ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত সপ্তম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
মিনায় রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে প্রত্যাবর্তন এবং জামরাগুলোতে পাথর মারা

হাজীগণ ঈদের দিন তাওয়াফ ও সাঈ করার পরে মিনায় ফিরে আসবে। অতঃপর সেখানে ঈদের দিনের অবশিষ্ট অংশ এবং তাশ্রীকের দিন-রাত্রিগুলি (১১, ১২ ও ১৩ যিলহাজ্জ) পর্যন্ত অবস্থান করবে। কারণ, নাবী (সা.) এ দিন ও রাতগুলি এখানেই অবস্থান করেছেন। তবে মিনায় এগারো, বারো তারীখের রাত এবং বিলম্ব করতে চাইলে তেরো তারীখের রাতও যাপন করা ওয়াজিব।

কারণ, নাবী (সা.) এ রাতগুলি মিনায় যাপন করেছেন এবং তিনি আমাদেরকে এ বলে নির্দেশ প্রদান করেছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হাজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[1]

আর এমন কোন ওজর যা হাজ্জ বা হাজীদের সাথে সর্ম্পকিত হলে মিনার বাইরে রাত কাটানো জায়েয।

কারণ, আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত যে, আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব নাবী (সা.)-এর নিকট হাজীদেরকে যমযমের পানি পান করাবার উদ্দেশ্যে মিনার রাতগুলি মক্কায় যাপনের জন্য অনুমতি চাইলেন, তখন নাবী (সা.) তাঁকে এর অনুমতি দিলেন।[2]

আসিম বিন আদী (রা.) হতে বর্ণিত, রসূল (সা.) উঁটের রাখালদেরকে মিনার বাইরে রাত কাটাবার অনুমতি দিয়েছেন।[3]

আর তাশরীকের দিনগুলিতে (১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ) প্রত্যেক দিন মাথার উপর থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিনটি জামরাকে পরস্পর সাতটি করে পাথর মারবে।

আর প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে।

সর্বপ্রথম মসজিদে খায়্ফের দিকে অবস্থিত প্রথম জামরাকে পাথর মারবে, অতঃপর সামনে এগিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ হস্তদ্বয় তুলে দু‘আ করবে।

তারপর মধ্য জামরাকে পাথর মারবে অতঃপর বাম দিকে এগিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ হস্তদ্বয় তুলে দু‘আ করবে।

তারপর জামরা আক্বাবায় পাথর মেরে সেখান থেকে ফিরে আসবে। সেখানে দু‘আ করবে না। এভাবে ইমাম বুখারী (রহঃ) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সা.) এরকমই করতেন।[4]

আর যদি জামরাতগুলিতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দু‘আ করা সম্ভব না হয় তাহলে যতক্ষণ সম্ভব দাঁড়িয়ে দু‘আ করবে, যাতে করে এই সুন্নাতকে জীবিত করা হয় যা অধিকাংশ লোকেরা হয় অজ্ঞতা বশতঃ বা এ সুন্নাতকে অবহেলা করে পরিত্যাগ করেছে। অতএব এই সুন্নাত বিনষ্ট করা উচিৎ নয়। আর মনে রাখবেন যখনই কোন সুন্নাত উঠে যায় তখন সুন্নাতের প্রতি আমলের ফযীলত হাসিল করা এবং জনসাধারণের মাঝে তার প্রসার ও প্রচার করার উদ্দেশ্যে তার প্রতি আমল করার গুরুত্ব বেড়ে যায়।

আর তাশরীকের দিনগুলিতে (১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ) সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়। কারণ, নাবী (সা.) পশ্চিমে সূর্য ঢলার পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করেননি। আর তিনি একথাও বলেছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[5]

আর জাবির Description: 2.wmfহতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সা.) কুরবানীর দিন সকাল বেলা জামরায় পাথর মারেন। কিন্তু তার পরের দিনগুলিতে সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলে যাওয়ার পরে পাথর মারেন।[6]

