ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ৫ - আল্লাহ তাআলার জন্য ইচ্ছা বিশেষণ সাব্যস্ত করা ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী]
আল্লাহ তাআলার জন্য ইচ্ছা বিশেষণ সাব্যস্ত করা

৫- إثبات المشيئة والإرادة لله سبحانه وتعالى

৫- আল্লাহ তাআলার জন্য ইচ্ছা বিশেষণ সাব্যস্ত করা:

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ﴾

‘‘তুমি যখন তোমার বাগানে প্রবেশ করলে তখন মাশা-আল্লাহ (আললাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে) বললে না কেন? আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই’’।[1] (সূরা কাহাফঃ ৩৯) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

﴿وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِن بَعْدِهِم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَلَٰكِنِ اخْتَلَفُوا فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ﴾

‘‘আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে রাসূলদের আগমণের পর এবং তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ আসার পর তারা কখনো পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হতোনা। কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধ করলো, তারপর তাদের মধ্য থেকে কেউ ঈমান আনলো আর কেউ কুফরীর পথ অবলম্বন করলো৷ আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা কখনো যুদ্ধে লিপ্ত হতোনা, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তাই করেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৩) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿أُحِلَّتْ لَكُم بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ إِلَّا مَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ غَيْرَ مُحِلِّي الصَّيْدِ وَأَنتُمْ حُرُمٌ ۗ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيدُ﴾

‘‘তোমাদের জন্য চতুষ্পদ গৃহপালিত সব পশুই হালাল করা হয়েছে। তবে সামনে যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের জানানো হবে সেগুলো ছাড়া৷ কিন্তু ইহ্রাম অবস্থায় শিকার করা নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়োনা৷ নিঃসন্দেহে আল্লাহ যা ইচ্ছা আদেশ করেন’’। (সূরা মায়িদাঃ ১)


ব্যাখ্যাঃ لَوْلاَ শব্দটি এখানে هلا অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করার সময় مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ বললেনা কেন? অর্থাৎ আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার সামনে তোমার নিজের অক্ষমতা ও অপারগতা প্রকাশ করতঃ আল্লাহর জন্য পূর্ণ ক্ষমতার স্বীকৃতি দিয়ে এই কথা বললেনা কেন যে, আল্লাহ যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে।

কোন কোন সালাফ বলেছেন, যার কাছে কোন জিনিষ ভাল লাগে, সে যেন বলেمَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না: অর্থাৎ আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলা যদি ইচ্ছা করতেন, তারা যুদ্ধ না করুক, তাহলে তারা পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহ করতনা। কেননা আল্লাহর রাজ্যে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছু হওয়া অসম্ভব। আল্লাহর হুকুম প্রতিহত করার মত কেউ নেই এবং তাঁর ফয়সালা ঠেকানোরও কেউ নেই।[2]

أُحِلَّتْ لَكُم بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ তোমাদের জন্য চতুষ্পদ গৃহপালিত সব পশুই হালাল করা হয়েছে: এখানে মুমিনদেরকে লক্ষ্য করে এই কথা বলা হয়েছে। চতুষ্পদ গৃহপালিত পশু বলতে এখানে উট, গরু, ছাগল এবং ভেড়া উদ্দেশ্য।

إِلَّا مَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ তবে সামনে যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের জানানো হবে সেগুলো ছাড়াঃ এই বাক্যটি بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ থেকে মুস্তাছনা বা স্বতন্ত্র অর্থাৎ যেগুলোর আলোচনা সামনে আসছে, সেগুলোর মাংস খাওয়া তোমাদের জন্য হালাল নয়। ঐ হারাম পশুগুলো উক্ত আয়াতের সামান্য পরেই অর্থাৎ ৩নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌ ۗ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ ۚ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ ۙ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾

‘‘তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোশ্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত প্রাণী এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, উপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন প্রাণী, তবে তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করেছ সেটি ছাড়া৷ আর যা কোন বেদীমূলে (পূজার ঘরে, অলী-আওলীয়ার নামে, কবর ও মাজারের উদ্দেশ্যে) যবেহ করা হয়েছে তাও তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও শুভ-অশুভ নির্ধারনের তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়৷ এগুলো ফাসেকী তথা আনুগত্য বহির্ভূত কাজ৷ আজ তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কাফেররা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়েছে৷ কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় করোনা বরং আমাকে ভয় করো৷ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে পছন্দ করে নিয়েছি (কাজেই তোমাদের উপর হালাল ও হারামের যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মেনে চলো৷) তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ঐগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি জিনিষ খেয়ে নেয় গুনাহের প্রতি কোন আকর্ষণ ছাড়াই, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী’’।

