ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী মূলনীতি ১। দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ণতা (كمال دين الإسلام) মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী
চ. দ্বীন ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার কতিপয় দিক (مظاهر الكمال في دين الإسلام)

ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা), যা জীবনের সার্বিক দিক অন্তর্ভুক্ত করে এবং সব ধরণের প্রয়োজন পূরণ করে:

১। এটা এমন সত্য দ্বীন, যা ইবাদত, একত্ববাদ, সম্মান প্রদর্শন, আনুগত্য করণ, শুকরিয়া জ্ঞাপনসহ মানুষের সকল বিষয়ে তার প্রভূর দিকে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ককে সুবিন্যস্ত করে।

২। এটা এমন দ্বীন যা আল্লাহর প্রতি ঈমান, ভালবাসা, ভরসা, ভয়ভীতি, আশা, সাহায্য কামনা, তার মুখাপেক্ষী হওয়া এবং তার জন্য বিনম্র হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে অন্তরকে পরিপূর্ণ করে দেয়।

৩। ইসলাম এমন জীবন ব্যবস্থা, যা বিবেকের সামনে আল্লাহকে তার নাম ও গুণাবলিসহ চেনা, মানুষের নিজেকে চেনা, দুনিয়া ও আখেরাত সম্পর্কে জানা, শরী‘আতের নানা বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং তদনুযায়ী আমল করার দরজা উম্মুক্ত করে দেয়।আখেরা

৪। ইসলাম রাসূলগণের সাথে মানুষের সম্পর্ককে সুবিন্যস্ত করে এবং তাদের অনুসরণের জন্য মানুষকে আহবান করে। ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মানুষের সম্পর্ককেও সুবিন্যস্ত করে। ফলে, ইসলাম রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসা, তার আনুগত্য করা, তাকে শ্রদ্ধা করা, তার সুন্নাতের অনুসরণ করা, তিনি যা নিয়ে এসেছেন তার সত্যায়ন করা, তার অনুসরণ করা এবং শরী‘আত তার নির্দেশিত পদ্ধতি ছাড়া ভিন্ন পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত না করার প্রতি মানুষকে নির্দেশ দেয়।

৫। ইসলাম মুসলিম-কাফের, শাসক-প্রজা, জ্ঞানী-মূর্খ, ধনী-গরীব, শত্রু-মিত্র, আত্মীয়-অনাত্মীয় ইত্যাদি শ্রেণীর মানুষের সাথে সম্পর্ককেও সুশৃঙ্খলিত করে এবং এর উপর অনেক নেকী দান করে।

৬। হালাল উপার্জন, হারাম বর্জন এবং ঠগবাজি ও ধোঁকাবাজি না করার মাধ্যমে ইসলাম মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেনকে সুশৃঙ্খলিত করে। ক্রয়-বিক্রয়, উত্তম ও কল্যাণকর কাজে ব্যয়, সর্বদা সত্য অনুসন্ধান এবং মিথ্যা ও সূদ বর্জনের ক্ষেত্রে মহানুভবতার দিকে আহবান জানায়। সাথে সাথে দান-ছাদাকা ও মীরাছ বণ্টনের পদ্ধতি বর্ণনা করে।

৭। সুখ-দুঃখ, স্বচ্ছলতা-অস্বচ্ছলতা, সুস্থতা-অসুস্থতা, সফর-ইক্বামাত, নিরাপত্তা-ভয়ভীতি সর্বাবস্থায় ইসলাম নারী-পুরুষের জীবনকে শৃঙ্খলিত করে। সদাচরণ ও ন্যায়, সুন্দরভাবে সন্তান প্রতিপালন, ফাসাদ থেকে পরিবার রক্ষা এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সদাচার বজায় রাখার মাধ্যমে মানুষের বৈবাহিক জীবনকেও ইসলাম সুশৃঙ্খলিত করে। আর এগুলোর মহা প্রতিদান দেয়।

৮। আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও শত্রুতা পোষণ করার মত সৎ চরিত্রসহ নানা শক্ত সেতুর উপর প্রতিষ্ঠিত সকল সম্পর্ককে ইসলাম সুশৃঙ্খলিত করে। ইসলাম সম্মান-বদান্যতা, ক্ষমা-মার্জনা, সহনশীলতা-লজ্জাশীলতা, সত্যবাদিতা-উদারতা, ন্যায়পরায়ণতা-উত্তম ব্যবহার, দয়া-সহানুভূতি, নরম-কোমল আচরণ ইত্যাদির মত নানা উত্তম চরিত্র ও সুন্দর গুণাবলীর দিকে আহবান করে। আর এগুলোর উত্তম প্রতিদান দেয়।

৯। ইসলাম জীবনধারাকে সুশৃঙ্খলিত করে যাবতীয় কল্যাণের আদেশ এবং যাবতীয় অকল্যাণ, যুলম-অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি থেকে নিষেধের মাধ্যমে। যেমন- আল্লাহর সাথে শিরক, অন্যায়ভাবে হত্যা, ব্যভিচার, মিথ্যা, অহংকার, কপটতা, প্রতারণা, অপকৌশল, ষড়যন্ত্র, হিংসা, শত্রুতা, গীবত, চোগলখোরি, চুরি, ছিনতাই, যাদু, মদপান, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ ইত্যাদি নানা অশ্লীলতা, হারাম কাজ ও কাবীরা গুনাহ, যেগুলি ব্যক্তি ও সমাজকে নষ্ট করে ফেলে। আর এগুলোর এমন সাজা প্রয়োগ করে, যদ্বারা যুলম বিদূরিত হয়।

১০। এসব কিছুর পরে ইসলাম মানুষের পরকালীন জীবনকে সুশৃঙ্খলিত করে এবং ইহকালীন জীবনের উপর পরকালীন জীবনের ভিত্তি রচনা করে। তাই, যে ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে, সে দুনিয়াতে ভাগ্যবান হবে এবং আখেরাতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের উত্তম কাজের প্রতিদান দশ থেকে সাতশতগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন এবং মন্দ বিষয়ের খারাপ প্রতিদান অনুরূপই দান করেন।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ (15) يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ (16)) ... [المائدة: 15 - 16]

‘অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর দ্বারা যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তিনি তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেন (সূরা আল-মায়িদা: ১৫-১৬)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَاوَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (13) وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ (14)) ... [النساء: 13 - 14]

‘আর যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যেগুলির তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমালঙ্ঘন করে, আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব’ (সূরা আন-নিসা: ১৩-১৪)।