মহিলাদের স্রাব ও প্রসূতি অবস্থার বিধিবিধান সংক্রান্ত ৬০টি প্রশ্ন হজ্জ ও ওমরার ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের বিধিবিধান শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন ৫১: একজন মহিলা বলছেন, আমি গত বছর হজ্জব্রত পালন করেছি এবং শারঈ ওযর থাকার কারণে আমি তওয়াফে ইফাযা ও বিদায়ী তওয়াফ ব্যতীত হজ্জের বাকী সব কাজ সম্পন্ন করেছি। যে কোন একদিন তওয়াফে ইফাযা ও বিদায়ী তওয়াফ করার জন্য মক্কায় যাব ভেবে আমি আমার বাড়ী মদীনায় ফিরে গেছি। দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইতিমধ্যে আমি সবকিছু থেকে হালাল হয়ে গেছি এবং ইহ্‌রাম অবস্থায় যা কিছু করা হারাম থাকে, তার সবগুলোই করে ফেলেছি। তওয়াফের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাকে বলা হয়েছে যে, তোমার জন্য তওয়াফ করা ঠিক হবে না; বরং তুমি তোমার হজ্জ নষ্ট করে ফেলেছ। সেজন্য তোমাকে আগামী বছর আবার হজ্জ করতে হবে এবং সেই সাথে গরু বা উট কুরবানী করতে হবে। এক্ষণে প্রশ্ন হলো, একথা কি ঠিক? এর কি অন্য কোন সমাধান আছে? আমার হজ্জ কি নষ্ট হয়েছে? আমাকে কি পুনরায় হজ্জ করতে হবে? এ মুহূর্তে আমার করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন।

উত্তরঃ না জেনে ফৎওয়া দেওয়ার এটা একটা মুছীবত। এই অবস্থায় আপনাকে মক্কায় ফিরে যেতে হবে এবং কেবলমাত্র তওয়াফে ইফাযা সম্পন্ন করতে হবে। মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় আপনি ঋতুগ্রস্ত থাকায় আপনাকে আর বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে না। কেননা ঋতুবতীর জন্য বিদায়ী তওয়াফ যরূরী নয়। এ মর্মে ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, “রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষদেরকে এ মর্মে আদেশ করেছেন যে, তাদের সর্বশেষ কাজ যেন হয় কাবায় [অর্থাৎ বিদায়ী তওয়াফ]। তবে তিনি ঋতুবতীর ক্ষেত্রে এ হুকুম লাঘব করেছেন।”[1] আবূ দাঊদের অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তাদের সর্বশেষ কাজ যেন হয় কাবা ঘরের তওয়াফ।”[2] অনুরূপভাবে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যখন খবর দেওয়া হলো, ছফিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তওয়াফে ইফাযা সম্পন্ন করে ফেলেছেন, তখন তিনি বললেন, “তাহলে এখন সে চলে যাক।”[3] এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, ঋতুবতীর বেলায় বিদায়ী তওয়াফ যরূরী নয়। তবে অবশ্যই আপনাকে তওয়াফে ইফাযা সম্পন্ন করতে হবে। আর আপনি যেহেতু অজ্ঞতাবশতঃ সবকিছু থেকে হালাল হয়েছিলেন, সেহেতু এটা আপনাকে কোন ক্ষতি করবে না। কেননা কেউ না জেনে ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের কোন কিছু করে ফেললে তার কোন সমস্যা হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, “হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা ভুল করি, তাহলে আপনি আমাদের ধরবেন না” (আল-বাক্বারাহ ২৮৬)। তখন আল্লাহ বলেন, “ঠিক আছে, আমি ধরব না।”[4] মহান আল্লাহ অন্যত্রে বলেন, “তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে” (আহযাব ৫)। সুতরাং ইহরামরত ব্যক্তির উপর আল্লাহকর্তৃক নিষিদ্ধ সমস্ত বিষয় যদি সে না জেনে বা ভুলে অথবা বাধ্য হয়ে করে ফেলে, তাহলে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। তবে যখনই তার ওযর চলে যাবে, তখনই কৃত বিষয় থেকে বিরত থাকা তার উপর ওয়াজিব হবে।

1. বুখারী, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী তওয়াফ' অনুচ্ছেদ হা/১৭৫৫; মুসলিম, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী তওয়াফ আবশ্যক এবং ঋতুবতীর ক্ষেত্রে ছাড়' অনুচ্ছেদ হা/৩৮০, ১৩২৮।

2. আবু দাঊদ, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী তওয়াফ' অনুচ্ছেদ হা/২০০২।

1. বুখারী, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'তওয়াফে ইফাযার পরে যে মহিলা ঋতুগ্রস্ত হয়' অনুচ্ছেদ হা/৩২৮; মুসলিম, 'হজ্জ' অধ্যায়, 'বিদায়ী তওয়াফ' অনুচ্ছেদ হা/৩৮২, ১২১১।

2. মুসলিম, 'ঈমান' অধ্যায়, 'আল্লাহপাক মানুষের মনের পরিকল্পনা (বাস্তবায়ন না করলে) ক্ষমা করে দেন' অনুচ্ছেদ হা/২০০, ১২৬।