غَيْرَ مُحِلِّي الصَّيْدِ وَأَنتُمْ حُرُمٌ কিন্তু ইহ্রাম বাধাঁ অবস্থায় শিকার করা নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়োনাঃ এই বাক্যটি بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ থেকে আরেকটি স্বতন্ত্র বিষয়। অর্থাৎ গৃহপালিত চতুষ্পদ সব জন্তুই তোমাদের জন্য হালাল। তবে এগুলো থেকে যেগুলো বন্য, সেগুলো শিকার করে ভক্ষণ করাও হালাল। কিন্তু যখন তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকবে, তখন এগুলো শিকার করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর বাণীঃ وأنتم حرم হাল (অবস্থা জ্ঞাপক) হিসাবে নসব বা যবরের স্থানে রয়েছে। যারা হজ্জ কিংবা উমরাহ অথবা উভয়টির ইহরাম বেঁধেছে, তাদেরকে حرم বলা হয়। ইহা محرم এর বহুবচন।

إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيدُ নিঃসন্দেহে আল্লাহ যা ইচ্ছা আদেশ করেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ যা ইচ্ছা হালাল করেন এবং যা ইচ্ছা হারাম করেন।[3] তাঁর ইচ্ছায় ও কর্মে আপত্তি উত্থাপন করার কেউ নেই।

উপরের আয়াতগুলোতে আল্লাহর সিফাত হিসাবে ইচ্ছা, শক্তি এবং আদেশ সাব্যস্ত করা হয়েছে। এগুলো আল্লাহ তাআলার অন্যতম সিফাত। আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই এগুলো তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা জরুরী।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ كَذَٰلِكَ يَجْعَلُ اللَّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ﴾

‘‘আল্লাহ যাকে সত্যপথ দেখাবার ইচ্ছা করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন৷ আর যাকে তিনি গোমরাহীতে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করেন, তার বক্ষদেশ খুব সংকীর্ণ করে দেন। যাতে মনে হয় সে কষ্ট করে আকাশের দিকে উঠার চেষ্টা করছে। এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদের উপর অপবিত্রতা চাপিয়ে দেন’’। (সূরা আনআমঃ ১২৫) অর্থাৎ জোর খাটিয়ে যেমন আকাশের দিকে উঠা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি আল্লাহ যার বক্ষকে সংকীর্ণ করে দেন তার মধ্যে ঈমান ও তাওহীদের আলো ঢুকানো সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা তার বক্ষকে ইসলামের জন্য খুলে না দেয়া পর্যন্ত তাতে ঈমান ও তাওহীদ প্রবেশ করেনা।


ব্যাখ্যা: فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ আল্লাহ যাকে সত্যপথ দেখাবার ইচ্ছা করেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যাকে ঈমান ও তাওহীদ কবুলের তাওফীক দেন এবং তার অন্তরকে সত্য কবুলের জন্য উপযুক্ত করেন, তার অন্তরকে উহার জন্য প্রশস্ত করে দেন।[4] منْ শব্দটি فعل مضارع কে জযমদাতা এবং ইসমে শর্ত। يُرِدْ -ফেলে মুযারেটি ফেলে শর্ত হিসাবে জযম যুক্ত। আর يشرح صدره للإسلام বাক্যটি শর্তের জবাব হিসাবে مجزوم (জযম যুক্ত)। الشرح অর্থ হচ্ছে الشق (বিদীর্ণ করা, চেরা, ফাটানো ইত্যাদি)। এর মূল অর্থ হচ্ছে التوسعة (প্রশস্ত করা)। বলা হয়ে থাকে شرحت الأمر তথা বিষয়টিকে প্রশস্ত করলাম। এই কথা আপনি ঠিক ঐ সময় বলেন, যখন আপনি তা প্রশস্ত করে বর্ণনা করেন এবং খোলাখুলি বয়ান করেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যাকে ঈমান ও তাওহীদ কবুলের তাওফীক দেন এবং তার অন্তরকে সত্য কবুলের জন্য উপযুক্ত করেন, তার অন্তরকে আল্লাহ তাআলা সত্য দ্বীন ইসলামের জন্য উন্মুক্ত ও প্রশস্ত করে দেন। এর ফলে সে উন্মুক্ত হৃদয়ে ইসলাম কবুল করে নেয়।

