দাড়ি রাখা ওয়াজিব ৫. দাড়ির পরিমাপ ইসলামহাউজ.কম
দাড়ির পরিমাপ

দাড়ি রাখা ওয়াজিব এটা প্রমাণিত হলো। দাড়ি এক মুষ্টি বা চার আংগুল পরিমান লম্বা রাখতে হবে। এক মুষ্টির কম রাখা বা একেবারে তা মুণ্ডিয়ে ফেলা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম এবং কবীরা গুনাহ। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাড়ি রাখা এবং তার অসংখ্য হাদীসে উম্মতের প্রতি দাড়ি রাখার সাধারণ নির্দেশই প্রমাণ করে যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং না রাখা হারাম। ফিকহ শাস্ত্রের একটি মূলনীতি হচ্ছে, ‘শরী‘আত প্রবর্তক কর্তৃক কোনো বিষয়ের প্রতি সাধারণ নির্দেশ আসলে তা পালন করা ওয়াজিব এবং বিপরীত করা হারাম’। এছাড়া সাহাবা, সালাফে সালেহীন এবং ফক্বীহগণের দাড়ি রাখার নিরবছিন্ন আমল এবং তাদের বিভিন্ন উক্তিসমূহের দ্বারাও এক মুষ্টি পরিমাপ লম্বা দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং এর বিপরীত করা হারাম সাব্যস্ত হচ্ছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে আজমা‘ঈন, তাবেঈ তাবে-তাবেঈ, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, চার মাযহাবের সকল ইমাম ও বুযুর্গবৃন্দ, আহলে হাদীস, আহলে যাহেরের আলেমগণ দাড়ি এক মুষ্টির চেয়ে বেশি বা কমপক্ষে একমুষ্টি বা ৪ আঙ্গুল রাখাকে ওয়াজিব কিংবা আবশ্যিক সুন্নাহ বলেছেন।

সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হোক আর ওয়াজিব হোক, সোজাকথা হলো: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে কমপক্ষে এক মুষ্টি বা চার আংগুল বা কিছুটা লম্বা দাড়ি রাখা একজন মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য; কারণ এটা মুসলিমর পরিচয় বহন করে। একটি সূন্দর ব্যাপার হচ্ছে, লম্বা (কমপক্ষে এক মুষ্টি বা চার আঙ্গুল) এবং বড় দাড়ি রাখা যে অবশ্য কর্তব্য সুন্নাত এটি প্রমাণ করার জন্য ইজমা‘ বা কিয়াসের প্রয়োজন হয় না বরং কুরআন থেকে পরোক্ষভাবে এবং সুন্নাহ থেকে প্রত্যক্ষভাবে আমরা তা জানতে পারি।

হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়, আবু যুর‘আ রহ. বলেন, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।[1]

‘আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যখন হজ কিংবা ওমরা করতেন, তখন দাড়ি মুঠো করে ধরতেন এবং মুঠোর বাহিরের যা বেশি হত তা কেটে ফেলতেন।[2]

নাফে‘ রহ. বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কেটে ফেলতেন।[3]

হাসান বসরী রহ. বলেন, তারা (সাহাবী-তাবেঈন) মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাটার অবকাশ দিতেন।[4]

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা হজ ও উমরা ছাড়া সবসময় দাড়ি লম্বা রাখতাম।”[5]

খলীফা উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বড় দাড়ি বিশিষ্ট ছিলেন, জালালুদ্দিন সুয়ুতি “তারিখুল খুলাফা” গ্রন্থে লিখেছেন- আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু অনেক বড় দাড়িবিশিষ্ট ছিলেন। হাফেয ইবন হাজার আসকালানীর প্রামাণ্যগ্রন্থ ‘আল-ইছাবা’তে আছে -এভাবে বিভিন্ন প্রামাণ্য গ্রন্থে খুলাফায়ে রাশেদীনসহ সকল অনুসরনীয় সাহাবীদের যে লম্বা সুন্দর মানানসই দাড়ি ছিল, এব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সাহাবীগণের সেই আমলও সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মতি ছিল বা যা দেখে তিনি নিষেধ করেন নি।

>
[1] মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস নং ২৫৯৯২, ২৫৯৯৯।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৪৩।

[3] ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ২৫৯৯৭।

[4] প্রাগুক্ত ১৩/১১২, হাদীস নং ২৫৯৯৫।

[5] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৪১৫৫।