আর সাহাবীগণ অনুরূপ আমল করতেন। যেমন আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.)-কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, আমি কখন পাথর মারব? তিনি উত্তরে বলেন: আমরা অপেক্ষা করতে থাকতাম, অতঃপর সূর্য ঢলে পড়লে আমরা পাথর মারতাম।[7]

আর বারই যিলহাজ্জ জামরাগুলিকে পাথর মারা হলেই হাজ্জের ওয়াজিব কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়। তারপর ইচ্ছা হলে মিনায় তেরো যিলহাজ্জ পর্যন্ত অবস্থান করবে এবং সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জামরাগুলিকে পাথর মারবে। আর মন চাইলে মিনা থেকে বারই যিলহাজ্জ জামরাগুলিকে পাথর মেরেই বেরিয়ে পড়বে। এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:

فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى

অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করে দু’দিনে চলে যায় তার প্রতি কোন গুনাহ্ নেই এবং যে ব্যক্তি অধিক সময় পর্যন্ত বিলম্ব করবে, তার প্রতিও গুনাহ্ নেই, এটা তার জন্য যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে।[8]

তবে বিলম্ব করা উত্তম। কারণ, ইহা নাবী (সা.)-এর আমল। এ ছাড়া এতে নেক আমলও বেশী হবে, যেহেতু তেরই যিলহাজ্জ মিনায় রাত্রী যাপন করা এবং সে দিনের কংকর মারাও হবে।

তবে যদি বারই যিলহাজ্জ মিনা থেকে রওনা হওয়ার পূর্বে সর্য অস্ত হয়ে যায় তাহলে সেদিন আর মিনা থেকে বের হতে পারবে না। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন:

﴿فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ﴾

অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করে দু’দিনে চলে যায় তার প্রতি কোন গুনাহ্ নেই।[9]

মহান আল্লাহ এ আয়াতে দুই দিনের কথা বলেছেন, তাই দুই দিন পেরিয়ে গেলেই তাড়াতাড়ি করে মিনা থেকে চলে যাওয়ার সময় শেষ হয়ে যায়। আর ইহা সর্বজন বিদিত যে, সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথেই প্রতিটি দিন শেষ হয়ে যায়।

এছাড়া ইমাম মালিক (রহঃ)-এর সংকলিত মুআত্তা নামক হাদীস গ্রন্থে তাবেঈ নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ্ বিন উমার (রা.) বলতেন: যে ব্যক্তির তাশরীকের মধ্য দিবসে (বারই যিলহাজ্জ) মিনায় অবস্থানকালে সূর্য অস্ত হয়ে যায় সে আগামি দিনের (তেরই যিলহাজ্জ) জামরাতগুলিতে পাথর না মেরে বিদায় হতে পারবে না। কিন্তু যদি কোন হাজীর অনিচ্ছিাকৃত সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত মিনায় বিলম্ব হয়ে যায়; যেমন, মিনা হতে বের হওয়ার জন্য সে ব্যক্তিগতভাবে প্রস্ত্তত কিন্তু গাড়ীর ভীড়ের কারণে বা এধরণের যে কোন কারণে মিনা থেকে বের হতে বিলম্ব হয়ে গেল, এমতাবস্থায় মিনা থেকে বের হওয়ার পূর্বে সূর্য অস্ত গেলেও সেখান থেকে রওনা হয়ে যাবে, এতে কোন দোষ নেই।

>
[1] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭।

[2]. সহীহ বুখারী ১৭৪৫, সহীহ মুসলিম ১৩১৫।

[3]. সহীহ: মুসনাদে আহমাদ ২৩৭৭৫, আবূ দাউদ ১৯৭৫, তিরমিযী ৯৫৫ ও ইবনু মাজাহ ৩০৩৭।

[4]. সহীহ বুখারী ১৭৫৩।

[5]. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭।

[6]. সহীহ বুখারী ১৭৪৬, সহীহ মুসলিম ১২৯৯।

[7]. সহীহ বুখারী ১৭৪৬।

[8] সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ২০৩

[9] সূরা আল-বাক্বারা ২:২০৩