আর যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সত্য কবুল করা হতে ফিরিয়ে রাখতে চান, তার অন্তরকে সংকীর্ণ করে দেন। ফলে তা সত্য কবুল করার জন্য উন্মুক্ত হয়না। حرجا অর্থাৎ একদম সংকীর্ণ করে দেন, যার ফলে অন্তরে ঈমান ও হেদায়াত প্রবেশের কোন রাস্তাই থাকেনা। ضيقا শব্দের অর্থকে জোরালো করার জন্য حرجا শব্দটি আনয়ন করা হয়েছে।

كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ মনে হয় সে কষ্ট করে আকাশের দিকে উঠার চেষ্টা করছেঃ يصعد শব্দটি মূলতঃ يتصعد ছিল। تا-কে সোয়াদ দ্বারা পরিবর্তন করে সোয়াদের মধ্যে ইদগাম করা হয়েছে। অর্থাৎ যার অন্তরকে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়েছে, তার জন্য হেদায়াত কবুল করে নেয়ার বিষয়টি ঠিক ঐ ব্যক্তির ন্যায় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে কোন অসম্ভব কাজ সম্পাদন করার জন্য বার বার চেষ্টা করছে, কিন্তু সে তা সম্পাদন করতে পারছেনা। যেমন কেউ আকাশে উঠার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। যেই কাফেরের উপর ঈমান কবুল করে নেয়া খুব ভারী অনুভব হয়, তাকে ঐ ব্যক্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে আকাশে উঠার মত সাধ্যাতীত কাজ সম্পাদন করতে চায়।

উপরের আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার জন্য ইরাদাহ (ইচ্ছা) সাব্যস্ত হলো। কাউকে হেদায়াত করা আবার কাউকে গোমরাহ করা উভয়টিই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা হেদায়াতের ইচ্ছা করেন। বিশেষ উদ্দেশ্যে আবার কারো জন্য অমোঘ বিধানগত দিক থেকে গোমরাহীরও ইচ্ছা করেন।[5] অর্থাৎ যার অন্তরে ঈমান ও হেদায়াতের প্রতি কোন আগ্রহ থাকেনা এবং যে ব্যক্তি নবী-রাসূলদের দ্বীনকে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে হেদায়াত থেকে মাহরুম করে দেন।


[1] - সূরা কাহাফের ৩২ নং থেকে ৪৩ নং আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তাআলা মক্কাবাসী হঠকারী কাফেরদের জন্য একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। যুগে যুগে যে কোন অহংকারী, আল্লাহদ্রোহী এবং পরকালীন জীবনে অবিশ্বাসীর জন্য এটি একটি বিরাট শিক্ষণীয় ঘটনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আসেনি। সুতরাং কুরআন যা বলেছে, তার অতিরিক্ত কিছু যুক্ত করার কোন সুযোগ নেই। তাই আমরা ইসরাঈলী কিংবা দুর্বল বর্ণনা পরিত্যাগ করে শুধু কুরআনের আলোকে সেই ঘটনাটি এখানে উল্লেখ করবো।

কুরআন বলছে, অতীতকালে দু’জন লোক ছিল। তাদের মধ্যে আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্কও ছিল। তাদের একজন ছিল মুমিন এবং অন্যজন ছিল কাফের। তবে কুরআন ও হাদীছ তাদের নাম, তারা কোথায় এবং কোন সময় ছিল, তা বলেনি।

মুমিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার ধন-সম্পদ থেকে তেমন কিছু না দিলেও তাকে দিয়েছিলেন সর্ববৃহৎ একটি নেয়ামত। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসী, তাঁর ফয়সালা ও তকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আখেরাতে আল্লাহর নেয়ামত অর্জনই ছিল তার সকল কাজ-কর্ম ও চিন্তা-চেতনার মূলকেন্দ্র বিন্দু। মূলতঃ এটি এমন সম্পদ, যা দুনিয়ার কোন মূল্য দ্বারাই মূল্যায়ন করা যায়না।

তার সেই কাফের বন্ধুটির জন্য আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। তার ছিল প্রচুর সম্পদ, বাগ-বাগিচা এবং সন্তান-সন্ততি। কোন মানুষকে এ সবকিছু দেয়ার পিছনে আল্লাহ তাআলার হিকমত ও ইচ্ছা হলো তিনি তাকে পরীক্ষা করতে চান। সে কি এগুলো পেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে? না কি অকৃতজ্ঞ হয়? সে কি সীমালংঘন করে? না কি আল্লাহর আনুগত্য করে?

