ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
সহজ ফিকহ শিক্ষা প্রথম অধ্যয়: ইবাদাত ইসলামহাউজ.কম
৮. জিহাদ

ক- জিহাদের পরিচিতি:

কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে সর্বাত্মক শক্তি ও প্রচেষ্টা ব্যয় করা।

খ- জিহাদ শরী‘আতসম্মত হওয়ার হিকতম:

জিহাদ ইসলামের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং সর্বোত্তম নফল ইবাদত। আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত অনেক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জিহাদ শরী‘আতসম্মত করেছেন:

১- আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করতে এবং দীন পুরোটাই যাতে আল্লাহর জন্য হয়।

২- মানবজাতির সুখ-শান্তি ও তাদেরকে যুলুম-নির্যাতন ও অন্ধকার থেকে উদ্ধার করে আলোর পথে নিয়ে আসতে।

৩- পৃথিবীতে সত্যকে বাস্তবায়ন করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে, বাতিলকে ধ্বংস করতে এবং যুলুম ও ফাসাদকে চিরতরে নিষেধ করতে।

৪- দীনকে প্রচার-প্রসার, মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা এবং শত্রুর ষড়যন্ত্রের দাতভাঙ্গা জবাব দিতে ইত্যাদি কারণে আল্লাহ জিহাদ শরী‘আতসম্মত করেছেন।

গ- জিহাদের হুকুম:

জিহাদ ফরযে কিফায়া। যখন একদল লোক জিহাদ করবে এবং তারা এ কাজে তারা যথেষ্ট হলে অন্যদের থেকে এ হুকুম রহিত হয়ে যাবে। তবে নিম্নোক্ত অবস্থায় জিহাদ সকলের ওপর ফরয হয়ে যায়:

১- যুদ্ধের কাতারে চলে আসলে।

২- কারও দেশ শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে।

৩- ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান যুদ্ধের জন্য আহ্বান করলে।

ঘ- জিহাদ ফযর হওয়ার শর্তাবলী:

ইসলাম, আকেল, বালিগ, পুরুষ, অসুস্থতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত থাকা এবং জিহাদে যাওয়ার খরচ থাকা।

ঙ- জিহাদের প্রকারভেদ:

জিহাদ চার প্রকার। সেগুলো হচ্ছে:

১- নফসের জিহাদ: নফসের জিহাদ হলো দীন শিক্ষা করে সে অনুযায়ী আমল করে মানুষকে দীনের পথে দাওয়াত দেওয়া এবং এ কাজে কষ্ট-ক্লেশ ও যুলুম নির্যাতন আসলে ধৈর্য ধারণ করা।

২- শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ: শয়তান বান্দাকে যেসব সন্দেহ-সংশয়, মনের প্রবৃত্তি ও ধোকায় ফেলে সেগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদ করা।

৩- কাফির ও মুনাফিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা: এ যুদ্ধ অন্তর, ভাষা, সম্পদ ও হাতে তথা শক্তির দ্বারা হয়।

৪- যালিম, বিদ‘আতী ও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জিহাদ: উত্তম জিহাদ হচ্ছে সক্ষম হলে হাত তথা শক্তির দ্বারা প্রতিহত করা। শক্তির দ্বারা সক্ষম না হলে জিহ্বা তথা মুখের ভাষা দ্বারা প্রতিহত করা এবং এতেও অক্ষম হলে অন্তরের দ্বারা জিহাদ করা।

চ- শহীদের মর্যাদা:

আল্লাহর কাছে শহীদের সাতটি মর্যাদা রয়েছে। তা হলো: তার প্রথম ফোটা রক্ত জমিনে পড়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন, সে নিজের অবস্থান জান্নাতে দেখতে পায়, কবরের আযাব থেকে রক্ষা পায়, কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ থাকে, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করে, তাকে ডাগর চক্ষু হুর বিবাহ করানো হবে এবং তার আত্মীয়-স্বজন থেকে সত্তরজনকে শাফা‘আত করতে পারবে।

ছ- যুদ্ধের আদবসমূহ:

ইসলামে যুদ্ধের শিষ্টাচারসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো ধোকাবাজি না করা, নারী ও শিশু যুদ্ধে লিপ্ত না হলে তাদেরকে হত্যা না করা, অহমিকা ও প্রতারণা থেকে দূরে থাকা, শত্রুর সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্খা না করা, আল্লাহর কাছে বিজয় ও সাহায্যের প্রার্থনা করা। যেমন, এ দো‘আ পড়া,

«اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الأَحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ»

“হে আল্লাহ আল-কুরআন অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, শত্রুদলসমূহের পরাভূতকারী, আপনি শত্রুদের পরাভূত করে আমাদেরকে তাদের উপর জয়ী করুন।”[1]

যুদ্ধের ময়দান থেকে দু’অবস্থায় পশ্চাদপসরণ করা যাবে:

প্রথমত: যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করতে।

দ্বিতীয়ত: নিজের দলের সাথে যোগ দিতে।

জ- যুদ্ধবন্দি:

১- নারী ও শিশুকে যুদ্ধদাস বানানো হবে।

২- যোদ্ধাপুরুষকে যুদ্ধের পরিচালক হয়ত মুক্ত করে দিবেন বা মুক্তিপণ নিয়ে মুক্ত করবেন বা হত্যা করবেন।

[যোদ্ধাদের প্রতি আমীরের কর্তব্য:]

যুদ্ধে পাঠানোর আগে ইমাম তার সৈন্যবাহিনীকে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিবেন, নিরাশ, বিপদকালে ধোকাকারী ও গুজব রটনাকারীকে যুদ্ধে যেতে বারণ করবেন, অতিপ্রয়োজন ব্যতিত কাফিরের থেকে সাহায্য চাইবে না, যুদ্ধের রসদ সামগ্রী যোগাড় করে দিবেন, তিনি তার সৈন্যবাহিনীর ধীর-স্থিরভাবে চালাবেন, তাদের জন্য সুন্দর জায়গা নির্বাচন করবেন, সেনাবাহিনীকে ঝগড়া ফাসাদ ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিবেন, তাদের মন মানসিকতা চাঙ্গা ও শক্তিশালী হয় এমন কথা বলবেন, তাদেরকে শহীদের মর্যাদার ফযীলত বর্ণনা করে উৎসাহিত করবেন, ধৈর্যের আদেশ দিবেন, সৈন্যবাহিনীকে কয়েকটি দলে ভাগ করবেন, তাদের জন্য মনিটর ও পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, শত্রুর খোঁজ খবর নিতে গুপ্তচর পাঠাবেন, সৈন্যদের প্রয়োজন অনুসারে যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে আনফাল তথা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ বণ্টন করবেন এবং জিহাদের বিষয়ে দীন সম্পর্কে অভিজ্ঞ লোকদের সাথে পরামর্শ করবেন।

আমিরের প্রতি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য:সৈন্যবাহিনীর ওপর ফরয হলো ইমাম তথা আমিরের আনুগত্য করা, তার সাথে ধৈর্যসহকারে থাকা, আমিরের অনুমতি ব্যতিত যুদ্ধ না করা; তবে হঠাৎ করে শত্রু আক্রমণ করলে তাদের দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা করলে সেক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু করা যাবে, শত্রুরা সন্ধি করতে চাইলে বা তারা হারাম মাসে থাকলে মুসলিমগণের উচিৎ তাদের সাথে চুক্তি করা।

>
[1] সহীহ বুখারী, কিতাবুল জিহাদ ওয়াসসাইর, হাদীস নং ২৯৬৬; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস-সিয়ার, হাদীস নং ১৭৪২।