পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা দ্বিতীয় অধ্যায় - পাণ্ডুলিপি, প্রামাণ্যতা ও অভ্রান্ততা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
২. ১৪. ৪. ৪. শিষ্যরা প্রেরিতগণের অভ্রান্ততায় বিশ্বাস করেননি

আরো লক্ষণীয় যে, প্রেরিতগণ বা সাহাবীদের সমসাময়িক খ্রিষ্টানরা, যারা যীশুর বা প্রেরিতদের শিষ্য ছিলেন তাঁরা কেউ তাঁদেরকে নবী বা পাক-রুহ দ্বারা পরিচালিত বলে বিশ্বাস করতেন না। এজন্য তাঁরা তাঁদের কাজের সমালোচনা করতে দ্বিধা করতেন না। উপরে আমরা কিছু নমুনা দেখেছি। এরূপ অনেক নমুনা আমরা প্রেরিতদের কার্যবিবরণে পাই। যেমন পিতর অ-ইহুদিদের খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের সাথে উঠাবসা শুরু করলে জেরুজালেমের ‘ছিন্নত্বক’ বা ‘খতনাকৃত’, অর্থাৎ ইহুদি থেকে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণকারী যীশুর শিষ্যরা ও প্রথম প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা রুষ্ট হন। পিতর জেরুজালেমে ফিরলে তাঁরা ‘‘তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে বললেন, তুমি খৎনা-না-করানো লোকদের বাড়িতে প্রবেশ করেছ এবং তাদের সাথে আহার করেছ।’’ (প্রেরিত ১১/১-৩)

এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রথম প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা সাহাবীদের বা প্রেরিতদেরকে নবী বা পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত বলে কখনোই মনে করতেন না। লক্ষণীয় যে, তাদের এ বিবাদ ও প্রতিবাদের উত্তরে পিতর বলেননি যে, পবিত্র আত্মা তাঁকে এরূপ করতে বলেছেন। বরং তিনি তাঁর স্বপ্ন ও অন্যান্য বিষয় দিয়ে তাঁর কর্ম সমর্থন করেন।

অনুরূপভাবে প্রেরিত পুস্তকের ২১ অধ্যায়ে আমরা দেখি যে, সাধু পল অ-ইহুদি রোমানদের খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করতে শিক্ষা দিতেন যে, তৌরাত ও শরীয়ত পালন করতে হবে না। এ সংবাদে জেরুজালেমে বসবাস রত যীশুর শিষ্যরা ও অন্যান খ্রিষ্টান ভয়ঙ্কর রুষ্ট ছিলেন। সাধু পল যখন জেরুজালেমে ফিরে আসলেন তখন জেরুজালেমে অবস্থানরত প্রেরিতগণ ও খ্রিষ্টীয় জামাতের প্রধানরা বলেন যে, ইহুদিদের মধ্যে হতে অনেক মানুষ যীশু খ্রিষ্টে বিশ্বাসী হয়েছেন এবং শরীয়ত পালন করছেন। তারা জেনেছেন যে, পল শরীয়ত পালনের বিরুদ্ধে বলেন। এতে সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন। সবাইকে শান্ত করার জন্য পলকে শুচি হতে ও ইহুদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে বললেন। পলও সে মত কর্ম করলেন। কেউ কাউকে পবিত্র আত্মার প্রেরণার কথা বললেন না। (প্রেরিত ২১/২০-২৬) আর জেরুজালেমের শিষ্যরাও পলকে পাক-রুহ বা পবিত্র আত্মায় পরিচালিত বলে বিশ্বাস করতেন না।