আল্লাহ তাআলা সেই অবিশ্বাসী লোকটিকে দু’টি বাগান দিয়েছিলেন। বাগানে ছিল আঙ্গুর, খেজুরসহ বিভিন্ন ফলমূলের বৃক্ষাদি। বাগানের মধ্যে ঝর্ণাও প্রবাহিত ছিল। আল্লাহ তাআলা এই বাগান দু’টির বর্ণনা দিয়ে বলেনঃ

﴿جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ آتَتْ أُكُلَهَا وَلَمْ تَظْلِم مِّنْهُ شَيْئًا ۚ وَفَجَّرْنَا خِلَالَهُمَا نَهَرًا﴾

‘‘তাদের একজনকে আমি দুটি আংগুর বাগান দিয়েছিলাম এবং সেগুলোর চারদিকে খেজুর গাছের বেড়া দিয়েছিলাম আর তার মাঝখানে রেখেছিলাম কৃষি ক্ষেত৷ দুটি বাগানই ভালো ফল দান করতো এবং ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা সামান্যও ত্রুটি করতোনা৷ এ বাগান দুটির মধ্যে আমি একটি নদী প্রবাহিত করেছিলাম’’। (সূরা কাহাফঃ ৩২-৩৩)

এসব কিছু পেয়ে একদিন সে তার দরিদ্র ভাইয়ের সাথে কথা প্রসংগে বললো, ‘‘আমি তোমার চেয়ে বেশী ধনশালী এবং আমার জনশক্তি তোমার চেয়ে বেশী৷ অহংকার ও গর্বের সাথে এ সব কথা বলতে বলতে সে তাকে নিয়ে বাগানে প্রবেশ করল। সে বলতে লাগলঃ এগুলো সবসময়ই আমার কাছে থাকবে, আমি মনে করিনা যে, আমার এই সম্পদগুলো কোন দিন ধ্বংস হবে। তার দাপট ও অহংকার এখানেই শেষ হলোনা; বরং সে অহংকার বশত কিয়ামতকেও অস্বীকার করে বললঃ আমি মনে করিনা যে, কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। সে আরো বললঃ কিয়ামত যদিও সংঘটিত হয় এবং আমাকে যদি কখনো আমার রবের সামনে ফিরিয়ে নেয়া হয় তাহলে নিশ্চয়ই আমি এর চেয়েও বেশী জমকালো জায়গা পাবো৷ যদি পরকাল থেকেই থাকে তাহলে আমি সেখানে এখানকার চেয়েও বেশী সচ্ছল থাকবো। কারণ এখানে আমার সচ্ছল ও ধনাঢ্য হওয়া একথাই প্রমাণ করে যে, আমি আল্লাহর প্রিয়।

দুনিয়া পূজারী আখেরাতে অবিশ্বাসী লোকদের অবস্থা এ রকমই হয়ে থাকে। তারা দুনিয়ার ভোগসামগ্রী পেয়ে আখেরাতকে ভুলে যায়। সে মনে করে, তার সম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে এবং তার ধন-সম্পদ কখনো শেষ হবেনা।

যাই হোক তার দরিদ্র সাথী কথাবার্তার মধ্যে তাকে বললো, ‘‘তুমি কি কুফরী করছো সেই সত্তার সাথে যিনি তোমাকে মাটি থেকে তারপর শুক্র থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাকে একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষ বানিয়ে দাঁড় করিয়েছেন? আর আমার ব্যাপারে বলবো, আমার রব তো সেই আল্লাহই এবং আমি তার সাথে কাউকে শরীক করিনা৷

এবার দরীদ্র বন্ধু বাগান ওয়ালাকে নসীহত করতে গিয়ে বললঃ বরং তোমার উচিৎ ছিল যেই আল্লাহ তোমাকে এই সম্পদ দিয়েছেন, তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং অহংকার বর্জন করা। তোমার সম্পদ টিকিয়ে রাখার জন্য এবং তোমার রবকে খুশী করার এটিই একমাত্র উত্তম পন্থা। আর যখন তুমি নিজের বাগানে প্রবেশ করছিলে তখন একথা বলা উচিৎ ছিল, مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ‘‘আল্লাহ যা চান তাই হয়, তাঁর প্রদত্ত শক্তি ছাড়া আর কোনো শক্তি নেই।

