আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী الأصل الخامس: الإيمان باليوم الآخر - পঞ্চম মূলনীতি: শেষ দিবসের প্রতি ঈমান শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
কবরের প্রশ্ন কি শুধু এ উম্মতের জন্য?

কবরের প্রশ্ন কি শুধু উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য? না কি এটি তাদের জন্য এবং অন্যান্য উম্মতের জন্য? এ ব্যাপারে আলেমদের তিনটি মত রয়েছে।

(১) কবরের প্রশ্ন শুধু এ উম্মতের জন্য। কেননা আমাদের পূর্বের উম্মতদের নিকট রসূল প্রেরণ করা হতো। তারা তাদের নিকট রিসালাতের বাণী নিয়ে আসতেন। তারা যখন রসূলদের রিসালাত কবুল করতে অস্বীকার করেছে, তখন রসূলগণ তাদেরকে দাওয়াত দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন এবং তাদেরকে ছেড়ে দূরে চলে গেছেন। পরবর্তীতে আযাব প্রেরণ করে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হলো, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ﴾ ‘‘হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে সৃষ্টিজগতের জন্য আমার রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি’’, তখন তাদেরকে দাওয়াত কবুল না করার কারণে শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন। তাকে কাফের-মুশরেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ করা হয়েছে। যাতে করে তলোয়ারের ভয়ে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করে। অতঃপর তাদের অন্তরে ঈমান পরিপক্ক হয়ে যায়। সুতরাং তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে অবকাশ প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তলোয়ারের ভয়ে নিফাকী প্রকাশিত হয়েছে। এক শ্রেণীর লোক অন্তরে কুফুরী গোপন রেখে মুখে মুখে ইসলাম প্রকাশ করেছে। তারা মুসলিমদের কাতারে আত্মগোপন করে থাকতো। তাদের মৃত্যুর পর আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য এমন দু’জন পরীক্ষক নির্ধারণ করেছেন, যারা প্রশ্নের মাধ্যমে মুনাফেকদের অন্তরের গোপন বিষয় পরিস্কার করবেন। এ মতের প্রবক্তাদের দলীল হলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:

«إِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ تُبْتَلَى فِى قُبُورِهَا فَلَوْلاَ أَنْ لاَ تَدَافَنُوا لَدَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِى أَسْمَعُ مِنْهُ»

‘‘এ উম্মতকে কবরের ফিতনায় ফেলা হবে। কবরের আযাব শুনালে আমার যদি এ আশঙ্কা না হতো যে, তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে দাফন করা বর্জন করবে, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করতাম, তিনি যেন কবরের আযাব থেকে তোমাদেরকেও কিছু শুনান, যা আমি শুনতে পাই’’।[1]

নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, «أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّكُمْ تُفْتَنُونَ فِي قُبُورِكُمْ قريبا من فتنة المسيح الدجال» ‘‘আমার কাছে এ মর্মে অহী এসেছে যে, দাজ্জালের ফিতনার মতো অথবা তার কাছাকাছি ফিতনার মাধ্যমে তোমাদেরকে কবরে পরীক্ষা করা হবে’’।[2] এখানে সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যাচ্ছে যে, কবরের প্রশ্ন শুধু এ উম্মতের লোকদেরকেই করা হবে। ফেরেশতা দু’জনের কথা থেকেও তা সুস্পষ্ট হয়। তারা বলবেন, «ما كنت تقول في هذا الرجل الذي بعث فيكم؟» ‘‘তোমাদের কাছে এই যে লোকটিকে পাঠানো হয়েছিল, তার সম্পর্কে তুমি কী বলতে?

(২) কবরের প্রশ্ন এ উম্মতকে এবং অন্যান্য উম্মতকেও করা হবে। এ মতের প্রবক্তাগণ প্রথম মতের সমর্থকদের জবাবে বলেন, কবরের প্রশ্ন সম্পর্কিত হাদীছগুলো এ কথা প্রমাণ করে না যে, অন্যান্য উম্মত ব্যতীত শুধু এ উম্মতকেই প্রশ্ন করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী, » «إِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ تُبْتَلَى فِى قُبُورِهَا ‘‘এই উম্মতকে কবরের ফিতনায় ফেলা হবে’’ এ দ্বারা সম্ভবত উদ্দেশ্য হলো বনী আদম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ﴾

‘‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল প্রত্যেকটি জীব এবং মহাশুণ্যে নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রত্যেকটি পাখি তোমাদের মতোই এক একটি জাতি’’। (সূরা আল-আনআম: ৩৮) অতএব প্রাণী জগতের প্রত্যেক শ্রেণীর প্রাণীই এক একটি জাতি। সুতরাং নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছের যেখানে বলা হয়েছে যে, কবরে এ জাতিকে প্রশ্ন করা হবে, কিন্তু অন্যান্য জাতিকে প্রশ্ন করার ব্যাপারটি নাকোচ করা হয়নি। এখানে শুধু খবর দেয়া হয়েছে যে, এ উম্মতকে তাদের কবরে প্রশ্ন করা হবে।

অনুরূপ

أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّكُمْ تُفْتَنُونَ فِي قُبُورِكُمْ قريبا من فتنة المسيح الدجال

‘‘আমার কাছে এ মর্মে অহী এসেছে যে, দাজ্জালের ফিতনার মত অথবা তার কাছাকাছি ফিতনার মাধ্যমে তোমাদেরকে কবরে পরীক্ষা করা হবে’’ এর মধ্যেও শুধু খবর দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। তাদেরকে ছাড়া অন্যদেরকে প্রশ্ন করার বিষয়টি নাকোচ করা হয়নি।

(৩) কবরের প্রশ্ন শুধু এ উম্মতের জন্য না কি অন্যান্য উম্মতদের জন্যও, -এ ব্যাপারে নিরব থাকা উচিত। কেননা এ বিষয়ের দলীলগুলোর মধ্যে উভয় মতোই সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু এ উম্মতকে প্রশ্ন করার ব্যাপারে দলীলগুলো অকাট্য নয়। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।


[1]. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ৭৩৯২।

[2]. দেখুন, মুখতাসার সহীহ আল-বুখারী, হাদীছ নং- ৭৬।