মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-৬১ : আল-হামদুলিল্লাহ সালাফে সালেহীনের মানহাজের দিকে দাওয়াত প্রদান ও তা আঁকড়ে ধরার প্রতি আহবান বর্তমানে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কিছু লোক বলছে যে, এই দাওয়াত মূলতঃ মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির দাওয়াত, যাতে মুসলিমেরা তাদের প্রকৃত শত্রু থেকে গাফিল থেকে নিজেরা পরস্পরে মারামারিতে লিপ্ত হয়। তাদের এ কথা কী সহীহ? এ ব্যাপারে আপনার দিকনির্দেশনা কী?

উত্তর : এটা বাস্তবতা বিরোধী কথা। কেননা তাওহীদের প্রতি আহবান এবং সালাফে সালেহীনের মানহাজই মূলতঃ মুসলিমদেরকে এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ করে।


আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا

আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান ১০২)  আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ

নিশ্চয় তোমাদের এ জাতি তো একই জাতি। আর আমিই তোমাদের রব। অতএব তোমরা আমারই ইবাদত করো। (সূরা আল-আম্বিয়া ৯২)।

 সুতরাং কোন মুসলিমের জন্য তাওহীদ ও সালাফে সালেহীনের মানহাজ ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে ঐক্য স্থাপন করা সম্ভব নয়। আর যদি তারা সালাফে সালেহীনের মানহাজ বিরোধী অন্য কোন মানহাজ গ্রহণ করে তাহলে তারা দলে দলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আর এটাই বর্তমানের বাস্তবতা।

সুতরাং যে ব্যক্তি তাওহীদ ও সালাফে সালেহীনের মানহাজের প্রতি আহবান করছে সেই মূলত ঐক্যের প্রতি আহবান করছে। আর যে ব্যক্তি এর বিপরীতে আহবান করছে সে মূলতঃ দলাদলি ও বিভক্তির প্রতিই আহবান করছে।[1]


[1]. তাবলীগ জামাত ও ইখওয়ানুল মুসলিমুন দলের মতে তাওহীদের পথে দাওয়াত হলো, দল ও ফিরকাবাজী দাওয়াত, যা মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে। তাওহীদের দিকে দাওয়াত করাকে তাদের দাওয়াতের মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত মনে করে না। তারা তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়াতে সন্তুষ্ট হয় না। যদি কেউ তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে তাওহীদের দাওয়াত প্রদান করে তাহলে তারা সে দাঈর কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং জনগণকে তার (তাওহীদের) দাওয়াত কবুল করতে বারণ করে ।

উসতায মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মদ আল আহমাদের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে। শায়খ হামূদ আত তুওয়াইজিরী (রহ.) ‘আল কওলুন বালীগ ফিত তাহযীর মিন জামা আতিত তাবলীগ’ নামক গ্রন্থের ৪৬ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, উসতায় মুহাম্মদ বলেন, আমীর (তাবলীগী ফিরকার আমীর) আমাকে অনুরোধ করলেন, যেন আমি আছর সালাতের পর হাজীদের কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করি। আমি ছিলাম তাবলীগ জামা’আতে নতুন ব্যক্তি। আমীর তার বিশেষ সাহায্যকারীর মাধ্যমে আমাকে কিছু বিষয়ে সতর্ক করলেন। তার সেই সহকারী আমাকে বলল ‘‘আপনার নছীহার ক্ষেত্রে তিনটি জিনিস পরিহার করতে হবে; সে বিষয় তিনটি উল্লেখ করলো। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শিরক ও বিদ’আত বিষয়ে কথা না বলা। কেননা শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর দাওয়ার পতন হওয়ার মুল কারণ নাকি উল্লেখিত বিষয়াবলিতে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া।

আমি বলব এরকম আরো অনেক উপমা রয়েছে। উল্লেখিত কিতাবে দেখুন অনেক আজব আজব ঘটনা পেয়ে যাবেন।

ইখওয়ানুল মুসলিমীন ফিরকা: এ ফিরকা আত-তাজমী‘ বা একত্র করণ মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর পরিধিতে বিদাতী, প্রবৃত্তিবাদী, রাফিয়ী, জাহমী, মুতাযিলী, খারিজী, কবরপূজারী, সুফীবাদী এমনকি ইয়াহুদী খ্রিষ্টানদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে।

এর প্রমাণ: হাসানুল বান্না বলেছে ‘‘ইয়াহুদীদের সাথে আমাদের কোন ধর্মীয় দ্বন্দ্ব নেই। কেননা পবিত্র কুরআনে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে’’ (মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম, আল ইখওয়ানুল মুসলিমীন আহদাছুন ছনা আতিত তারীখ খ. ০১ পৃ. ৪০৯)

শায়খ ইবনে বায (রহ.) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটা একটা শয়তানী কথা। ইয়াহুদীরা মুমিনদের বড় শত্রু। মানব জাতির মাঝে তারা সবচেয়ে অনিষ্টকর। তারা মুমিনদের সাথে শত্রুতার  ক্ষেত্রে বড়ই কঠোর। এই প্রবন্ধটি ভুল, জুলমে ভরপুর ও মন্দ।

শায়খ আরো বলেন, সে যদি বলে ইসলাম ও ইয়াহুদী বাদের মাঝে কোন শত্রুতা নাই তাহলে তা কুফুরী ও রিদ্দাহ বা ধর্ম পরিত্যাগ করা অন্তর্ভুক্ত হবে। (আল আওয়াছিবম মিম্মা ফি কুতুবি সাইয়্যিদ কুতুব মিনাল কওয়াছিবম পৃ.৬৫-৬৬)

খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে ইখওয়ান কর্মী জাবির রযাক তার ‘‘হাসানুল বান্না বি আকলামি তালামিযাতিহী ওয়া সু’আছিরীছি নামক গ্রন্থের ১৮৮নং পৃষ্ঠায় ড. হাসমান হাতহুত আল ইখওয়ানবীর তুমাতুত তা’আচ্ছুব শীর্ষক প্রবন্ধ উল্লেখ করেছেন ‘প্রত্যেক বোধসম্পন্ন মুসলিম ও কিবত্বী তার দাওয়াত সত্যায়ন করেছে।’ যারা দাবি করে তিনি খৃষ্টানদের শত্রু ছিলেন তাদের সমীপে এই ঘটনা উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে যে, প্রয়াত কিবতী নেতা প্রফেসর।