এরপর মুমিন লোকটি তার সাথীকে অহংকার, সীমালংঘন ও তাকাববরী করার ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললঃ আর তুমি যদি সম্পদ ও সন্তানের দিক দিয়ে আমাকে তোমার চেয়ে কম পেয়ে থাকো, তাহলে জেনে রেখো আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। এটি অসম্ভব নয় যে, আমার রব আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে ভালো কিছু দেবেন এবং তোমার বাগানের উপর আকাশ থেকে এমন কোনো আপদ পাঠাবেন, যার ফলে তোমার বাগান দু’টি বৃক্ষলতাহীন প্রান্তরে পরিণত হবে৷ অথবা তোমার বাগানের নদীর পানি ভূগর্ভে নেমে যাবে এবং তুমি তাকে কোনোক্রমেই উঠাতে পারবেনা৷

পরিশেষে তার বাগানের উপর বিরাট এক বিপর্যয় চলে আসল। চতুর্দিক থেকে বিপদ এসে বাগানের সমস্ত ফল ও ফসল বিনষ্ট করল এবং সে নিজের বাগানকে লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে থাকতে দেখে নিজের নিয়োজিত পুঁজির জন্য আফসোস করতে থাকলো এবং বলতে লাগলো, ‘‘হায়! যদি আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক না করতাম’’৷

এবার সে তার পূর্বোক্ত কথার জন্য অনুতপ্ত হলো। সে সময় আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার মতো কোনো গোষ্ঠীও ছিলনা, আর সে নিজেও এ বিপদের মুকাবেলা করতে সক্ষম ছিল না৷

[2] - অর্থাৎ রাসূলদের মাধ্যমে তাওহীদ, রেসালাত এবং শরীয়তের জ্ঞান লাভ করার পরও মানুষের মধ্যে যে কুফরী ও পাপাচার, সীমালংঘন দেখা যাচ্ছে, ও মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং মতবিরোধ থেকে আরো এগিয়ে গিয়ে ব্যাপক যুদ্ধ পর্যন্ত গড়িয়েছে, এর কারণ এ ছিলনা যে, (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ তাদেরকে তা থেকে বিরত রাখতে অক্ষম ছিলেন। পৃথিবীতে যে কুফুরী, সীমালংঘন, আল্লাহর নাফরমানী, যুলুম ও মতবিরোধ যুদ্ধ-বিগ্রহ হচ্ছে তা থেকে মানুষকে বিরত রাখার পরিপূর্ণ শক্তি আল্লাহ তাআলার রয়েছে। তিনি চাইলে নবীদের দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সাধ্য কারো ছিল না। কেউ কুফরী ও বিদ্রোহের পথে চলতে পারতোনা। আল্লাহর দুনিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টি করার ক্ষমতা কারো থাকতোনা। তবে মানুষের কাছ থেকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে আনুগত্যের পথ অবলম্বন করতে বাধ্য করা তাঁর ইচ্ছাই ছিলনা। তিনি পরীক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে মানুষকে এ পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। তাই তাকে বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে নির্বাচন ও বাছাই করার স্বাধীনতা দান করার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যথায় ঈমান ও আনুগত্যের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। নবী-রাসূলদেরকে তিনি মানুষের উপর দারোগা বানিয়ে পাঠাননি। কিন্তু মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির অপব্যবহার করেছে এবং আল্লাহর আনুগত্যের পথ বর্জন করে কুফরী ও সীমালংঘনকেই বেছে নিচ্ছে। ঐদিকে নবী-রাসূলগণ তাদেরকে জোর জবরদস্তি করে তাদেরকে ঈমান ও আনুগত্যের পথে টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেননি। কারণ জোর করে আনুগত্যের পথে এনে তাদেরকে দিয়ে আনুগত্যের কাজ করিয়ে নিয়ে পুরস্কার দেয়ারও কোন অর্থ হয়না। বরং নবীদেরকে তিনি পাঠান যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আহবান জানাবার জন্য। সুতরাং যারা জেনেবুঝে এবং আল্লাহ প্রদত্ত ইচ্ছা শক্তিকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে আল্লাহর পছন্দনীয় কাজে আত্মনিয়োগ করবে, তাদেরকে তিনি অফুরন্ত নেয়ামত দান করবেন। আর যারা নিজেদের ইচ্ছা ও স্বাধীনতাকে বিপথে পরিচালিত করবে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আল্লাহ তাদেরকে পরকালে শাস্তি দিবেন।

