সুন্নতের আলো ও বিদআতের আঁধার ১ম অধ্যায় : সুন্নতের আলো ইসলামহাউজ.কম
সুন্নাতের পরিচয়

সুন্নাতের কিছু অনুসারী আছে যারা জামাতবদ্ধ সুদৃঢ় আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। যাদেরকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ বলা হয়।

এখানে তিনটি বিষয় রয়েছেঃ ১. আকীদা, ২. আহলুস সুন্নাহ ও ৩. আল-জামাআহ। নিম্নে প্রত্যেকটির পরিচয় দেয়া হলোঃ

প্রথম : ‘আকীদা’ এর শাব্দিক অর্থ
বন্ধন, বাঁধন, দৃঢ়ভাবে বাঁধা।

পারিভাষিক অর্থ
আকীদা এমন সুদৃঢ় ও সঠিক ঈমানকে বলে, যার মধ্যে সন্দেহের  কোন অবকাশ নেই।

সুতরাং যদি তার সে সুদৃঢ় বিশ্বাস বিশুদ্ধ ও সঠিক হয়, তাহলে আকীদাও বিশুদ্ধ এবং সঠিক হবে। যেমন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা। আর যদি তা ভ্রান্ত হয়, তাহলে আকীদাও ভ্রান্ত এবং বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন, বিভিন্ন ভ্রান্ত আকীদাপন্থী পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের আকীদা ও বিশ্বাস।[1]

দ্বিতীয় : ‘আহলুস সুন্নাহ’ এর অর্থ

‘সুন্নাহ’ এর শাব্দিক অর্থ
পথ বা জীবনাদর্শ, তা উৎকৃষ্ট হোক বা নিকৃষ্ট।

ইসলামী আকীদাপন্থীদের পরিভাষায় সুন্নাহ অর্থ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ যে জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করেছেন সে জীবনাদর্শকে সুন্নাহ বলা হয়।

এটা এমন এক আদর্শ, যা অনুসরণ করা ওয়াজিব। এ সুন্নাতের অনুসারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এর বিরোধীদের নিন্দা করা হয়েছে। এজন্যই বলা হয় অমুক ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী। অর্থাৎ সে সুদৃঢ় ও প্রশংসিত আদর্শের অনুসারী।[2]

হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেন, সুন্নাত হলো প্রচলিত পদ্ধতি, যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের বিশ্বাস, আমল ও বক্তব্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে। এটাই হলো প্রকৃত সুন্নাত।[3]

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, সুন্নাত হল ঐ সকল আমল, যা পালনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুগত হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের দলিল রয়েছে। চাই তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে পালন করেছেন বা তাঁর অনুমোদনে সে যুগে পালন করা হয়েছে অথবা চাহিদা না থাকায় কিংবা অসুবিধার কারণে সে যুগে পালিত হয়নি। এ সবই সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।[4]

এখানে সুন্নাতের অর্থ হল
বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস, মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের আদর্শের অনুসরণ করা।

তৃতীয় : ‘জামাআহ’ এর শাব্দিক অর্থ
দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় ইত্যাদি।

ইবনে ফারেস রহ. বলেন, জীম, মীম ও আইন হরফ দ্বারা গঠিত শব্দ কোন বস্তু একত্রিত করা বুঝায়।

ইসলামী আকীদার পরিভাষায়

জামাআত হল, উম্মতে মুহাম্মাদীর নেককার ব্যক্তিবর্গ। যেমন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারীগণ, যারা কিতাবুল্লাহ্ ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঐকমত্য পোষণকারী।[5]

আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, জামাআত ঐ বিষয়কে বলে, যা সত্যের অনুকূল হয়, যদিও তাতে তুমি একা হও।

নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ রহ. বলেন, যখন জামাআত ভেঙ্গে যাবে তখন তোমার জন্য আবশ্যক হল, ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্বে জামাআত যে উদ্দেশ্য ও আর্দশের উপর ছিল সে আর্দশের উপর অটল থাকা, যদিও তুমি একা হও। কেননা সে সময় তুমি একাই জামাআত হিসেবে গণ্য হবে।[6]

[1] মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ৯-১০পৃ:
[2] মাবাহিসু আকীদাতি আহলিস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ - ড: নাসের আল-আকল : ১৩পৃ:
[3] জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/১২০
[4] মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : ২১/৩১৭
[5] শরহু আকীদাতি আত-তহাবী : ৬৮পৃ:
[6] ইগাসাতিল লাফহান, ইবনে তাইমিয়া : ১/৭০