কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণে স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থের বিস্তারিত আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান (ইসলামহাউস.কম)
মিথ্যা স্বপ্নের কথা বলা অন্যায়

হাদীসে এসেছে: ওয়াসেলা ইবনুল আছকা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الفِرَى أَنْ يَدَّعِيَ الرَّجُلُ إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، أَوْ يُرِيَ عَيْنَهُ مَا لَمْ تَرَ، أَوْ يَقُولُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَمْ يَقُلْ»

“সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল, কোনো ব্যক্তি তার নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান বলে দাবী করা। যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা বর্ণনা করা আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি তা তাঁর ব্যপারে বলা”।[1]

হাদীস থেকে আমরা শিখতে পারলাম:

সবচয়ে বড় মিথ্যা হলো তিনটি,

(ক) নিজের পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা বলে দাবী করা।

(খ) যে স্বপ্ন দেখে নি তা বানিয়ে বলা। অর্থ্যাৎ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা।

(গ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন নি, তা তার কথা বলে চালিয়ে দেওয়া।

যারা মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে আর মনে করে, এতে এমন কী ক্ষতি? তাদের জন্য এ হাদীস একটি সাবধান বাণী। এটাকে ছোট পাপ বলে দেখার কোনো অবকাশ নেই। সব ধরনের মিথ্যাই অন্যায়। এমনকি হাসি-ঠাট্টা করে মিথ্যা বলাও পাপ, তবে মিথ্যার মধ্যে এ তিনটি হল খুবই মারাত্মক।

যে পিতা নয় তাকে পিতা বলে লেখা বা ঘোষণা দেওয়া এমন অন্যায় যার মাধ্যমে পরিবার প্রথা ও বংশের উপর আঘাত আসে। আর মাতা-পিতার অবদানকে অস্বীকার করা হয়।

কেউ মিথ্যা স্বপ্নের বর্ণনা দিলে তার ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আর যদি ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে তা সংঘটিত হয়ে যায়।

উদাহরণ:

এক ব্যক্তি ইমাম ইবন সীরীন রহ.-এর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার হাতে যেন একটি কাঁচের পেয়ালা। সেটি ভেঙ্গে গেল কিন্তু তার পানি রয়ে গেছে। ইবন সীরীন রহ. বললেন, তুমি কিন্তু এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখোনি। লোকটি রাগ হয়ে বলল, সুবহানাল্লাহ! (আমি মিথ্যে বলিনি)

ইবন সীরীন রহ. বললেন, যদি স্বপ্ন মিথ্যা হয়, তাহলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।
আর এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল, তোমার স্ত্রী মারা যাবে আর পেটের বাচ্চাটি জীবিত থাকবে। এ কথা শোনার পর লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি আসলে কোনো স্বপ্ন দেখিনি। এর কিছুক্ষণ পর তার একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে এবং তাতে আর স্ত্রী মারা গেছে। (ইমাম যাহাবী রহ. প্রণীত সিয়ার আল-‘আলাম আন-নুবালা)

আরেকটি উদাহরণ:

এক ব্যক্তি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে এসে বলল, আমি স্বপ্নে দেখেছি, জমিন তরু-তাজা সবুজ হয়েছে। এরপর আবার শুকিয়ে গেছে। আবার সবুজ-তরুতাজা হয়েছে, আবার শুকিয়ে গেছে।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এর ব্যাখ্যা হলো তুমি প্রথমে মুমিন থাকবে পরে কাফির হয়ে যাবে। আবার মুমিন হবে, এরপর আবার কাফির হয়ে যাবে আর কাফির অবস্থায় তোমার মৃত্যু হবে। এ কথা শুনে লোকটি বলল, আসলে আমি এ রকম কোনো স্বপ্ন দেখিনি। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন:

﴿قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ ٱلَّذِي فِيهِ تَسۡتَفۡتِيَانِ ٤١ ﴾ [يوسف: ٤١]

“যে বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছিলে তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তোমার বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গেছে যেমন ফয়সালা হয়েছিল, ইউসূফ আলাইহিস সালামের সাথীর ব্যাপারে।[2]

তাই কখনো কাল্পনিক বা মিথ্যা স্বপ্ন বলা ও তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া ঠিক নয়।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫০৯
[2] মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, বর্ণনার সনদ সহীহ