ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ৩৯. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ অবিশ্বাস করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ অবিশ্বাস করা।

আল্লাহ তা‘আলার নাম সমূহ অবিশ্বাস করার ব্যাপারে তিনি বলেন,

(وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَنِ)

তারা রহমানকে অস্বীকার করে (সূরা রা‘দ ১৩:৩০)।

.....................................

ব্যাখ্যা: জাহিলরা আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী ও তার নাম সমূহকে অবিশ্বাস করে। তাই এগুলোকে তারা প্রত্যাখ্যান করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَنِ)

তারা রহমানকে অস্বীকার করে (সূরা রা‘দ ১৩:৩০)।

(الرحمن) আর-রহমান শব্দটি আল্লাহ তা‘আলার নাম সমূহের একটি।

أن الرسول صلى الله عليه وسلم لمّا أراد أن يكتب الصلح بينه وبين المشركين في الحديبية، فجاء سهيل بن عمرو، فقال: هات اكتب بيننا وبينكم كتاباً. فدعا النبي صلى الله عليه وسلم الكاتب، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: "بسم الله الرحمن الرحيم"، قال سهيل : أما الرحمن فوالله ما أدري ما هو

এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের সাথে হুদাইবিয়ার সন্ধি লিখতে চাইলে সুহাইল ইবনে আমর এসে বললো, আসেন আমরা উভয়ের মাঝে একটি সন্ধিনামা লেখি। অতঃপর লেখককে ডেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "بسم الله الرحمن الرحيم" লিখতে বললেন, সুহাইল বললো, আল্লাহর কসম! ‘রহমান’ কে আমি তা জানি না।[1]

তারা বললো, ইয়ামামার রহমান অর্থাৎ মুসাইলামাহ ছাড়া আমরা কোন রহমানকে চিনি না। কেননা, মুসাইলামাকে রহমান নামে ডাকা হতো। এমর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(كَذَلِكَ أَرْسَلْنَاكَ فِي أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهَا أُمَمٌ لِتَتْلُوَ عَلَيْهِمُ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَنِ قُلْ هُوَ رَبِّي لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ) [الرعد:30]

এমনিভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির নিকট, যার পূর্বে অনেক জাতি গত হয়েছে, যেন আমি তোমার প্রতি যে ওহী প্রেরণ করেছি, তা তাদের নিকট তিলাওয়াত কর। অথচ তারা রহমানকে অস্বীকার করে। বল, তিনি আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই, তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই দিকে আমার প্রত্যাবর্তন (সূরা রা‘দ ১৩:৩০)।

এমনিভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ছ্বলাত আদায় করতেন আর (يا ألله) হে আল্লাহ! (يا رحمن) হে দয়াময়! এভাবে আল্লাহকে ডাকতেন। আর মুশরিকরা বলতো, এ লোকের দিকে খেয়াল কর, মনে হয় সে এক উপাস্যের ইবাদত করে। অথচ সে (يا ألله) হে আল্লাহ! (يا رحمن) হে দয়াময়! বলে ডাকে, এতে দু’ উপাস্যের ইবাদত করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيّاً مَا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ) [الإسراء: 110]

বল, ‘তোমরা ‘(তোমাদের রবকে) আল্লাহ’ নামে ডাক অথবা ‘রাহমান’ নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তার জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:১১০)।

আল্লাহ তা‘আলার অনেক নাম রয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ তা প্রমাণিত নয়। আল্লাহর নামগুলো মহানত্বের ভিত্তিতে করা হয়েছে।

মোদ্দাকথা, মুশরিকরা আল্লাহর নাম সমূহকে অস্বীকার করে। ভ্রষ্ট দলের মধ্যে জাহমিয়ারা (الجهمية) আল্লাহর নাম সমূহকে প্রত্যাখ্যান করে অথবা মু’তাযিলারা (المعتزلة) নামের অর্থ প্রত্যাখ্যান করে এবং নামের শব্দগুলোকে সমর্থন করে অথবা আশআ‘রী (الأشاعرة) সম্প্রদায় কতিপয় গুণকে অস্বীকার করে এবং কতিপয়কে সমর্থন করে। জাহিলদের উত্তরাধিকারী হওয়ার কারণে তারা এসব করে অথচ আল্লাহ তা‘আলা তার নামসমূহকে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا) [لأعراف: 180]

আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক (সূরা আরাফ ৭:১৮০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(اللَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى)

আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই (সূরা ত্বা-হা ২০:৮)। তিনি আরোও বলেন,

(لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى)

সুন্দর নামসমূহ তাঁরই (সূরা ত্বা-হা ২০:৮)।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

"أسألك بكل اسم هو لك، سميت به نفسك، أو علمته أحداً من خلقك، أو أنزلته في كتابك، أو استأثرت به" في علم الغيب عندك

আমি তোমার প্রত্যেক নামের মাধ্যমে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। যে নাম তুমি নিজেই রেখেছ অথবা সৃষ্টির কাউকে তা শিক্ষা দিয়েছে অথবা তোমার কিতাবে ঐ নাম সমূহ বর্ণনা করেছ অথবা যে নামের মাধ্যমে তোমার অদৃশ্য জ্ঞানের কর্তৃত্ব রয়েছে।[2]

সুতরাং জানা গেল মহান আল্লাহর অনেক নাম রয়েছে। পবিত্র কুরআনে তার অনেক নাম তিনি বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে الرحمن، الرحيم، العزيز، الحكيم، الرؤوف، التواب، الغفار ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সূরা হাশরের শেষে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(هُوَ اللَّهُ الَّذِي لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى) [الحشر: 22،24]

তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতিত কোন ইলাহ নেই; দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্ঞাতা; তিনিই পরম করণাময়, দয়ালু। তিনিই আল্লাহ; যিনি ব্যতিত কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরিক করে তা হতে পবিত্র মহান। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তার রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; (সূরা হাশর ৫৯:২২-২৪)।

আল্লাহ তা‘আলার নাম সমূহের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছ্বহীহ হাদীছে বলেন,

إن لله تسعة وتسعين اسماً، من أحصاها دخل الجنة

আল্লাহ তা‘আলার নিরানববইটি নাম রয়েছে, যে তা মুখস্থ করবে সে জান্নাত লাভ করবে।[3]
আল্লাহ তা‘আলার নাম সমূহের অনেক দলীল-প্রমাণ রয়েছে। যে আল্লাহর নাম বিশ্বাস করে না সে আল্লাহকেও বিশ্বাস করে না।

>
[1]. ছ্বহীহ বুখারী ২৭৩১-২৭৩২।

[2]. ছ্বহীহ: মুসনাদ আহমাদ, ১/৩৯১ হাকীম, হা/১৯২০; ছ্বহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯৬৮।

[3]. ছ্বহীহ বুখারী, হা/২৭৩৬, ছ্বহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৭।