ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ১৭. নাবী-রসূলগণের দিকে বাতিল সম্বন্ধিত করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
নাবী-রসূলগণের দিকে বাতিল সম্বন্ধিত করা

নাবীগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। আল্লাহর বাণী:

(وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ) [البقرة: 102]

সূলাইমান কুফরী করেনি (সূরা বাক্বারাহ ২:১০২)। আল্লাহর বাণী:

(مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيّاً وَلا نَصْرَانِيّاً) [آل عمران: 67]

ইব্রাহীম ইহুদীও ছিল না, নাসারাও ছিল না (সূরা আলে-ইমরান ৩:৬৮)।

ব্যাখ্যা: জাহিলী পদ্ধতি: জাহিলরা নাবীগণকে কুফরী ও ভ্রষ্টতার সাথে সম্পৃক্ত করে। যেমনভাবে ইয়াহুদীরা সুলাইমান আলাইহিস সালাম কে যাদু কর্মের সাথে সম্পৃক্ত করে। তারা বলতো যাদু করা সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর কর্ম। (তাদের ধারণা) যাদুর মাধ্যমে সে জিন ও শয়তানকে বশ করে। জাহিলরা জানে না যে, শয়তান আল্লাহরই সৃষ্টি। আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে চান জিন শয়তানকে অধীন করেন। আর মহান আল্লাহ জিন শয়তানকে সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর জন্য বশীভূত করেন। তাই ঐ সব ইয়াহুদীরা সুলাইমান আলাইহিস সালাম কে যাদুর সাথে সম্পৃক্ত করে। মানুষের মাঝে যাদু কর্ম হালাল বলে প্রচার করে, কেননা তা নাবীগণের কর্ম মনে করতো।

অনুরূপভাবে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা একনিষ্ঠদের নেতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে কুফরীর সাথে সম্পৃক্ত করে। তারা যে কুফরীর উপর আছে তার সাথে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে সম্পৃক্ত করে বলে, এটা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর দীন। আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত বাণীর মাধ্যমে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

(مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيّاً وَلا نَصْرَانِيّاً وَلَكِنْ كَانَ حَنِيفاً مُسْلِماً وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ) [آل عمران:67]

ইব্রাহীম ইহুদীও ছিল না, নাসারাও ছিল না। বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না (সূরা আলে-ইমরান ৩:৬৭)।

একত্বই হলো ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর দীন। তিনি শিরক ও মুশরিক হতে মুক্ত ছিলেন। ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা যে কর্ম পদ্ধতির উপর অটল ছিল, তিনি তার বিরোধিতা করেন।

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর অনেক যুগ পরে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের উদ্ভব ঘটে। তাহলে কিভাবে তাকে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান বলে সম্পৃক্ত করা হয়?! এটাতো কেবল জঘন্য মিথ্যা। ইতিহাস তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। কেননা ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মাঝে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার পর মূসা আলাইহিস সালাম এর উপর তাওরাত ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর উপর ইনজিল নাযিল হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تُحَاجُّونَ فِي إِبْرَاهِيمَ وَمَا أُنْزِلَتِ التَّوْرَاةُ وَالْأِنْجِيلُ إِلَّا مِنْ بَعْدِهِ أَفَلا تَعْقِلُونَ) [آل عمران:65] . [كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلاًّ لِبَنِي إِسْرائيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرائيلُ عَلَى نَفْسِهِ مِنْ قَبْلِ أَنْ تُنَزَّلَ التَّوْرَاةُ قُلْ فَأْتُوا بِالتَّوْرَاةِ) [آل عمران: 93]

হে কিতাবীগণ, তোমরা ইব্রাহীমের ব্যাপারে কেন বিতর্ক কর? অথচ তাওরাত ও ইঞ্জীল তো তার পরই অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমরা কি বুঝবে না? সকল খাবার বনী ইসরাঈলের জন্য হালাল ছিল। তবে ইসরাঈল তার নিজের উপর যা হারাম করেছিল তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে। বল, তাহলে তোমরা তাওরাত নিয়ে আস, অতঃপর তা তিলাওয়াত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও (সূরা আলে-ইমরান ৩: ৬৫,৯৩)।

অনুরূপভাবে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উম্মাতে মুহাম্মাদীর মাঝে জাল-মিথ্যা হাদীছ প্রচারের মাধ্যমে মিথ্যুকরা নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বাতিলের সাথে সম্পৃক্ত করে। আর এমনিভাবে কতিপয় উম্মত ইমামদের আক্বীদার বিরোধিতায় তাদেরকে বাতিলের সাথে সম্পৃক্ত করে। অতঃপর ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে মু‘তাযিলা (المعتزلة) ও আশ‘আরী (الأشاعرة) আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত করে। এসকল সালাফী ইমামদেরকে জাহিলরা বাতিল আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত করে অথচ ঐ সকল ইমাম মু’তাযিলা ছিলেন না। বরং তারা মু’তাযিলা ও কালাম শাস্ত্র (যুক্তিবিদ্যা) এর আলেমদের বিরোধিতা করতেন।