাহ করতেন), তাকে চুমা দিতেন এবং নিজের আসনে তাঁকে বসাতেন। তদনুরূপ তিনি ফাতেমার নিকট এলে তিনিও পিতার প্রতি উঠে গিয়ে তাঁর হাত ধরতেন (মুসাফাহাহ করতেন), তাকে চুমা দিতেন এবং নিজের আসনে তাঁকে বসাতেন।[4]

(খন্দকের যুদ্ধ শেষে) সা’দ (রাঃ) আহত ছিলেন। ইয়াহুদীদের ব্যাপারে বিচার করার উদ্দেশ্যে রাসুল (ﷺ) তাঁকে আহূত করেন। তাই তিনি এক গর্দভের পৃষ্ঠে আরোহণ করে যখন তাঁর নিকট পৌঁছলেন তখন রাসুল (ﷺ) আনসারকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘‘তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি উঠ এবং ওঁকে নামাও।’’ সুতরাং (কিছু) সাহাবা উঠে গিয়ে তাঁকে গর্দভ থেকে নামালেন।[5]

এই দণ্ডায়মান আনসারের সর্দার সা’দ (রাঃ)-এর সাহায্যার্থে বাঞ্ছনীয় ছিল। কারণ তিনি গর্দভের পৃষ্ঠে আহতাবস্থায় বসে ছিলেন; যাতে (নামতে গিয়ে) পড়ে না যান। পক্ষান্তরে রাসুল (ﷺ) এবং অবশিষ্ট সাহাবাবৃন্দ উঠে দণ্ডায়মান হননি।

সাহাবী কা’ব বিন মালেক যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন তখন সাহাবাগণ উপবিষ্ট ছিলেন। জিহাদে অংশ গ্রহণ না করার পর তাঁর তওবা কবুল হওয়ার শুভসংবাদ নিয়ে তালহা তাঁর প্রতি উঠে ছুটে পৌঁঁছলেন।[6]

সুতরাং কোন দুঃখিত ব্যক্তির অন্তরে আনন্দ আনয়ন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তার তওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ দান করার উদ্দেশ্যে উঠে দণ্ডায়মান হয়ে তার নিকট যাওয়া বৈধ ছিল।

প্রকাশ থাকে যে, মুসাফাহার পর বুকে হাত বুলানো বা মুখে নিয়ে চুমা দেওয়া বিদআত। যেমন কোন গুরুজনের সাক্ষাতে পায়ের জুতা খোলাও অতিরঞ্জিত বিদআত।

[1]. আবূ দাঊদ হা/৫২৩০, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৮৩৬, হাদীসটির সনদ যয়ীফ; কিন্তু অর্থ সহীহ, দেখুনঃ সিলসিলাহ যয়ীফাহ৩৪৬, অবশ্য সহীহ হাদীসে নামাযের ভিতরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

[2]. সহীহ, আহ্মদ ও তিরমিযী

[3]. সহীহ, মুসনাদে আহমদ

[4]. আবূ দাঊদ হা/৫২১৭, তিরমিযী হা/৩৮৭২

[5]. আহমাদ, আবূ দাঊদ, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৬৭

[6]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ৩৪৫৬, বুখারী, মুসলিম প্রমুখ