তাক্বদীরঃ আল্লাহ্‌র এক গোপন রহস্য তাক্বদীর বিষয়ে বিস্তারিত আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার
তাক্বদীর সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাঃ দুই. মন্দ কোন কিছু আল্লাহ্‌র দিকে সম্বন্ধিত করা যাবে কি?

দুই. মন্দ কোন কিছু আল্লাহ্‌র দিকে সম্বন্ধিত করা যাবে কি?: মহান আল্লাহ নিছক মন্দ কোন কিছুই সৃষ্টি করেন না; বরং তাঁর সব কর্মই সুন্দর এবং কল্যাণকর। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন,

 «وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِى يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ»

‘(হে আল্লাহ!) যাবতীয় কল্যাণ আপনার হাতে। কিন্তু অকল্যাণ আপনার দিকে সম্বন্ধিত করা যাবে না অথবা অকল্যাণ দ্বারা আপনার নৈকট্য হাছিল করা যাবে না’।[1]

ইমাম বাগাভী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছের দ্বিতীয়াংশের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘...আল্লাহ্‌র মর্যাদা রক্ষার্থে পৃথকভাবে শুধু অকল্যাণ তাঁর দিকে সম্বন্ধিত করা যাবে না। সুতরাং বলা যাবে না, হে অকল্যাণ সৃষ্টিকারী! হে বানর এবং শূকর সৃষ্টিকারী! আপনি আমার অমুক কাজটি করে দিন, যদিও সবকিছুর সৃষ্টিকারী আল্লাহই’।[2] আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অকল্যাণ আল্লাহ্‌র দিকে সম্বন্ধিত করা যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, সবকিছু কি তাক্বদীর অনুযায়ী ঘটে না? জবাব হল, সবকিছু তাক্বদীর অনুযায়ীই ঘটে। তবে এখানে আল্লাহকে সম্বোধন করার আদব শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সেজন্য হে নবীদের হত্যাকারী! হে রিযিক্ব সংকীর্ণকারী! ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে আল্লাহকে সম্বোধন করা যাবে না। বরং তাঁর আদব বজায় থাকে এমন শব্দ ব্যবহার করতে হবে’।[3]

অতএব, নিছক অকল্যাণ বা মন্দ কোন কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেন না; বরং তাতে মহান আল্লাহ্‌র হিকমত রয়েছে এবং তা কারো জন্য আংশিক অকল্যাণ হলেও সাধারণ অর্থে তা কল্যাণকরই।[4] উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কারো উপর আল্লাহ্‌র দণ্ডবিধি কার্যকরকরণ ঐ ব্যক্তির জন্য কোন কোন দিক দিয়ে মন্দ হলেও অন্যদের জন্য তা কল্যাণকরই বটে। কারণ এর মাধ্যমে মানুষ সতর্ক হয়, চুরি, খুন-খারাবি লোপ পায়। অনুরূপভাবে অসুস্থতা কোন কোন দিক দিয়ে খারাপ মনে হলেও মূলতঃ তাতে অনেক কল্যাণ রয়েছে।

সুতরাং মহান আল্লাহ্‌র সাথে আদব রক্ষার্থে নিছক মন্দ এবং অকল্যাণ তাঁর দিকে সম্বন্ধিত করা যাবে না। মহান আল্লাহ স্বয়ং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে এমর্মে নছীহত করেছেন। এরশাদ হচ্ছে,

﴿قُلْ إِن ضَلَلْتُ فَإِنَّمَا أَضِلُّ عَلَىٰ نَفْسِي ۖ وَإِنِ اهْتَدَيْتُ فَبِمَا يُوحِي إِلَيَّ رَبِّي﴾ [سورة سبأ: 50]

‘বলুন, আমি পথভ্রষ্ট হলে নিজের ক্ষতির জন্যই পথভ্রষ্ট হব। আর যদি আমি সৎপথ প্রাপ্ত হই, তবে তা আমার পালনকর্তা কর্তৃক আমার প্রতি অহি অবতীর্ণের কারণেই হয়’ (সাবা ৫০)।[5]


তবে নিম্নোক্ত তিনটি পদ্ধতিতে অকল্যাণ আল্লাহ্‌র দিকে সম্বন্ধিত করা যায়ঃ

১. সাধারণভাবে বলা যেতে পারে, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তখন অকল্যাণও এর আওতাভুক্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ﴾ [سورة الرعد: 16]

‘বলুন, আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা’ (রা‘দ ১৬)।

২. কর্তা বিলুপ্ত করে বলা যেতে পারে। আল্লাহ বলেন,

﴿وَأَنَّا لَا نَدْرِي أَشَرٌّ أُرِيدَ بِمَن فِي الْأَرْضِ أَمْ أَرَادَ بِهِمْ رَبُّهُمْ رَشَدًا﴾ [سورة الجن: 10]

‘আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধনের ইচ্ছা পোষণ করা হয়েছে নাকি তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছা রাখেন’ (জিন ১০)।

৩. সৃষ্টির দিকে সম্বন্ধিত করে বলা যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,

 ﴿مِن شَرِّ مَا خَلَقَ﴾ [سورة الفلق: 2]

‘তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে (আশ্রয় প্রার্থনা করছি), (ফালাক্ব ২)।[6]

[1]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭১, ‘ছালাত’ অধ্যায়, রাতের ছালাতের দো‘আ’ অনুচ্ছেদ।

[2]. ইমাম বাগাভী, শারহুস্‌ সুন্নাহ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘যে দো‘আ দিয়ে ছালাত শুরু করতে হবে’ অনুচ্ছেদ, তাহক্বীক্ব: শু‘আইব আল-আরনাঊত্ব, (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৯৮৩ইং), ৩/৩৭।

[3]. আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী, কাশফুল মুশকিল মিন হাদীছিছ্‌-ছহীহায়েন, (রিয়ায: দারুল ওয়াত্বান, প্রকাশকাল: ১৯৯৭ইং), ১/২০৬।

[4]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ১৪/২৬৬।

[5]. মুহাম্মাদ মুতাওয়াল্লী ইবরাহীম, আল-ক্বাযা ওয়াল-ক্বাদার ওয়া মাওক্বেফুল মুমিন মিনহা, (কায়রো: মাত্ববা‘আতুল মাদানী, প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৭ইং), পৃ: ২১।

[6]. মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ৮/৫১১-৫১২; মুহাম্মাদ ইবনে খলীফা আত-তামীমী, মু‘তাক্বাদু আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ ফী আসমায়িল্লাহিল হুসনা, (রিয়ায: আয্‌ওয়াউস-সালাফ, প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৯ইং), পৃ: ৩২২।