বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী
১. আহবানের শির্ক:

আহবানের শির্ক বলতে পুণ্যার্জন বা মানুষের সাধ্যের বাইরে এমন কোন পার্থিব লাভের আশায় অথবা এমন কোন পার্থিব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে আহবান করাকে বুঝানো হয়।

সকল আহবান একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য এবং তা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। যা তিনি ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক। তবে মানুষের সাধ্যের বাইরে নয় এমন কোন সহযোগিতার জন্য সক্ষম যে কোন ব্যক্তিকে আহবান করা যেতে পারে। এতদ্সত্ত্বেও এ সকল ব্যাপারে মানুষের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল হওয়া ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَأَنَّ الْـمَسَاجِدَ للهِ فَلاَ تَدْعُوْا مَعَ اللهِ أَحَدًا

‘‘নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকার পাশাপাশি অন্য কাউকে ডেকো না’’।

(জিন : ১৮)

যারা আল্লাহ্ তা’আলাকে গর্ব করে ডাকছে না তাদেরকে তিনি জাহান্নামের হুমকি দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ، إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ»

‘‘তোমাদের প্রভু বলেন: তোমরা আমাকে সরাসরি ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। নিশ্চয়ই যারা অহঙ্কার করে আমার ইবাদাত (দো’আ বা আহবান) হতে বিমুখ হবে তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। (মু’মিন/গাফির : ৬০)

আল্লাহ্ তা’আলা ভিন্ন অন্য কাউকে ডাকা হলেও তারা কখনো কারোর ডাকে সাড়া দিবে না। বরং তাদেরকে ডাকা সর্বদা ব্যর্থ ও নিষ্ফল হতে বাধ্য।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«لَهُ دَعْوَةُ الْـحَقِّ، وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ لاَ يَسْتَجِيْبُوْنَ لَـهُمْ بِشَيْءٍ إِلاَّ كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْـمَآءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ، وَمَا دُعَآءُ الْكَافِرِيْنَ إِلاَّ فِيْ ضَلاَلٍ»

‘‘সত্যিকারের একক ডাক একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। যারা তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে আহবান করে তাদের আহবানে ওরা কখনো কোন সাড়া দিবে না। তারা ওব্যক্তির ন্যায় যে মুখে পানি পৌঁছুবে বলে হস্তদ্বয় সম্প্রসারিত করেছে। অথচ সে পানি কখনো তার মুখে পৌঁছুবার নয়। বস্ত্তত কাফিরদের ডাক ব্যর্থ ও নিষ্ফল হতে বাধ্য’’। (রা’দ : ১৪)

যারা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কাউকে ডাকে তাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলা ভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لاَ يَسْتَجِيْبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ»

‘‘সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে? যে আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে এমন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে ডাকে যা কস্মিনকালেও (কিয়ামত পর্যন্ত) তার ডাকে সাড়া দিবে না এবং তারা ওদের প্রার্থনা সম্পর্কে কখনো অবহিত নয়’’। (আহ্কাফ : ৫)

ইব্রাহীম (আ.) মুশরিকদেরকে এবং তারা যাদেরকে ডাকতো তাদেরকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকেন। যাঁকে ডাকলে কখনো সে ডাক ব্যর্থ হয় না।

তিনি বলেন:

«وَأَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَأَدْعُوْ رَبِّيْ عَسَى أَلاَّ أَكُوْنَ بِدُعَاءِ رَبِّيْ شَقِيًّا»

‘‘আমি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া যাদেরকে ডাকছো সকলকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমি শুধু আমার প্রভুকে ডাকছি। আশা করি, আমার প্রভুকে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থ হবো না’’। (মারইয়াম: ৪৮)

একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই সকল লাভ-ক্ষতির মালিক। অন্য কেউ নয়। তিনি ইচ্ছে না করলে কেউ কারোর লাভ বা ক্ষতি করতে পারে না। আর সকল কল্যাণাকল্যাণও কিন্তু মানব সাধ্যের আওতাধীন নয়। বরং তার অনেকটুকুই মানব সাধ্যাতীত। সুতরাং সকল ব্যাপারে তাঁকেই ডাকতে হবে।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ، فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ، وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ، وَإِنْ يُّرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَادَّ لِفَضْلِهِ، يُصِيْبُ بِهِ مَنْ يَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهِ، وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ»

