ইয়াহূদী-খৃস্টানরা কি কাফির? ইয়াহূদী-খৃস্টানরা কি কাফির? ইসলামহাউজ.কম
প্রশ্ন: জনৈক বক্তা-ওয়ায়েজ ইউরোপের এক মসজিদে বলেন, ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের কাফির বলা জায়েয নয়, খুব সম্ভব আপনারা জানেন, ইউরোপের মসজিদসমূহে যারা যাওয়া-আসা ও আলোচনা করেন, তাদের ইলমী পূঁজি খুব কম। আমরা আশঙ্কা করছি এ জাতীয় কথা সাধারণের ভিতর ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাই আপনাদের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা কামনা করি।

উত্তর: সন্দেহ নেই, ওয়ায়েজের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা কথা সুস্পষ্ট গোমরাহী, বরং কুফুরী বলাই শ্রেয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের কাফির বলেছেন। যেমন, তিনি বলেন,

﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ عُزَيۡرٌ ٱبۡنُ ٱللَّهِ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَى ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ ٱللَّهِۖ ذَٰلِكَ قَوۡلُهُم بِأَفۡوَٰهِهِمۡۖ يُضَٰهِ‍ُٔونَ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَبۡلُۚ قَٰتَلَهُمُ ٱللَّهُۖ أَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٣٠ ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُوٓاْ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗاۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۚ سُبۡحَٰنَهُۥ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٣١﴾ [التوبة: ٣٠، ٣١]

“আর ইয়াহূদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে, মাসীহ আল্লাহর পুত্র। এটা তাদের মুখের কথা, ইতঃপূর্বে যারা কুফুরী করেছে তারা সেসব লোকের মতোই কথা বলছে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন, কোথায় ফেরানো হচ্ছে এদেরকে? তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তা তিনি থেকে পবিত্র”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩০-৩১]

এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, ইয়াহূদী-খৃস্টানরা মুশরিক। অপর আয়াতে তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন,

﴿لَقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]

“অবশ্যই তারা কুফুরী করেছে, যারা বলে, নিশ্চয় মারইয়াম পুত্র মাসীহ-ই আল্লাহ”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]

অপর আয়াতে বলেন,

﴿لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ ثَالِثُ ثَلَٰثَةٖۘ﴾ [المائ‍دة: ٧٣]

“অবশ্যই তারা কুফুরী করেছে, যারা বলে, নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭৩]

অপর আয়াতে বলেন,

﴿لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ﴾ [المائ‍دة: ٧٨]

“বনু ইসরাইলের মধ্যে যারা কুফুরী করেছে তাদেরকে দাউদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখে লা‘নত করা হয়েছে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭৮]

অপর আয়াতে বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ وَٱلۡمُشۡرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآۚ﴾ [البينة: ٦]

“নিশ্চয় কিতাবিদের মধ্যে যারা কুফুরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে চিরদিন থাকবে”। [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ, আযাত: ৬]

এ জাতীয় অর্থ প্রকাশকারী আয়াত ও হাদীস অনেক রয়েছে। অতএব, যে ব্যক্তি ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের কুফুরীকে অস্বীকার করে, যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের উপর ঈমান আনে নি; বরং তাকে মিথ্যারোপ করেছে, সে মূলত আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর মিথ্যারোপ করে, আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করা কুফুরী, আর যে কেউ তাদের কুফুরীতে সন্দেহ পোষণ করে তার কুফুরীতে কোনো সন্দেহ নেই, সে স্পষ্ট কাফির।

সুবহানাল্লাহ, কীভাবে তার পক্ষে বলা সম্ভব হলো যে, ইয়াহূদী-খৃস্টানকে কাফির বলা জায়েয নয়, অথচ তাদের কথা এবং আকিদা-বিশ্বাস হচ্ছে: “আল্লাহ তিন সত্ত্বার এক সত্ত্বা”। যে কারণে তাদের স্রষ্টা তাদেরকে কাফির বলেছেন। আমাদের বিবেক মানে না, তাদেরকে কাফির বলা কেন তার মন সায় দিচ্ছে না কিংবা তার পছন্দ হচ্ছে না, অথচ তারা বলে: “মাসিহ আল্লাহর ছেলে”। আরও বলে: “আল্লাহর হাত আবদ্ধ”। আরও বলে: “আল্লাহ ফকির, আর আমরা ধনী”।

