লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] লা-তাহযান - অনুচ্ছেদ সূচি ড. আয়িদ আল করনী
১৩০. মহৎ জীবনের জন্য মণি-মুক্তা (বা উপদেশাবলী)

১. আল্লাহর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়ার জন্য রাতের শেষ তৃতীয়াংশে জেগে উঠুন।

“এবং রাতের শেষ তৃতীয়াংশে ক্ষমা প্রার্থীগণ।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৭)

২. (সর্বদা সম্ভব না হলেও) কমপক্ষে মাঝে মাঝে ধ্যান করার জন্য নিজেকে মানুষজন থেকে নিঃসঙ্গ করে নিন।

“আর যারা আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৯১)

৩. ধার্মিকদের সাহচর্যে থাকুন।

“আর যারা তাদের প্রতিপালককে আহবান করে তুমি নিজকে ধৈর্যসহকারে তাদের সাথে রাখ।” (১৮-সূরা আল কাহাফ: আয়াত-২৮)

৪. প্রায়ই আল্লাহর জিকির করুন।

“বেশি করে আল্লাহর জিকির কর।” (৩৩-সূরা আল আহযাব: আয়াত-৪১)

৫. একনিষ্ঠতার সাথে ও ভক্তি করে দুরাকাত সালাত আদায় করুন।

“যারা তাদের সালাতে ভীত-সন্ত্রস্ত, বিনয়-নম্র, ধীরস্থির ও একাগ্রচিত্ত।” (২৩-সূরা আল মু'মিনূন: আয়াত-২)

৬. বুঝে-শুনে ও গভীর ধ্যানের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করুন।

“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে না?” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-৮২)

৭ ভীষণ গরমের দিনে রোযা রাখুন।

“সে আমার জন্য তার খাদ্য, তার পানীয় ও তার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে।”

৮. গোপনে দান করুন।

“ডান হাত কি ব্যয় করে তা এমনকি বাম হাতও জানে না।”

৯. দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিমদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করুন ও তাদেরকে সাহায্য করুন।

“যে ব্যক্তি এ দুনিয়াতে কোন মুসলিমকে কোন মুসিবত থেকে উদ্ধার করবে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে মুসিবত থেকে রক্ষা করবেন।”

১০. এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে যথাসম্ভব মিতচারী ও সংযমী হয়ে থাকুন।

وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ

“আখেরাত হলো উত্তম ও স্থায়ী।” (৮৭-সূরা আল আ'লা : আয়াত-১৭)

নূহ নবী (আঃ)-এর পুত্রের ভ্রান্তিসমূহের মাঝে তার এ কথাও ছিল-

سَآوِي إِلَىٰ جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاءِ

আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নিব যা আমাকে বন্যার পানি থেকে রক্ষা করবে।” (১১-সূরা হুদ: আয়াত-৪৩)

সে যদি আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করত তবে ফল একেবারে অন্যরকম হতো। নমরুদের দুর্দশার কারণ ছিল তার একথা “আমি জীবন দান করি এবং আমি মৃত্যু ঘটাই।” সে এমন এক (বড়ত্বের) পোশাক পরতে চেষ্টা করেছিল যা তার নয় (বরং আল্লাহর) এবং সে এমন এক গুণ থাকার দাবি করেছিল যা প্রকৃতপক্ষে তার ছিল না (বরং তা আল্লাহর)-আর এভাবেই তার ধ্বংস সাধন হলো।

আমাদের সুখের চাবি-কাঠি একটি একক, কিন্তু গভীর অর্থবহ কথার মাঝে সংক্ষেপিত করা যায়-কালিমায়ে তাওহীদ (ইসলামি একত্ববাদ) “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নবী বা রাসূল বা দূত”

কেউ দুনিয়াতে এ কালিমা উচ্চারণ করলে জান্নাতে তাকে বলা হবে “তুমি সত্য কথা বলেছ।” "আর যিনি এই (সত্য) নিয়ে এসেছেন আর যে এ সত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে।" (৩৯-সূরা আয যুমার: আয়াত-৩৩)