‘‘আর তুমি আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া এমন কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে ডাকো না যা তোমার কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। এমন করলে সত্যিই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি আল্ল­াহ্ তা’আলা তোমাকে কোন ক্ষতির সম্মুখীন করেন তাহলে তিনিই একমাত্র তোমাকে তা থেকে উদ্ধার করতে পারেন। আর যদি তিনি তোমার কোন কল্যাণ করতে চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহের গতিরোধ করার সাধ্য কারোরই নেই। তিনি নিজ বান্দাহ্দের মধ্য থেকে যাকে চান অনুগ্রহ করেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু’’। (ইউনুস : ১০৬-১০৭)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«قُلِ ادْعُوْا الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُوْنِ اللهِ لاَ يَمْلِكُوْنَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِيْ السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِيْ الأَرْضِ وَمَا لَـهُمْ فِيْهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَّمَا لَهُ مِنْهُمْ مِّنْ ظَهِيْرٍ، وَلاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلاَّ لِـمَنْ أَذِنَ لَهُ»

‘‘হে নবী তুমি বলে দাও: তোমরা যাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে পূজ্য মনে করো তাদেরকে ডাকো। তারা আকাশ ও পৃথিবীর অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়। এতদুভয়ে তাদের কোন অংশীদারিত্বও নেই এবং তাদের কেউ তাঁর সহায়কও নয়। তাঁর নিকট একমাত্র অনুমতিপ্রাপ্তদেরই কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হতে পারে’’। (সাবা : ২২-২৩)

তিনি আরো বলেন:

«وَالَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ مَا يَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِيْرٍ، إِنْ تَدْعُوْهُمْ لاَ يَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَلاَ يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ»

‘‘তামরা আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা (খেজুরের আঁটির আবরণ পরিমাণ) সামান্য কিছুরও মালিক নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা কিছুতেই শুনতে পাবে না। আর শুনতে পাচ্ছে বলে মেনে নিলেও তারা তো তোমাদের ডাকে কখনো সাড়া দিবে না। কিয়ামতের দিবসে তারা তোমাদের শির্ককে অস্বীকার করবে। আমার মতো সর্বজ্ঞের ন্যায় কেউই তোমাকে সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না’’।

(ফাতির : ১৩-১৪)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সা.) আমাকে কিছু মূল্যবান বাণী শুনিয়েছেন যার কিয়দাংশ নিম্নরূপ:

إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَّنْفَعُوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُـوْكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ، وَلَوِ اجْتَمَعُوْا عَلَى أَنْ يَّضُرُّوْكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوْكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ

‘‘কিছু চাইলে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই চাইবে। কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার নিকটই কামনা করবে। জেনে রেখো, পুরো বিশ্ববাসী একত্রিত হয়েও যদি তোমার কোন কল্যাণ করতে চায় তাহলে তারা ততটুকুই কল্যাণ করতে পারবে যা তোমার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। আর তারা সকল একত্রিত হয়েও যদি তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় তাহলে তারা ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যা তোমার জন্য বরাদ্দ রয়েছে’’। (তিরমিযী, হাদীস ২৫১৬)

এ হচ্ছে মানব সাধ্যাধীন কল্যাণাকল্যাণ সম্পর্কে। তাহলে যা মানব সাধ্যাতীত তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা ছাড়া কখনো ঘটবে কি? কখনোই নয়।

আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকা বা তাঁর নিকট দো’আ করা যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত তা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) অসংখ্য হাদীসে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে এসে সকল মানুষকে দো’আর জন্য আহবান করে থাকেন।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُوْلُ: مَنْ يَّدْعُوْنِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَّسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَّسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهُ

‘‘আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেন, কে আছে যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছে যে আমার কাছে কিছু চাবে আমি তাকে তা দান করবো। কে আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো’’। (বুখারী, হাদীস ১১৪৫ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮ আবু দাউদ, হাদীস ১৩১৫ তির্মিযী, হাদীস ৩৪৯৮ মালিক, হাদীস ৩০)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ تَعَالىَ مِنَ الدُّعَاءِ

