কিয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর পঞ্চম অধ্যায় ইসলামহাউজ.কম
প্রথম যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে

হাদীসে এসেছে: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«عُرِضَتْ عَلَيَّ الْأُمَمُ، فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ الرُّهَيْطُ، وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلَانِ، وَالنَّبِيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ، إِذْ رُفِعَ لِي سَوَادٌ عَظِيمٌ، فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي، فَقِيلَ لِي: هَذَا مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَوْمُهُ، وَلَكِنْ انْظُرْ إِلَى الْأُفُقِ، فَنَظَرْتُ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ، فَقِيلَ لِي: انْظُرْ إِلَى الْأُفُقِ الْآخَرِ، فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ، فَقِيلَ لِي: هَذِهِ أُمَّتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ أَلْفًا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَا عَذَابٍ "، ثُمَّ نَهَضَ فَدَخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ فِي أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَا عَذَابٍ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: فَلَعَلَّهُمُ الَّذِينَ صَحِبُوا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: فَلَعَلَّهُمُ الَّذِينَ وُلِدُوا فِي الْإِسْلَامِ وَلَمْ يُشْرِكُوا بِاللهِ، وَذَكَرُوا أَشْيَاءَ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ؟» فَأَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: «هُمُ الَّذِينَ لَا يَرْقُونَ، وَلَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»، فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ، فَقَالَ: " ادْعُ اللهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، فَقَالَ: «أَنْتَ مِنْهُمْ؟» ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَالَ: ادْعُ اللهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، فَقَالَ: «سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ»

“কিয়ামতের দিন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষদের কীভাবে হাজির করা হবে তার একটি চিত্র আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম একজন নবী আসলেন তার সাথে দশ জনের কম সংখ্যক অনুসারী। আরেকজন নবী আসেলন, তার সাথে একজন বা দু’জন অনুসারী। আবার আরেকজন নবী আসলেন তার সাথে কোনো অনুসারী নেই। এরপর দেখলাম বড় একদল মানুষকে আনা হলো। আমি ধারনা করলাম এরা আমার অনুসারী হবে। কিন্তু আমাকে বলা হলো, এরা মূছা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী। আমাকে বলা হলো, আপনি অন্য প্রান্তে তাকান। আমি তাকালাম। দেখলাম বিশাল একদল মানুষ। আমাকে বলা হলো, এবার অন্য প্রান্তে তাকান। আমি তাকালাম। দেখলাম, সেখানেও বিশাল একদল মানুষ। আমাকে বলা হলো, এরা সকলে আপনার অনুসারী। এবং তাদের মধ্যে সত্তর হাজার মানুষ এমন আছে, যারা কোনো হিসাব-নিকাশ ও শাস্তি ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথাগুলো বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে তাঁর ঘরে গেলেন। উপস্থিত লোকজন এ সকল লোক কারা হবে এ নিয়ে বিতর্ক জুড়ে দিল। কেউ কেহ বললো, তারা হবে ঐ সকল মানুষ যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছে। কেউ বললো, তারা হবে ঐ সকল মানুষ যারা ইসলাম নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছে আর কখনো শির্ক করে নি। আবার অনেকে অন্য অনেক কথা বললো। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। বললেন, তোমরা কি নিয়ে বিতর্ক করছিলে? তখন তারা বলল, ঐ সকল লোক হবে কারা এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঐ সকল লোক হলো তারাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যারা ঝাড়-ফূঁক করে না। ঝাড়-ফূঁক করতে যায় না। যারা কুলক্ষণ শুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে না। আর শুধু তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর (তাওয়াক্কুল) করে। এ কথা শুনে উকাশা ইবন মিহসান দাড়িয়ে গেলেন আর বললেন, হে রাসূল! আপনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে এ সকল লোকদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলে। এরপর আরেকজন দাড়িয়ে বললেন, হে রাসূল! আপনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাকেও এ সকল লোকদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উকাশা তোমাকে ছাড়িয়ে গেছে”।[1]

হাদীসটি থেকে আমরা যা জানতে পারি:

এক. অন্যান্য নবীদের অনুসারীদের তুলনায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের সংখ্যা হবে অনেক বেশি।

দুই. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের মধ্যে সত্তর হাজার মানুষ বিনা হিসাব ও কোনো শাস্তি ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে।

তিন. শরী‘আত অনুমোদিত ঝাড়-ফুঁক বৈধ। আর যে সকল ঝাড়-ফুঁক শরী‘আত অনুমোদন করে না তা নিষিদ্ধ। বৈধ ঝাড়-ফুঁক করা বা করানো তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। তবে এগুলো পরিহার করে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তা‘আলার উপর নির্ভর করা হলো তাওয়াক্কুলের একটি শীর্ষ স্থান। যারা এ শীর্ষ স্থানের অধিকারী হতে পারবে তারা বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে।

চার. কোনো কিছু দেখে বা কোনো কিছু করে তার মাধ্যমে শুভ অশুভ নির্ণয় করা জায়েয নয়।

পাঁচ. কুরআন বা হাদীসের কোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক বা আলোচনা করা দোষের কিছু নয়। সাহাবীগন যখন এ ভাগ্যবান মানুষগুলো কারা হবেন এ বিষয় নিয়ে বিতর্ক করছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করেন নি বা বিতর্ক করা ঠিক নয় বলে কোনো মন্তব্য করেন নি।

ছয়. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ব্যাপারে মানুষের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রবর্তন করেছেন। তার সমকালে কোনো রাজা-বাদশা বা ধর্মীয় নেতারা তাদের লোকদের এভাবে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেন নি। কারো মতামত ভুল হলেও তিনি তা প্রকাশ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। কাউকে মতামত প্রকাশে বাধা প্রদান করেন নি।

সাত. কোনো বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দো‘আ করতে বলা শরীয়ত অনুমোদিত কাজ বলে স্বীকৃত ছিল যতদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত ছিলেন। যেমন, আমরা এ হাদীসে দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উক্কাশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দো‘আ চেয়েছেন। এমনিভাবে জীবিত কোনো আলিম বা বুযুর্গ ব্যক্তির কাছে যে কোনো ব্যাপারে দো‘আ চাওয়া যায়। কিন্তু কোনো মৃত নবী বা অলীর কাছে কোনো ব্যাপারে দো‘আ চাওয়া যায় না।

আট. এ হাদীসটি আমাদের সকলকে যথাযথভাবে আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল করা ও তাওয়াক্কুলের শীর্ষস্থানে পৌঁছে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২০।