লগইন করুন
দাওয়াত ও তাবলীগের পদ্ধতি ও মাধ্যম জানা একজন দায়ীর জন্য অত্যন্ত জরুরি; কারণ এর উপর নির্ভর করবে দাওয়াতের ভাল-মন্দ ফলাফল।
দাওয়াতের পদ্ধতি ও মাধ্যমসমূহের উৎপত্তিসমূহ:
১. আল-কুরআনুল কারীম।
২. সুন্নাতে রাসূল
৩. সালাফে সালেহীন তথা সাহাবা কেরামের সীরাত।
৪. ফকীহগণের ইস্তেমবাত তথা সিদ্ধান্তসমূহ।
৫. সাফল্য অর্জনকারী দায়ীদের বাস্তব অভিজ্ঞতাসমূহ।
কিছু পদ্ধতি ও মাধ্যমের সংক্ষেপ আলোচনা:
প্রথমত: দা'ওয়াত ও তাবলীগের পদ্ধতিসমূহঃ
দাওয়াত ও তাবলীগের পদ্ধতি হলো ঐ জ্ঞান যার দ্বারা দাওয়াত ও তাবলীগ করা হয় এবং তার প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায়।
ফলপ্রসূ দা'ওয়াত ও তাবলীগের জন্য কিছু উত্তম পদ্ধতি:
১. মাদউর রোগনির্ণয় এবং তার ঔষধ জানা:
একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাজ হলো আগে রোগ নির্ণয় করা এরপর চিকিৎসা দেয়া। মানুষের রূহ তথা আত্মা ও কলবের রোগের চিকিৎসা করা শারীরিক রোগের চেয়ে অনেক গুণে কঠিন ও জটিল। মানুষের অন্তরের রোগ কখনো কুফুরি বা শিরক আবার কখনো সাধারণ পাপ। তাই ভাল করে রোগ জেনে এরপরে উপযুক্ত ঔষধের প্রেসক্রিপশন দিতে হবে।
২. মাদউর সংশয়সমূহ দূরকরণ:
সংশয় বলতে দায়ীর সত্যতা ও তাঁর দা'ওয়াতের হকিকত সম্পর্কে মাদউর মধ্যের সন্দেহ। যার ফলে সত্যকে উপলব্ধি করতে ও তা গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিংবা দেরী হয়ে থাকে।
৩. মাদ'উকে উৎসাহ ও ভয় প্রদর্শন করা:
কুরআন-সুন্নাহর মহা ঔষধ ব্যবহার ও সত্য গ্রহণে উৎসাহ ও তা পরিহারের ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন করা। এ ছাড়া মাদ'উকে আশার বাণী শুনানো এবং নিরাশ না করা।
৪. তা'লীম ও তরবিয়তের ব্যবস্থাগ্রহণ:
মাদ'উদর মধ্যে যারা দাওয়াত গ্রহণ করবে তাদেরকে নিয়মিত শিক্ষা ও দীক্ষা দেওয়া। তাদেরকে কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনদের সীরাতকে সঠিকভাবে বুঝানো ও তার সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ান।
৫. সকল পদ্ধতিগুলোতে:
হেকমত, সুন্দর ওয়াজ-নসীহত ও উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক থাকা জরুরি। আর প্রয়োজন মোতাবেক বিরোধীদের সাথে উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে।
আসল অমুসলিমদের জন্য কিছু পদ্ধতি:
যারা অমুসলিম তাদের মধ্যে এমন কিছু আছে যাদের নিকট সঠিকভাবে ইসলাম পৌঁছেছে। আর কিছু আছে যাদের কাছে বিকৃত ইসলাম পৌঁছেছে। আবার কিছু আছে যাদের নিকট মোটেই ইসলাম পৌঁছেনি। আসল অমুসলিম হচ্ছে ইহুদি, খ্রীষ্টান, মূর্তি ও অগ্নি পূজক ইত্যাদি। এদের সবার জন্য যে সকল পদ্ধতি অনুসরণ যোগ্য তার মধ্যে:
১. সঠিক ইসলামকে তাদের নিকট এমন সুস্পষ্টভাবে পৌঁছাতে হবে যাতে করে তাদের কোন ওজর না থাকে।
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
يَا أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ
“হে রসূল, তাবলীগ করুন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই তাবলীগ করলেন না।”[সূরা মায়েদা: ৬৭]
আল্লাহ তায়ালার বাণী:
وَمَا عَلَى الرَّسُوْلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ
"রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌঁছে দেয়া।"[সূরা নূর: ৫৪]
সুস্পষ্ট বর্ণনা যার পরে কোন ওজর চলবে না তার জন্য শর্ত হলো:
(ক) যখন তারা তাদের ভাষায় বুঝে নিবে অথবা আরবি ভাষায় বুঝতে সক্ষম হবে।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُوْلٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
"আমি সকল রসূলগণকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে পারে।”[সূরা ইবরাহীম: ৪]
(খ) কাফেরদের সকল সংশয়কে বাতিল প্রমাণ করা এবং তা দূর করা।
২. আসল কাফেরদের সাথে তাওহীদ ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা আরম্ভ করা যাবে না। এরপর গুরুত্বের ভিত্তিতে বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।
আল্লাহ তা’য়ালার বাণী:
لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوْحًا إِلىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُdُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
"নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করেছি। সে বলল: হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি।" [সূরা আ'রাফ:৫৯]
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَإِلىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُوْدًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
"আদ জাতির কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ নেই।” [সূরা আ'রাফ: ৬৫, সূরা হুদ : ৫০]
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَإِلىٰ ثَمُوْدَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
"সামূদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল: হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই।" [সূরা আ'রাফ : ৭৩]
আল্লাহ তায়ালার বাণী:
وَإِلىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
"আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়াইবকে প্রেরণ করেছি। সে বলল: হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই।"[সূরা আ'রাফ: ৮৫]
নবী ﷺ মুয়ায ইবনে জাবাল [রা:] কে ইয়েমেনে দায়ী হিসাবে যখন প্রেরণ করেন, তখন তাকে সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত করার জন্যই নির্দেশ করেছিলেন। [বুখারী ও মুসলিম]
৩. কাফেরদেরকে দা'ওয়াত নরম, হেকমত, সুন্দর ওয়াজ ও উত্তম নিয়মে বিতর্কের মাধ্যমে করা।
اذْهَبَا إِلىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى فَقُوْلَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
"তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধৃত হয়ে গেছে। অতঃপর তোমরা তাকে নম্র কথা বল, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে।” [সূরা ত্বহা ৪৩-৪৪]
ادْعُ إِلىٰ سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ
"আপনার পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়।" [সূরা নাহল : ১২৫]
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ
"তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়। তবে তাদের সাথে নয় যারা তাদের মধ্যে জালেম।"[সূরা আনকাবুত ৪৬]
৪. দ্বীনের ব্যাপারে তাদের কুধারণা ও অপবাদের প্রতিবাদ করা ও চুপ না থাকা।
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ
"তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয় যারা তাদের মধ্যে জালেম।” [সূরা আনকাবৃত: ৪৬]
وَالَّذِيْنَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُوْنَ
“যারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে।” [সূরা শূরা: ৩৯]
৫. কাফেরকে মুসলিম হওয়ার পর ভাই হিসাবে গ্রহণ করা, চাই কুফুরি অবস্থায় সে যাই করে থাকুক না কেন।
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّيْنِ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
"অবশ্য তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে আর জাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বিনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহ জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে বর্ণনা করে থাকি।" [সূরা তাওবাহ:১১]