‘‘আল্লাহ্ তা’আলার নিকট দো’আর চাইতেও সম্মানিত কোন বস্ত্ত নেই’’। (তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭০ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৮৯৭ ইবনু হিব্বান/ইহসান, হাদীস ৮৬৭)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ سُبْحَانَهُ غَضِبَ عَلَيْهِ

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলাকে ডাকে না তার উপর তিনি রাগান্বিত হন’’। (আদাবুল্ মুফ্রাদ, হাদীস ৬৫৮ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৮৯৫)

নু’মান বিন্ বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ

‘‘দো’আই হচ্ছে ইবাদাত’’। (তিরমিযী, হাদীস ৩৩৭২ আবু দাউদ, হাদীস ১৪৭৯ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৮৯৬ ইবনু হিব্বান/ইহ্সান, হাদীস ৮৮৭)

সুতরাং এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক বৈ কি।

এমন তো নয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা কোন মাধ্যম ছাড়া কারোর ডাকে সাড়া দেন না। বরং তিনি যখনই কোন বান্দাহ্ তাঁকে একান্তভাবে ডাকে, সাথে সাথেই তিনি তার ডাকে সাড়া দেন।

তিনি বলেন:

«وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ، أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَـانِ، فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ»

‘‘যখন আমার বান্দাহরা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তখন আপনি তাদেরকে বলুনঃ নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ্ তা’আলা) অতি সন্নিকটে। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দেই। অতএব তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার উপর ঈমান আনে। তাহলেই তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে’’। (বাক্বারাহ্ : ১৮৬)

কবরবাসী কোন ওলী বা বুযুর্গ কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে এমন বিশ্বাস করে তাদেরকে ডাকাও কিন্তু এ জাতীয় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। এমন ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে যাবে। যদিও সে আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইবাদাতগুযার বান্দাহ্ হোক না কেন। কারণ, মক্কার কাফিররাও তো আল্লাহ্ তা’আলাকে স্বীকার করতো এবং তাঁর ইবাদাত করতো। কিন্তু শির্কের কারণেই তাদের এ ইবাদাত কোন কাজে আসেনি। তাই তারা অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে।

আল্লাহ্ তা’আলা মক্কার কাফিরদের সম্পর্কে বলেন:

«وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ لَيَقُوْلُنَّ اللهُ، قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنَ اللهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ، قُلْ حَسْبِيَ اللهُ، عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْـمُتَوَكِّلُوْنَ»

‘‘আপনি যদি কাফিরদেরকে জিজ্ঞাসা করেন: আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবেঃ আল্লাহ্ তা’আলাই সৃষ্টি করেছেন। আপনি বলুন: তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো যে, আল্লাহ্ তা’আলা আমার কোন অনিষ্ট করতে চাইলে তোমাদের উপাস্যরা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? বা আল্লাহ্ তা’আলা আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করতে চাইলে ওরা কি সে অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? আপনি বলুন: আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। ভরসাকারীদেরকে তাঁর উপরই ভরসা করতে হবে’’। (যুমার : ৩৮)

মক্কার কাফিররা আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদাতকে মৌলিক মনে করতো। তবে তারা মূর্তিপূজা করতো একমাত্র তাঁরই নৈকট্য লাভের জন্য।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«أَلاَ لِلهِ الدِّيْنُ الْـخَالِصُ، وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَآءَ، مَا نَعْبُدُهُمْ إِلاَّ لِيُقَرِّبُوْنَا إِلَى اللهِ زُلْفَى، إِنَّ اللهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِيْ مَا هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ، إِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِيْ مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ»

‘‘জেনে রেখো, অবিমিশ্র আনুগত্য একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য। আর যারা আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক বা সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করেছে তারা বলে: আমরা তো এদের পূজা এ জন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে। তারা যে বিষয় নিয়ে এখন নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন সে বিষয়ের সঠিক ফায়সালা দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা কাফির ও মিথ্যাবাদীকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না’’। (যুমার : ৩)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هَؤُلآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِ، قُلْ أَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لاَ يَعْلَمُ فِيْ السَّمَاوَاتِ وَلاَ فِيْ الأَرْضِ، سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ»

