নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি দা'ওয়াত ও তাবলীগ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
দায়ী-আহ্বানকারীদের প্রকার

নবী ﷺ এক শ্রেণীর আহ্বানকরীদের সম্পর্কে উম্মতকে হুশিয়ারী করে গেছেন।

   عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رضي الله عنه يَقُولُ: كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْخَيْرِ وَكُنتُ أَسْأَلُهُ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللَّهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، وَفِيهِ دَخَنٌ. قُلْتُ: وَمَا دَخَنُهُ؟ قَالَ: قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ. قُلْتُ: فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ: نَعَمْ، دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا، قَالَ: هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا. قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ. قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا إِمَam قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ. متفق عليه

   হুযাইফা ইবনে ইয়ামান [রাঃ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ ﷺ কে মানুষ কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত। আর অকল্যাণ আমাকে পেয়ে বসবে ভয়ে আমি জিজ্ঞাসা করতাম অনিষ্ট-অকল্যাণ সম্পর্কে। আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আমরা জাহেলিয়াত ও অনিষ্টকর যুগে ছিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীন ইসলামের কল্যাণে এনেছেন। আচ্ছা এ মঙ্গলের পর আবারও কি অমঙ্গল আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, আমি বললাম: আচ্ছা এ অনিষ্টর পর আবারও কি কল্যাণ আসবে? তিনি ﷺ বললেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু তাতে ধোঁয়া থাকবে। আমি বললাম: ধোঁয়া আবার কি? তিনি ﷺ বললেন: ধোঁয়া হলো, এমন এক জাতির আবির্ভাব ঘটবে যারা আমার হেদায়েত পরিহার করে অন্যদের হেদায়েত গ্রহণ করবে। তাদের মাঝে কিছু ভাল পাবে আবার কিছু মন্দও দেখবে। আমি বললাম: আচ্ছা এ ধোঁয়া মিশ্রিত কল্যাণের পর কি আর কোন অনিষ্ট আসবে? তিনি ﷺ বললেন: হ্যাঁ, আল্লাহর দ্বীনের পথে এক শ্রেণীর আহ্বানকারী, যারা জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে জান্নাতের নামে আহ্বান করবে। তাদের ডাকে যারা সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেন। তিনি ﷺ বললেন: তারা আমাদের জাতির মানুষ। তারা আমাদের (দ্বীনের) ভাষায় কথা বলবে। আমি বললাম: যদি সে আবস্থা আমাকে পেয়ে বসে তাহলে কি নির্দেশ করেন। তিনি ﷺ বললেন: সম্মিলিত মুসলমানদের জামাত ও ইমামের (আমীরের) সঙ্গে থাকবে। আমি বললাম: যদি সম্মিলিত মুসলমানদের কোন জামাত ও ইমাম না থাকে তবে কি করব? তিনি ﷺ বললেন: ঐ সমস্ত দল ত্যাগ করে একাকী থাকবে; যদিও গাছের শিকড় পাতা দ্বারা কামড়িয়ে ধরে হোক না কেন। আর এভাবে মৃত্যু আসা পর্যন্ত থাকবে।" [বুখারী ও মুসলিম]

   নবী ﷺ আরো বলেন:

   وَإِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الْأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ. رواه أبو داود

   "আমি আমার উম্মতের উপর ভ্রষ্ট ইমামদের থেকে ভয় করি।” [সহীহ সুনানে আবু দাউদ- আলবানী হা: নং ৪২৫২]

   জিয়াদ ইবনে হুলাইদ বলেন: আমাকে উমার ফারুক [রাঃ] বলেন: ইসলাম কি দ্বারা বিধ্বস্ত ও ধ্বংস হয় জান? আমি বললাম: না, তিনি বললেন: ইসলাম ধ্বংস হয় আলেমদের পদস্খলন এবং কুরআন নিয়ে মুনাফেকদের ঝগড়া ও ভ্রষ্ট ইমামদের ফতোয়া ও হুকুম দ্বারা।" [দারেমী-শাইখ আলবানী (রহ:) সহীহ বলেছেন, মেশকাত হা: ২৬]

   একটি দেশের দ্বীনের কল্যাণ নির্ভর করে সে দেশের আলেম সমাজের রব্বানী আলেম হওয়ার উপর। আর দুনিয়ার কল্যাণ নির্ভর করে সে দেশের শাসকগোষ্ঠীর সৎ ও নেক হওয়ার উপর। যে দেশের আলেম সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে সে দেশের দ্বীন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং শাসকরা নষ্ট হলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে পড়বে। এবার মুসলিম দেশগুলোর দিকে একবার চেয়ে দেখুন সঠিক জবাব পেয়ে যাবেন।