কেউ যখন এ পৃথিবীতে এ কালেমার বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ জীবন যাপন করবে তখন আল্লাহ তাকে ধ্বংস, লজ্জা ও দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।

“এবং আল্লাহ মোত্তাকীদেরকে উদ্ধার করে তাদের সাফল্যের স্থানে (জান্নাতে) পৌঁছে দিবেন।” (৩৯-সূরা আয যুমার: আয়াত-৬১)

যখন কেউ কালিমা তাওহীদ শুধুমাত্র আমলই করবেন না বরং অন্যদেরকে এর দিকে আহবান করবে তখন তার নাম স্মরণ করা হবে এবং তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে-

“এবং (তারা) আমার বাহিনী-তারা অবশ্যই বিজয়ী হবে” বা “এবং নিশ্চয় আমার বাহিনীই বিজয়ী হবে।” (৩৭-সূরা আস সাফফাত: আয়াত-১৭৩)

যখন কেউ কালিমা তাওহীদকে ভালোবাসবে তখন সে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন হবে ও সম্মানে ভূষিত হবে।

“কিন্তু সম্মান আল্লাহর জন্য, তার রাসূলের জন্য এবং মু’মিনদের জন্য।” (৬৩-সূরা আল মুনাফিকূন: আয়াত-৮)

বেলাল (রাঃ) কালিমায়ে তাওহীদের ঘোষণা দিয়েছিলেন আর অমনি তিনি আত্মিক মুক্তি লাভ করেছিলেন, সাথে সাথে তিনি দৈহিক দাসত্বের থেকেও মুক্তি পেয়েছিলেন।

“তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-২৫৭)

আবু লাহাব মুখের উপর জবাব দিয়েছিল ও কালিমায়ে তাওহীদ বলা থেকে বিরত ছিল। সে নাজুক ও দুঃখজনক অবস্থায় মারা গিয়েছিল।

“আর আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন তাকে কেউ সম্মানিত করতে পারে না।” (২২-সূরা আল হাজ্জ: আয়াত-১৮)

কালিমায়ে তাওহীদ এমন এক পরশমণি যা নিম্নশ্রেণীর মানুষকে বিশুদ্ধতার ও ভক্তির পরাকাষ্ঠা বানিয়ে দেয়।

“এবং আমি এ কুরআনকে আলো বানিয়েছি এ দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করি।” (৪২-সূরা আশ শুরা: আয়াত-৫২)

আপনি যদি পরকালের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে থাকেন তবে আর যাই করুন না কেন আপনার অর্জিত সম্পদ নিয়ে উল্লাস করবেন না। যদি আপনি পরকালের প্রতি বিমুখ হয়ে থাকেন তবে এক কঠিন শাস্তি আপনার জন্য ওৎ পেতে আছে।

“আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজে আসল না। আমার ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে গেছে।” (৬৯-সূরা আল হাক্কাহ: আয়াত-২৮-২৯)

“নিশ্চয় তোমার প্রভু ঘাঁটিতে (তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে) আছেন।” (৮৯-সূরা আল ফাজর: আয়াত-১৪)

আপনি যদি আপনার প্রভুকে ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার সন্তান নিয়েও অতিরিক্ত উল্লাস করবেন না। তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াই চরম ব্যর্থতা।

“আর তারা অপমান ও অভাবে জর্জরিত হলো।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৬১)

আর অবশেষে বলছি, যদি আপনার আমল ভালো না হয় তবে আপনার সম্পদ নিয়ে আত্মপ্রসাদপূর্ণ হবেন না। কেননা, এমন আমল আখেরাতে আপনার অপমানের কারণ হবে।

“কিন্তু আখেরাতে আযাব অবশ্যই অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক হবে।” (৪১-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহ: আয়াত-১৬)

“আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করতে পারবে না; কিন্তু, যে ব্যক্তি ঈমান আনবে ও আমলে সালেহ করবে (সে আমার নিকটবর্তী হতে পারবে)।” (৩৪-সূরা আস সাবা: আয়াত-৩৭)