‘‘তারা আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত এমন ব্যক্তি বা বস্ত্তসমূহের ইবাদাত করে যা তাদের কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে না। তারা বলে: এরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। আপনি বলে দিন: তোমরা কি আল্লাহ্ তা’আলাকে ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলে তাঁর অজানা কোন কিছু জানিয়ে দিচ্ছো? তিনি পবিত্র এবং তিনি তাদের শির্ক হতে অনেক ঊর্ধ্বে’’। (ইউনুস : ১৮)

তিনি আরো বলেন:

«أَمِ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ شُفَعَآءَ، قُلْ أَوَلَوْ كَانُوْا لاَ يَمْلِكُوْنَ شَيْئًا وَّلاَ يَعْقِلُوْنَ، قُلْ للهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيْعًا ، لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ»

‘‘তারা কি আল্লাহ্ তা’আলার অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে সুপারিশকারী বানিয়ে নিয়েছে? আপনি বলে দিন: তোমরা কি কাউকে সুপারিশকারী বানিয়ে নিয়েছো? অথচ তারা এ ব্যাপারে কোন ক্ষমতাই রাখে না এবং কিছুই বুঝে না। আপনি বলে দিন: যাবতীয় সুপারিশ একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য তথা তাঁরই ইখতিয়ারে। অন্য কারোর ইখতিয়ারে নয়। আকাশ ও ভূমন্ডলের সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। পরিশেষে তাঁর নিকটই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’’। (যুমার : ৪৩-৪৪)

কবর পূজারীদের অনেকেই মনে মনে এমন ধারণা পোষণ করে থাকবেন যে, মক্কার কাফির ও মুশ্রিকরা নিজ মূর্তিদের ব্যাপারে এমন মনে করতো যে, তাদের মূর্তিরা স্পেশালভাবে এমন কিছু ক্ষমতার মালিক যা আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে কখনোই দেননি। বরং তাদের এ সকল ক্ষমতা একান্তভাবেই তাদের নিজস্ব। আর আমরা আমাদের পীর-বুযুর্গদের সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করছি তা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা মনে করছি যে, আমাদের পীর-বুযুর্গদের সকল ক্ষমতা একান্ত আল্লাহ্ প্রদত্ত। আল্লাহ্ তা’আলা নিজ দয়ায় তাঁর ওলীদেরকে এ সকল ক্ষমতা দিয়েছেন। তা সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব নয়।

মূলতঃ তাদের এ ধারণা একেবারেই বাস্তববর্জিত। কারণ, মক্কার কাফির- মুশ্রিকদের ধারণাও হুবহু এমন ছিলো। বিন্দুমাত্রও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। তারাও তাদের মূর্তিদের ক্ষমতাগুলোকে একান্তভাবেই আল্লাহ্ প্রদত্ত বলে মনে করতো। একেবারেই তাদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে কখনোই মনে করতো না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ الْـمُشْرِكُوْنَ يَقُوْلُوْنَ: لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ، قَالَ: فَيَقُوْلُ رَسُوْلُ اللهِ : وَيْلَكُمْ! قَدْ قَدْ، فَيَقُوْلُوْنَ: إِلاَّ شَرِيْكًا هُوَ لَكَ، تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ، يَقُوْلُوْنَ هَذَا وَهُمْ يَطُوْفُوْنَ بِالْبَيْتِ

‘‘মুশরিকরা বলতো: (হে প্রভু!) আপনার ডাকে আমি সর্বদা উপস্থিত এবং আপনার আনুগত্যে আমি একান্তভাবেই বাধ্য। আপনার কোন শরীক নেই। তখন রাসূল (সা.) বলতেন: হায়! তোমাদের কপাল পোড়া। এতটুকুই যথেষ্ট। এতটুকুই যথেষ্ট। আর একটুও বাড়িয়ে বলো না। তারপরও তারা বলতো: তবে হে আল্লাহ্! আপনার এমন শরীক রয়েছে যার মালিক আপনি এবং সে যা কিছুর মালিক সেগুলোও আপনার। তার নিজস্ব কিছুই নেই। তারা এ বাক্যগুলো বলতো এবং ক্বাবা শরীফ তাওয়াফ করতো’’। (মুসলিম, হাদীস ১১৮৫)