ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) রহিতকরণ (النسخ) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
প্রকারভেদ

النسخ তিন প্রকার। যথা:

প্রথম প্রকার: হুকুম মানসুখ-রহিত হয় কিন্তু তার শব্দ বহাল থাকে। কুরআনের এ ধরণের نسخ বেশী। এর উদাহরণ হলো: ايتا المصابرة বা ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করা সম্পর্কিত আয়াতদ্বয়। আয়াত দু’টি হলো:

إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ

‘‘যদি তোমাদের মাঝে বিশ জন ধৈর্যশীল মুজাহিদ থাকে, তবে তারা দু’শত জনের মোকাবেলায় জয়ী হবে (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৬)।’’

অত্র আয়াতের হুকুম নিচের আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে।

الْآَنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِئَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ

‘‘এখন আল্লাহ তোমাদের উপর বোঝা হালকা করে দিয়েছেন। আর তিনি জানেন যে, নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। এতএব, তোমাদের মাঝে একশত জন মুজাহিদ থাকলে, তারা দু’শত জনের মোকাবেলায় জয়ী হবে (সূরা আল-আনফাল ৮:৬৬)।’’

শব্দ রহিত না করে হুকুম রহিত করার হিকমত হলো: তিলাওয়াতের ছাওয়াব অবশিষ্ট রাখা এবং জাতীকে نسخ এর হিকমত-তাৎপর্য স্মরণ করিয়ে দেয়া।

দ্বিতীয় প্রকার: শব্দ রহিত হয়, তবে হুকুম বহাল থাকে।

যেমন: রজম (বিবাহিত ব্যভিচারী নর-নারীকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করা) বিষয়ক সংশ্লিষ্ট আয়াত। ছহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের সূত্রে প্রমাণিত যে, উমার (রা.) বলেন, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তন্মধ্যে রজম সংশ্লিষ্ট আয়াত ছিলো। আমরা সেই আয়াত পড়েছি, বুঝেছি ও মুখস্থ করেছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে অনুযায়ী রজম করেছেন। পরবর্তীতে আমরাও রজম করেছি।

উপরন্তু আমার আশংকা হয়, দীর্ঘ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ হয়তো বলবে, ‘আলাহর কসম আমরা তো কুরআনে রজমের আয়াত পাচ্ছি না!’ ফলে আল্লাহর নাযিলকৃত একটি ফরয বর্জন করার কারণে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহর কিতাবে রজম যথার্থ সে সব নারী-পুরুষের জন্য, যারা বিবাহিত হওয়ার পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা গর্ভবতী হয় অথবা স্বীকার করে।

হুকুম রহিত না করে শব্দ রহিত করার হিকমত-তাৎপর্য হলো যে আমলের শব্দ কুরআনে পাওয়া যায় না, তদানুযায়ী আমল করার ক্ষেত্রে উম্মাহকে পরীক্ষা করা এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, সে বিষয়ে তাদের ঈমান যাচাই করা। এক্ষেত্রে ইহুদিদের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, তারা তাওরাতে রজম সংশ্লিষ্ট نص কে গোপন করার চেষ্টা করেছিলো।

তৃতীয় প্রকার: শব্দ ও হুকুম উভয়টি রহিত হওয়া। যেমন: দশ চোষণ সম্পর্কিত আয়েশা (রা.) বর্ণিত পূর্বের হাদীছটির ‘রহিতকরণ’।


ناسخ বা রহিতকারী দলীলের দিক দিয়ে النسخ চার প্রকার। যথা:

প্রথম প্রকার: কুরআন দ্বারা কুরআন রহিত হওয়া। এর উদাহণ হলো ধৈর্যের সাথে কাফেরদের মোকাবেলা সম্পর্কিত আয়াতদ্বয়।[1]

দ্বিতীয় প্রকার: হাদীছ দ্বারা কুরআন রহিত হওয়া। আমি এর স্বপক্ষে ক্রটিমুক্ত কোন দলীল পাইনি।

তৃতীয় প্রকার: কুরআন দ্বারা হাদীছ রহিত হওয়া। উদাহরণ হলো হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে ছ্বলাত আদায় করার বিধান আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর দ্বারা সাব্যস্ত কা‘বার দিকে মুখ করে ছ্বলাত আদায় করার বিষয়ের মাধ্যমে রহিতকরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُمَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ

‘‘এখন আপনি মাসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর (সূরা আল-বাক্বারা ২:১৪৪)।’’

চতুর্থ প্রকার: এক হাদীছ দ্বারা অপর হাদীছ রহিত করা। এর দৃষ্টান্ত হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:

كنت نهيتكم عن النبيذ في الأوعية فاشربوا فيما شئتم ولا تشربوا مسكرا

‘‘আমি তোমাদেরকে পানির পাত্রে নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে কোন নাবীয তৈরী করে তা পান করতে পারো। তবে নেশা দ্রব্য কোন কিছু পান করবে না।’’[2]

[1]. সূরা আনফাল ৮: ৬৫-৬৬

[2]. ছহীহ মুসলিম/৯৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নং ২১২৯, মুসনাদে আহমাদ (৩/২৩৭/১৩৫১২), আবু ইয়ালা (৬/৩৭৩/৩৭০৭), আল্লামা হায়সামী তার ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ (৫/৬৬) গ্রন্থে বলেন, এ হাদীছের সনদে ইয়াহইয়া বিন আব্দুল্লাহ আল জাবির রয়েছে। তাকে অধিকাংশ বিদ্বান দুর্বল বলেছেন। ইমাম আহমাদ বলেন, তার কোন সমস্যা নেই। সনদের অন্যান্য রাবী নির্ভরযোগ্য।