অবাক লাগে, তার নিকট কেন কঠিন ঠেকল ইয়াহূদী-খৃস্টানকে কাফির বলা এবং তাদের উপর কাফির শব্দ প্রয়োগ করা, অথচ তারা নিজেদের রবের ওপর এমন খারাপ বিশেষণ আরোপ করেছে, যার প্রত্যেকটি আল্লাহর দোষ, নিন্দা ও গাল-মন্দকে শামিল করে।

আমি উক্ত ওয়ায়েজকে দীনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আহ্বান জানাচ্ছি তাকে তাওবার প্রতি এবং তাকে অনুরোধ করছি, নিম্নের আয়াতটি পাঠ করুন:

﴿وَدُّواْ لَوۡ تُدۡهِنُ فَيُدۡهِنُونَ ٩﴾ [القلم: ٩]

“তারা চায়, যদি তুমি আপোষকামী হও, তবে তারাও আপোষকারী হবে”। [সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৯]

অতএব, কুফুরীর ক্ষেত্রে ইয়াহূদী-খৃস্টানদের সাথে আপোষ করবেন না, প্রত্যেকের সামনে তাদের কুফুরী স্পষ্ট করুন, স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিবে তারা কাফির, তারা চির জাহান্নামি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«والذي نفسي بيده، لا يسمع بي يهودي ولا نصراني من هذه الأمة- أي أمة الدعوة- ثم لا يتبع ما جئت به، أو قال لا يؤمن بما جئت به إلا كان من أصحاب النار».

“সে সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার নফস, এই উম্মত থেকে যে কেউ আমার সম্পর্কে শুনল ইয়াহূদী হোক বা নাসারা হোক, অতঃপর আমার আনিত দীনের অনুসরণ করল না, অথবা বলেছেন, আমার আনিত দীনের প্রতি ঈমান আনল না, সে অবশ্যই জাহান্নামী”। (সহীহ মুসলিম)

অতএব, ওয়ায়েজকে তার মারাত্মক মিথ্যা বক্তব্য থেকে আল্লাহর নিকট তাওবা করা জরুরি। তার জরুরি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা যে, তারা কাফির, জাহান্নামী এবং তাদের সবার ওপর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। কারণ, তিনিই ঈসা আলাইহিস সালামের সুসংবাদ, যা তাদের কিতাবে লিখিত আছে:

﴿ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যিনি উম্মী নবী, যার গুণাবলি তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃঙ্খল-যা তাদের উপরে ছিল, অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭]

ঈসা ইবন মারইয়াম বলেছেন, তার পক্ষ থেকে আল্লাহ যা ব্যক্ত করেছেন:

﴿ َٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُم مُّصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيَّ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَمُبَشِّرَۢا بِرَسُولٖ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِي ٱسۡمُهُۥٓ أَحۡمَدُۖ فَلَمَّا جَآءَهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ قَالُواْ هَٰذَا سِحۡرٞ مُّبِينٞ﴾ [الصف: ٦]

“হে বনু ইসরাইল, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ। অতঃপর সে যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল, ‘এটা-তো স্পষ্ট জাদু’।” [সূরা আস-সাফ, আয়াত: ৬]

আল্লাহ বলছেন: অতঃপর সে যখন তাদের নিকট অর্থাৎ বনু ইসরাইলের নিকট আসল, কে আসল...? কে এসেছেন তাদের নিকট...? যাকে আহমদ বলে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, তিনিই তো এসেছেন? যখন তাদের নিকট তিনি আসলেন, তাদের উচিৎ ছিল তাকে গ্রহণ করা, কিন্তু না, উল্টো তাকে প্রত্যাখ্যান করে বলল: “তিনি তো স্পষ্ট জাদুকর”। [সূরা আস-সাফ, আয়াত: ৬]

