ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ৫ - আল্লাহ তাআলার জন্য ইচ্ছা বিশেষণ সাব্যস্ত করা ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
ইরাদাহ (ইচ্ছার) প্রকারভেদ

ইরাদাহ (ইচ্ছার) প্রকারভেদ:

আল্লাহ তাআলার إرادة ইরাদাহ (ইচ্ছা) দুই প্রকার। (১) অমোঘ বিধানগত ইচ্ছা। অর্থাৎ ভাল-মন্দ এমনকি পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছা অনুপাতেই সৃষ্টি হয়েছে এবং নির্ধারিত হয়েছে। এই প্রকার ইরাদাহ এবং المشيئة একই জিনিষ। উভয়টি পরস্পর সমার্থবোধক। এই প্রকার ইরাদাহর উদাহরণ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

﴿وَإِذَا أَرَدْنَا أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا﴾

‘‘আমি যখন কোনো জনবসতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার সমৃদ্ধিশালী লোকদেরকে নির্দেশ[1] দেই, ফলে তারা সেখানে নাফরমানী করতে থাকে। অতঃপর আযাবের ফায়সালা সেই জনবসতির উপর বলবত হয়ে যায় এবং আমি তাকে ধ্বংস করে দেই’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১৬)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

﴿إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ﴾

‘‘আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের গুণাবলী বদলে ফেলে৷ আর আল্লাহ যখন কোন জাতিকে দুর্ভাগ্য কবলিত করার ফায়সালা করেন তখন তা প্রতিহত হয়না এবং আল্লাহর মোকাবিলায় এমন জাতির কোন সাহায্যকারী থাকেনা’’। (সূরা রা’দঃ ১১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا﴾

‘‘আর যাকে তিনি গোমরাহীতে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করেন, তার বক্ষদেশ খুব সংকীর্ণ করে দেন’’।

আর দ্বিতীয় প্রকার ইরাদাহ হচ্ছে إراداة دينية شرعية ইরাদায়ে দ্বিনীয়া শারঈয়া অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার শরীয়তগত ইচ্ছা। এই প্রকার ইচ্ছার মাধ্যমেই তিনি তাঁর বান্দাদের উপর শরীয়তের সকল হুকুম-আহকাম বিধিবদ্ধ করেছেন। এর উদাহরণ হলো আল্লাহর বাণীঃ

﴿وَاللَّهُ يُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيْكُمْ وَيُرِيدُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الشَّهَوَاتِ أَن تَمِيلُوا مَيْلًا عَظِيمًا يُرِيدُ اللَّهُ أَن يُخَفِّفَ عَنكُمْ ۚ وَخُلِقَ الْإِنسَانُ ضَعِيفًا﴾

‘‘আল্লাহ তোমাদের তাওবা কবুল করার ইচ্ছা করেন। কিন্তু যারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে তারা চায় তোমরা ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে দূরে চলে যাও৷ আল্লাহ তোমাদের উপর হাল্কা করার ইচ্ছা করেন। কারণ মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে’’। (সূরা নিসাঃ ২৭-২৮) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾

‘‘আল্লাহ তোমাদের উপর সংকীর্ণতা চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেন না। কিন্তু তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের উপর সম্পূর্ণ করে দিতে, যাতে তোমরা শোকর গুজার হও’’। (সূরা মায়িদাঃ ৬) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا﴾

‘‘আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের নবী পরিবার থেকে ময়লা দূর করতে এবং তোমাদের পুরোপুরি পাক-পবিত্র করে দিতে’’। (সূরা আহযাবঃ ৩৩)

[1] - এই আয়াতের ব্যাখ্যায় একাধিক মত রয়েছে। (১) আয়াতে 'নির্দেশ' মানে প্রকৃতি, সৃষ্টি ও অমোঘ বিধানগত নির্দেশ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ প্রকৃতি ও অমোঘ বিধান হিসাবে সবসময় এমনটিই হয়ে থাকে। যখন কোন জাতির ধ্বংস হবার সময় এসে যায়, তার বিত্তবানরা ফাসেক হয়ে যায়। আর ধ্বংস করার ইচ্ছা করা মানে এ নয় যে আল্লাহ বিনা কারণে কোন নিরপরাধ জনবসতি ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন, বরং এর মানে হচ্ছে, যখন কোন জনবসতি অসৎকাজের পথে এগিয়ে যেতে থাকে এবং আল্লাহ তাকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তখন এ সিদ্ধান্তের প্রকাশ এ পথেই হয়ে থাকে। সম্মানিত শাইখ এই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

(২) এই আয়াত বা অনুরূপ আয়াত থেকে এটি বুঝার কোন সুযোগ নেই যে, আল্লাহ তাআলার সমৃদ্ধ ও বিত্তশালীদেরকে পাপ কাজের আদেশ দেন এবং তারা সেই আদেশেই পাপ কাজ করে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস করেন। যেমনটি মনে করে থাকে জাহেলের দলেরা; বরং অধিকাংশ আলেমের মতে আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেন, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ইচ্ছা ও ইখতিয়ারের যেই স্বাধীনতা দিয়েছেন, তারা তার অপব্যবহর করে এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়। আল্লাহর আদেশ লংঘনের ফলে তারা ধ্বংসের হকদার হয় বলেই আল্লাহ তাদেরকে পূর্বের নির্ধারণ ও ফয়সালা অনুযায়ী ধ্বংস করেন; এমনটি নয় যে, আল্লাহর আদেশেই পাপ কাজ হয় এবং আল্লাহর হুকুমেই ধ্বংস হয়। কেননা কুরআনের একাধিক আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা কেবল আনুগত্যের আদেশ করেন। তিনি অন্যায় ও অশ্লীল কাজের আদেশ করেন না এবং অন্যায়, পাপাচার ও সীমালংঘনকে পছন্দও করেন না।