হাদীসের নামে জালিয়াতি হিজরত, মি’রাজ, ওফাত ইত্যাদি বিষয়ক জাল হাদীস ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৩৬. ইন্তেকালের পরে ১০ দিন দেহ মুবারক রেখে দেওয়া!

খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার নামে প্রচলিত ‘রাহাতিল কুলুব’ নামক বইয়ের বিষয়ে ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। এ বইয়ের ২৪শ মাজলিসে শাইখ নিজামউদ্দীন লিখেছেন, ২রা রবিউল আউয়াল ৬৫৬ হিজরীতে (৮/৩/১২৫৮ খৃ) তিনি তার পীর শাইখ ফরীদ উদ্দীনের দরবারে আগমন করলে তিনি বলেন, ‘‘আজকের দিনটা এখানেই থেকে যাও, কেননা আজ হযরত রেসালতে পানাহ (ﷺ)-এর উরস মোবারক। কালকে চলে যেও। এরপর বললেন, ইমাম সাবী (রহ) হতে রাওয়ায়েত আছে যে, হযরত রেছালতে পানাহ ﷺ- এর বেছাল মোবারক রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখে। তাঁর দেহ মোবারক মোজেজার জন্য দশ দিন রাখা হয়েছিলো। দুনিয়ার জীবিত কালে তাঁর পছিনা (ঘাম) মোবারকের সুগন্ধ ছিলো সমস্ত উৎকৃষ্ট সুগন্ধির চেয়েও উৎকৃষ্ট। সে একই খুশবু একই ভাবে বেরিয়েছে ঐ দশ দিন, একটুও কমেনি (সুবহানাল্লা)। হুজুর পাক (ﷺ)-এর এ মোজেজা দেখে কয়েক হাজার ইহুদী তখন মোসলমান হয়েছিল। এ দশদিনের প্রতিদিন গরীব-মিসকিনদেরকে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে বিভিন্ন বিবিদের ঘর হতে। ঐ সময় হুজুর (ﷺ)-এর নয়টি হুজরা ছিল এবং নয়দিন তাঁদের সেখান থেকে দান করা হয়েছে। এবং দশম দিন, অর্থাৎ ১২ই রবিউল আউয়াল দান করা হয়েছে হযরত সিদ্দিকে আকবর আবুবকর (রাদি)-এর ঘর থেকে। এদিন মদিনার সমস্ত লোককে পেট ভরে পানাহার করানো হয়েছে এবং এ দিনই তাঁর পবিত্র দেহ মোবারক দাফন করা হয়েছে। এ জন্যই মোসলমানগণ ১২ রবিউল আউয়াল উরস করে এবং ১২ রবিউল আউয়াল দিনটিই উরসের দিন হিসাবে প্রসিদ্ধ।’’[1]

আমরা জানি না, খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া (রাহ)-এর গ্রন্থের মধ্যে পরবর্তী কালে কেউ এই কথাগুলো লিখেছে, নাকি কারো মুখ থেকে গল্পটি শুনে ফরীদ উদ্দীন (রাহ) এ কথাগুলো সরল মনে বিশ্বাস করেছেন এবং বলেছেন। আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, এ সকল পুস্তকের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের কোনো উপায় নেই। পূরো বইটিও জাল হতে পারে।

সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ মোবারক দেহ ১০ দিন দাফন বিহীন রাখা, হাজার হাজার ইহূদীর ইসলাম গ্রহণ, ১০ দিন খানা খাওয়ানো ইত্যাদি সকল কথাই ভিত্তিহীন। রবিউল আউয়াল মাসের আমল প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ওফাত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশা আল্লাহ। তবে মুসলিম উম্মাহ একমত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সোমবার পূর্বাহ্নে ইন্তেকাল করেন। পরদিন মঙ্গলবার দিবসে তাঁর গোসল ও জানাযার সালাত আদায়ের শেষে দিবাগত সন্ধ্যায় বা রাতে তাঁকে দাফন করা হয়।

[1] খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতিল কুলুব, পৃ. ১৫০।