কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম ২. ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ বনাম ‘তওরাত-যাবূর-ইঞ্জিল’ কিতাব ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
২. ৪. ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল কোন্ ভাষায় নাযিল হয়েছিল?

ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল এবং এ সকল ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’-এর মধ্যে অন্যতম পার্থক্য ঈসা মাসীহের ইঞ্জিল ছিল (Hebrew-Aramaic) হিব্রু-আরামিক ভাষায়। কিন্তু প্রচলিত ‘মতানুসারে ইঞ্জিল’-গুলি গ্রীক ভাষায় লেখা। সাধু পলের অনুসারীরা যীশুর পরে ১০০ বৎসরের মধ্যেই তাঁর আসল হিব্রু ইঞ্জিল গুম করে দেন।

খৃস্টান প্রচারকগণ “বাংলা”-য় ‘ইঞ্জিল শরীফ’ প্রচার করেন। আপনি তাকে বলুন: আপনার হাতের ইঞ্জিলটি তো বাংলায় লেখা! ঈসা মাসীহ কি বাঙালী ছিলেন? তা না হলে তিনি কোন্ ভাষায় কথা বলতেন? খৃস্টান প্রচারক স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, ঈসা মাসীহ হিব্রু-আরামিক ভাষায় কথা বলতেন। আপনি তাকে বলুন: হিব্রু ইঞ্জিল কোথায়? যীশুর তিরোধানের পর থেকে ৫০০ বৎসরের মধ্যে লেখা একটি হিব্রু ইঞ্জিল যদি আপনি দেখাতে পারেন তবে আপনার ইঞ্জিল সত্য বলে মেনে নেব।

তারা বলেন, ইঞ্জিল গ্রীক ভাষায় লেখা হয়েছিল। কী উদ্ভট কথা! যীশু, তাঁর শিষ্যগণ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের মাতৃভাষা এবং ধর্মীয় ভাষা ছিল হিব্রু। তবে সে সময়ে গ্রীকরা ফিলিস্তিন দখল করেছিল। ইয়াহূদীগণ বিজাতীয় ভাষা ঘৃণা করতেন এবং করেন। যীশু কি তাঁর নিজের ও জনগণের মাতৃভাষা ও ধর্মীয়ভাষা বাদ দিয়ে দখলদারদের অপরিচিত ও ঘৃণিত ভাষায় ইঞ্জিল প্রচার করতেন? যীশুর শিষ্যরা কি তাদের মাতৃভাষা ও ধর্মীয়ভাষা বাদ দিয়ে দখলদারদের ভাষায় ইঞ্জিল লিখবেন? কেউ যদি বলে রবীন্দ্র বা নজরুল সাহিত্য ইংরেজিতে রচিত তবে তাকে আপনি কী বলবেন?

বস্তুত এ সকল বেনামী ইঞ্জিলের লেখকগণ অ-ইয়াহূদী রোমান ছিলেন। তাঁরা হিব্রু ভাষা জানতেন না। যীশু হিব্রু ভাষায় ইস্রায়েল বংশের মানুষদের মধ্যে ইঞ্জিল প্রচার করেন। তিনি অ-হিব্রু বা অ-ইয়াহূদীদের কাছে ধর্ম প্রচার করতে নিষেধ করেন। সাধু পল দাবি করেন যে, যীশু তাকে পয়গম্বর বানিয়েছেন। ফিলিস্তিনের খৃস্টানগণ তাঁর দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তখন তিনি দাবি করেন যে, যীশু তাঁকে অ-ইস্রায়েলীয়দের জন্য পয়গম্বর বানিয়েছেন। এভাবে তিনি গ্রীকভাষী মানুষদের মধ্যে তার বানোয়াট ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। তিনি বারংবার বলেন, তাঁর নিজের ইঞ্জিল ছাড়া অন্য কোনো ইঞ্জিল, অর্থাৎ যীশুর ইঞ্জিল যদি কেউ প্রচার করে তবে সে অভিশপ্ত (গালাতীয় ১/৬, ৮-৯; ২-করিন্থীয় ১১/৪)। এভাবে ক্রমান্বয়ে তাঁর অনুসারী ত্রিত্ববাদী খৃস্টানগণ (Pauline Christaians) প্রাধান্য লাভ করে এবং একত্ববাদী হিব্রু খৃস্টানগণ (Judeo Christaians) কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ পর্যায়ে সাধু পলের অনুসারী গ্রীক-ভাষী খৃস্টানগণ যীশু খৃস্টের ১০০/১৫০ বৎসর পরে “পবিত্র সাধুদের নামে” নিজেদের মনগড়া ইঞ্জিল লিখতে থাকেন। তাঁরা সমাজে ঈসা মাসীহের নামে প্রচলিত সত্য, মিথ্যা ও নিজের মনগড়া কথা লিখে ‘অমুকের লেখা ইঞ্জিল’ নামে প্রচার করেন।