এ আয়াতের আলোকে আমরা সেসব খৃস্টানদের প্রতিবাদ করি, যারা বলে: যার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তিনি আহমদ, মুহাম্মদ নয়। আমরা তাদেরকে বলি, আল্লাহ বলেছেন: فلما جاءهم بالبينات (যখন তাদের নিকট স্পষ্ট দলিল নিয়ে আসল) অতএব, আমরা জানি তোমাদের নিকট ঈসার পর মুহাম্মদ ব্যতীত কোনো নবী আসেন নি।

বস্তুত যার নাম মুহাম্মদ, তিনিই আহমদ। আল্লাহ ঈসাকে অহী করেছেন মুহাম্মদকে আহমদ বলে সুসংবাদ দিতে। কারণأحمد ‘আহমদ’ حمد ‘হামদ’ ধাতু থেকে اسم تفضيل বা অগ্রাধিকার সূচক বিশেষণ, যার অর্থ তিনি আল্লাহর সবচেয়ে বেশি প্রশংসাকারী এবং মানুষের ভেতর গুণাগুণের বিচারে সবচেয়ে বেশি তিনিই প্রশংসিত। অতএব, তিনি সকল মানুষ থেকে আল্লাহর বেশি প্রশংসাকারী, যদি আমরা আহমদকে ইসমে ফায়েলের গ্রুপ (বাব) থেকে ইসমে তাফধিলের ক্রিয়া বা সিগা মানি। আবার তিনি মানুষের ভেতর বেশি প্রশংসিত, তার প্রশংসা সবচেয়ে বেশি করা উচিৎ, যদি আমরা আহমদকে ইসমে মাফউলের গ্রুপ (বাব) থেকে ইসমে তাফধিলের ক্রিয়া বা সিগা মানি। অতএব, তিনি পরিপূর্ণ ও সবচেয়ে সুন্দর বাক্য দ্বারা প্রশংসাকারী ও প্রশংসার উপযুক্ত, আহমদ নাম উভয় অর্থই প্রকাশ করে।

আমি আরেকটি বিষয় বলছি: যদি কেউ ধারণা করে দুনিয়ায় ইসলাম ব্যতীত এমন দীন আছে যার গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর নিকট রয়েছে সে কাফির, তার কুফুরীতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে বলেছেন:

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]

“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়, তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৮৫]

অপর আয়াতে তিনি বলেন:

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائ‍دة: ٣]

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নি‘আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে পছন্দ করলাম”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]

অতএব, আমি উক্ত ওয়ায়েজকে তৃতীয়বার বলছি, আল্লাহর নিকট তাওবা করুন এবং সকল মানুষকে জানিয়ে দিন যে, ইয়াহূদী ও খৃস্টানরা কাফির। তাদের নিকট আল্লাহর প্রমাণ ও নবীর রিসালাত পৌঁছে গেছে, তারা কুফুরীর ওপর রয়েছে শুধু গোঁড়ামি করে। একসময় ইয়াহূদীদেরকে মাগধুব আলাইহিম বা অভিশপ্ত বলা হত, কারণ তারা সত্য জেনে ত্যাগ করে ছিল, আর খৃস্টানদের বলা হত দাল্লুন বা পথভ্রষ্ট। কারণ, তারা সত্য অন্বেষণ করতে গিয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছে, কিন্তু বর্তমান যুগে তারা সবাই সত্য জানে ও তার পরিচয় লাভ করেছে, তবুও তার বিরোধিতা করছে, তাই বর্তমান যুগের ইয়াহূদী-খৃস্টান সবাই লা‘নতের উপযুক্ত। আমি ইয়াহূদী-খৃস্টানদের আহ্বান করছি, তারা যেন আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনে ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করে। কারণ, তাদের প্রতি এ নির্দেশ তাদের কিতাবেই রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِ‍َٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ ١٥٦ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ٱلَّذِي لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُۖ فَ‍َٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨﴾ [الاعراف: ١٥٦، ١٥٨]

“আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে। যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যিনি উম্মী নবী, যার গুণাবলি তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃঙ্খল-যা তাদের উপরে ছিল, অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম। বল, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তার প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তার বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়েত লাভ করবে”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬-১৫৮]