      ১. পেট ও পকেটের আহবানকারী:

   যাদের চিন্তা-ভাবনা একমাত্র পেট পূর্ণ করা এবং পকেটে যে কোন পন্থায় টাকা-পয়সা ভর্তি করা। পেট ভরে খাওয়া ও পকেটে টাকা হলেই তাদের আর কোন চিন্তা-ভাবনা থাকে না।

      ২. তরীকত ও হকিকতপন্থী আহবানকারী:

   এদের মুরিদরা তাদের বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা কেরামত বয়ান করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে থাকে। হুজুর সাহেবদের নামের আগে-পরে সত্য-মিথ্যা এক মিটার লকব তথা টাইটেল উপাধি লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে থাকে। এরা বাতেনী ও মা'রেফতী জ্ঞানের দাবীদার সেজে নিজেদের মতলব হাসিলের জন্য ইচ্ছামত কুরআনের অপব্যাখ্যা এবং দুর্বল ও জাল হাদীস বর্ণনা করে থাকে। নিজেদের স্বপ্নে কিংবা জঙ্গলে পাওয়া বা বানানো সর্ট ও হট তরীকার ধর্মের নামে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যে ব্যবসার লাগে না পুঁজি লাগে না কোন প্রকার টেক্স বা লাইসেন্স এবং নাই কোন চাঁদাবাজদের চাঁদার ঝামেলা।

   ৩. বিভিন্ন দল ও ফের্কার দলীয় আহবানকারী:

   এদেরকে দলের পক্ষ থেকে এত হাইলাইট-বড় করে দেখানো হয় যদিও তারা বাস্তবে ততোটা না। এদের নামের আগে-পরে বড় বড় টাইটেল-উপাধি লাগিয়ে নিজের দলের ভক্তরা তাদের নাম প্রচার ও প্রসার করে থাকেন।

      ৪. সাধারন জনগণের আহবানকারী:

   যারা জনসাধারণের মন জয় করার জন্য সর্বপ্রকার চেষ্টা করেন। মানুষ কি চায় সে মোতাবেক তারা ওয়াজ-নসিহত করেন ও ফতোয়া দেন।

   খ্যাতি ও প্রসিদ্ধতা এবং বাহবা অর্জনের জন্য যা করা দরকার তাই তারা করে থাকেন। আর তাতে শরিয়তের বাধা-নিষেধের কোন তোয়াক্কা করেন না।

      ৫. সরকার বাহাদুরের ভাড়াটিয়া আহবানকারী:

   সরকার যখন যেমন বলতে চলতে ও করতে বলেন ঠিক তেমনিই তারা জি-হুজুর জি-জাহাপনা করে থাকেন। নিজেদের সুযোগ-সুবিধা ঠিক থাকলে যেমন ফতোয়া ও বয়ান প্রয়োজন তেমনি ব্যবস্থা করে দিবেন।

      ৬. রাব্বানী ওলামা কেরাম দায়ী-আহবানকারী:

   আল্লাহ ওয়ালা ওলামা কেরাম যাঁরা আল্লাহ প্রদত্ত সিলেবাসের আহ্বানকারী। এঁরাই হলেন নবী-রসূলগণের পদাঙ্ক অনুসরণকারী। তাঁরা দুনিয়ার ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, গাড়ি-বাড়ি ও পদ-গদি এবং রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সার্থ বা কি পেলেন আর কি পেলেন না তার প্রতি কখনো তোয়াক্কা করেন না। এঁদের সম্পর্কে নবী ﷺ বলেন:

   لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَذَلِكَ. رواه مسلم

   "আমার উম্মতের কতিপয় লোক সত্যের উপর সর্বদা প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এভাবে তারা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে তাতে অসম্মানকারীরা তাদের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।” [মুসলিম]

   এঁদের জন্য বিশেষ কোন একটি জামাত বা দল কিংবা মাজহাবের অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি নয়। বরং যাঁদের সিলেবাস, আদর্শ ও আমল-আখলাক সবকিছু হবে নবী ﷺ ও সাহাবা কেরামের এবং ইমামদের মত হুবহু। যাঁরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠ থাকবেন যদিও একজন হয় না কেন।