মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান নবম পরিচ্ছেদ: বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত ইসলামহাউজ.কম
নারীর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, অবাধ্য হওয়া হারাম:

হে মুসলিম নারী, রেওয়াজ মোতাবেক স্বামীর আনুগত্য করা তোমার ওপর ওয়াজিব। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»إذا صلت المرأة خمسها، وصامت شهرها، وحصنت فرجها، وأطاعت بعلها دخلت من أي أبواب الجنة شاءت«

“নারী যদি তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমযান মাসের সিয়াম রাখে, স্বীয় লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং নিজ স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে”।[1]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا يحل لامرأة أن تصوم وزوجها شاهد إلا بإذنه، ولا تأذن في بيته إلا بإذنه«

“কোনো নারীর পক্ষে বৈধ নয় স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ব্যতীত সিয়াম রাখা এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে প্রবেশাধিকার দেওয়া।”[2]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه، فلم تأته، فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح«

“স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে ডাকে সাড়া না দেয়, ফলে সে তার ওপর গোস্বা নিয়ে রাত যাপন করে, তাহলে সকাল পর্যন্ত ফিরিশতারা নারীর ওপর লা‘নত করে”।[3]

বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»والذي نفسي بيده ما من رجل يدعو امرأته إلى فراشه، فتأبى عليه إلا كان الذي في السماء ساخطا عليها حتى يرضى عنها«

“যার হাতে আমার নফস সে সত্ত্বার কসম, যে কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আসমানে বিদ্যমান সত্ত্বা (অর্থাৎ আল্লাহ) অবশ্যই তার ওপর রাগান্বিত থাকেন, যতক্ষণ না স্বামী তার স্ত্রীর ওপর সন্তুষ্ট হয়”।[4]

স্ত্রীর ওপর স্বামীর একটি হক হচ্ছে, তার ঘর দেখাশুনা করা এবং তার অনুমতি ব্যতীত তার ঘর থেকে বের না হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»والمرأة راعية في بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها«

“নারী তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীলা এবং তাকে সে বিষয়ে জবাবদিহি করা হবে”।[5]

স্ত্রীর ওপর স্বামীর আরো একটি হক হচ্ছে, ঘরের কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া এবং তাকে সেবিকা আনতে বাধ্য না করা, যা তার জন্য কষ্টকর এবং যার ফলে সে নিজে বা তার সন্তান-সন্ততিরা ফেতনার সম্মুখীন হতে হয়।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ‘মাজমুউল ফতোয়া’য়: (৩২/২৬০ ও ২৬১) বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ﴾ [النساء: ٣٤]

 “সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারিনী ঐ বিষয়ে যা আল্লাহ হিফাযত করেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪] এ আয়াতের দাবি অনুযায়ী স্ত্রীর ওপর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, সেটি তার সাথে সফর হোক, তার সাথে আনন্দ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয় হোক বা অন্য যে কোনো চাহিদা হোক। এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতও প্রমাণ করে।” সমাপ্ত।

ইবনুল কাইয়্যিম রহ. ‘হাদইউন নববী’: (৫/১৮৮ ও ১৮৯) গ্রন্থে বলেন: “যেসব ইমামদের নিকট স্ত্রীর ওপর স্বামীর খিদমত করা ওয়াজিব, তারা বলেন, যাদের (অর্থাৎ যে আরবদের) ভাষায় আল্লাহ তা‘আলা সম্বোধন করেছেন তাদের নিকট খিদমত একটি মা‘রূফ (অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক) হক। পক্ষান্তরে স্ত্রীকে বিনোদন প্রদান করা, তার খিদমত স্বামীর আঞ্জাম দেওয়া, স্বামীর ঝাড়ু দেওয়া, রুটি তৈরি করা, আটার খামির বানানো, ধোয়া, বিছানা করা ও বাড়ির খিদমত আঞ্জাম দেওয়া ইত্যাদি মুনকার (অর্থাৎ প্রচলিত নিয়ম বহির্ভূত) কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]

“আর নারীদের জন্য রয়েছে বিধি মোতাবেক অধিকার, যেমন আছে তাদের ওপর (পুরুষদের) অধিকার”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]

অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ﴾ [النساء: ٣٤]

“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]

যদি নারী পুরুষের সেবা না করে, বরং পুরুষ নারীর সেবা করে, তাহলে নারী তত্ত্বাবধায়ক হবে পুরুষের উপর... অতঃপর বলেন: সন্দেহ নেই আল্লাহ স্বামীর ওপর স্ত্রীর খরচ, পোশাক ও বাসস্থানের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তাকে ভোগ করা, তার খিদমত গ্রহণ করা ও বিধি মোতাবেক তার সেবার বিনিময়ে।

অধিকন্তু মানুষের সাধারণ লেনদেন ও চুক্তিগুলো সমাজে প্রচলিত বিধি ও নীতির ওপর ভিত্তি করেই হয়, (অতএব, বিয়ে পরবর্তী স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও সে নীতি মোতাবেক হবে এটিই স্বাভাবিক)। প্রচলিত নীতি হচ্ছে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর খিদমত করা ও তার ঘরের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়া। তিনি আরো বলেন: এ ক্ষেত্রে সম্ভ্রান্ত ও সাধারণ, ধনী ও গরীবের মাঝে বিভাজন করা দুরস্ত নয়। এই দেখ দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম নারী ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা স্বামীর খিদমত করতেন, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সাংসারিক কাজের অভিযোগ করেন, তিনি তার অভিযোগ আমলে নেন নি।” সমাপ্ত।

[1] সহীহ ইবন হিব্বান।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৬; আহমদ (২/৩১৬)
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৩৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৪১; আহমদ: (২/৪৩৯); দারেমী, হাদীস নং ২২২৮
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩৬
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১৭০৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৯২৮; আহমদ (২/১২১)