বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ভারত উপমহাদেশে শির্ক প্রচলনের বিশেষ কারণসমূহ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী
সূচনা:

সকল ইবাদাত তা যাই হোক না কেন তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্যই। অন্য কারোর জন্য নয়। সে যে কেউই হোক না কেন। এ স্বীকৃতিটুকুই আমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট প্রতি দিন প্রতি নামাযের প্রতি রাক্’আতে এবং প্রতি বৈঠকেই দিয়ে থাকি। এ তাওহীদী চেতনাটুকু যেন সর্বদা সকলের অন্তরে জাগরূক থাকে যাতে করে তা সকলের বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা সহজ হয়ে যায় সে জন্যই আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি দিনই বহুবার করে প্রতি বান্দাহ্’র মুখ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এ গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তিটুকু আদায় করে ছাড়ছেন। হায়! আমরা যদি তা বুঝতে পারতাম।

সূরা ফা’তিহার মধ্যে আল্লাহ্ তা’আলা যে বাক্যটি প্রতি দিন আমাদের মুখ থেকে স্বীকার করিয়ে নিচ্ছেন তা হচ্ছে:

«إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ»

‘‘আমরা আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি’’। (ফাতি’হা : ৫)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা রাসূল (সা.) এর পেছনে নামায পড়ার সময় বলতাম: আল্লাহ্ তা’আলার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন একদা রাসূল (সা.) আমাদেরকে বললেন: আল্লাহ্ তা’আলা নিজেই শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা। তাঁর জন্য শান্তি কামনা করার কোন মানে হয় না। তাই তোমরা যখন নামাযে বসবে তখন বলবে:

التَّحِيَّاتُ لِلهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ...

‘‘সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই জন্য। অন্য কারোর জন্য নয়’’। (মুসলিম, হাদীস ৪০২)

সুতরাং যে কোন ইবাদাত তা যত সামান্যই হোকনা কেন তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা যাবে না এবং তা অন্য কারোর জন্য ব্যয় করার নামই শির্ক।

শির্ক একটি মহা পাপ, বড় যুলুম ও মারাত্মক অপরাধ। যাকে রাসূল (সা.) নিজ ভাষায় সর্বনাশা ব্যাধি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْـمُوْبِقَاتِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْـمُحْصَنَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ

‘‘তোমরা বিধ্বংসী সাতটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকো। সাহাবাগণ বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! ওগুলো কি? রাসূল (সা.) বললেন: সেগুলো হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক বা অংশীদার করা, যাদু আদান-প্রদান, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীম-অনাথের সম্পদ ভক্ষণ, সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন ও সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলাদের ব্যাপারে কুৎসা রটানো’’। (বুখারী, হাদীস ২৭৬৬, ৬৮৫৭ মুসলিম, হাদীস ৮৯)

আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করা (তা প্রতিপালন, উপাসনা, আল্লাহ্ তা’আলার নাম ও গুণাবলীর যে কোনটিরই ক্ষেত্রে হোক না কেন) নিঃসন্দেহে তা সকল গুনাহ্’র শীর্ষে অবস্থিত।

আবু বাক্রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ ثَلاَثًا، قَالُوْا: بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: الإِشْرَاكُ بِاللهِ ...

‘‘আমি কি তোমাদেরকে সর্ববৃহৎ গুনাহ্’র কথা বলবো না? রাসূল (সা.) এ কথাটি সাহাবাদেরকে তিন বার জিজ্ঞাসা করেছেন। সাহাবাগণ বললেন: হাঁ, বলুন হে আল্লাহ্’র রাসূল! রাসূল (সা.) বললেন: তা হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করা’’।

(বুখারী, হাদীস ২৬৫৪, ৫৯৭৬ মুসলিম, হাদীস ৮৭)

শির্ক বলতেই তা সকল ধরনের আমলকে একেবারেই বিনষ্ট করে দেয়।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَـحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ»

‘‘তারা (নবীগণ) যদি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করতো তাহলে তাদের সকল আমল পন্ড হয়ে যেতো’’। (আন’আম: ৮৮)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَلَقَدْ أُوْحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ، لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْـخَاسِرِيْنَ»

‘‘নিশ্চয়ই তুমি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি এ ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি যদি শির্ক করো তা হলে নিশ্চয়ই তোমার সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং নিশ্চয়ই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’’। (যুমার : ৬৫)

শির্কের প্রকারভেদ:

শির্ক দু’ প্রকার: বড় শির্ক ও ছোট শির্ক। প্রকারদ্বয়ের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো:

নিম্নে প্রথম পরিচেছদে বড় শির্কের আলোচনা এবং দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ছোট শির্কের বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।