কাজেই পৃথিবীতে যত যুলুম, পাপকাজ, মতবিরোধ ও যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছে, তার পেছনে একটি মাত্র বিষয় কাজ করেছে যে, আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দান করেছেন। আর মানুষ স্বীয় ইচ্ছা শক্তি, বিবেক-বুদ্ধি ও স্বাধীনতা দিয়ে ভাল-মন্দের যে কোন একটি নির্বাচন করে বলেই কিয়ামতের দিন তাকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া আল্লাহর জন্য ইনসাফপূর্ণ হবে। তিনি যদি সৎকাজে বাধ্য করে পুরস্কার দেন কিংবা অন্যায় কাজ যদি শুধু আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয় (নাউযুবিল্লাহ) এবং এতে যদি বান্দার কোন ইচ্ছা, স্বাধীনতা ও সংকল্প না থাকে, তাহলে পাপকাজ করার কারণে কাউকে শাস্তি দেয়া আল্লাহর জন্য যুলুম বলে বিবেচিত হত এবং আল্লাহর আদলের ব্যাঘাত ঘটতো। অথচ আল্লাহ তাআলা যুলুম থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।


[3] - যাতে মানুষের জন্য উপকার ও কল্যাণ রয়েছে এবং যা পবিত্র আল্লাহ তাআলা তা হালাল করেন। আর ক্ষতিকর এবং যাতে অকল্যাণ রয়েছে, তা হারাম করেন। যেমন শূকর, মৃত জন্তু ইত্যাদি মানুষের জন্য ক্ষতিকর বলেই হারাম করেছেন।

[4] - অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঈমান ও হেদায়াতকে ভালবাসে এবং সেদিকে স্বীয় ইচ্ছাকে ধাবিত করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য ঈমানের পথ সহজ করে দেন ও তাকে সীরাতুল মুস্তাকীমের উপর চলতে সাহায্য করেন। আর যে ব্যক্তি ঈমান ও আনুগত্যের কাজকে পছন্দ করেনা, কুরআন-হাদীছের কথা যার কাছে ভাল লাগেনা এবং জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনার প্রতিও যে কর্ণপাত করেনা, আল্লাহ তাআলা তাকে সৎপথে চলার তাওফীক দেন না এবং তাকে সাহায্যও করেন না।

[5] - অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মানুষের আগ্রহের অনুরূপ ব্যবহারই করে থাকেন। কেউ যদি কল্যাণের দিকে ঝুকে পড়ে আল্লাহ তাকে কল্যাণের দিকেই নিয়ে যান। আর যদি খারাপ পথে ধাবিত হয়, তাকে শ্বাস্তি স্বরূপ সেদিকেই নিয়ে যান।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দরিদ্র মুসলিমদের থেকে বিমুখ হয়ে মক্কার নের্তৃস্থানীয় কাফেরদের হেদায়াতের প্রতি গুরুত্ব দিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে ধমক দিয়ে এই আয়াতগুলো নাযিল করেনঃ

﴿عَبَسَ وَتَوَلَّى (১) أَنْ جَاءَهُ الْأَعْمَى (২) وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى (৩) أَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنْفَعَهُ الذِّكْرَى (৪) أَمَّا مَنِ اسْتَغْنَى (৫) فَأَنْتَ لَهُ تَصَدَّى (৬) وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّى (৭) وَأَمَّا مَنْ جَاءَكَ يَسْعَى (৮) وَهُوَ يَخْشَى (৯) فَأَنْتَ عَنْهُ تَلَهَّى (১০) كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ (১১) فَمَنْ شَاءَ ذَكَرَهُ﴾

‘‘ভ্রুকুঁঞ্চিত করলো ও মুখ ফিরিয়ে নিল। কারণ সেই অন্ধ লোকটি তার কাছে এসেছে। তুমি কী জানো, হয়তো সে শুধরে যেত। অথবা উপদেশের প্রতি মনোযোগী হতো এবং উপদেশ দেয়া তার জন্য উপকারী হতো।

আর যে ব্যক্তি বেপরোয়া ভাব দেখায়। তুমি তার প্রতি মনোযোগী হও। অথচ সে যদি শুধরে না যায় তাহলে তোমার উপর এর কোন দায়িত্ব থাকেনা। আর যে নিজে তোমার কাছে দৌড়ে আসে এবং সে ভীত হচ্ছে। তার দিক থেকে তুমি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো। কখনো নয়, এটি তো একটি উপদেশ। যার ইচছা এটি গ্রহণ করবে’’। (সূরা আবাসাঃ ১-১২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

﴿إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّىٰ فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى (৫) وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى (৬) فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى (৭) وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى (৮) وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى (৯) فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى﴾

‘‘আসলে তোমাদের প্রচেষ্টা নানা ধরনের৷ কাজেই যে (আল্লাহর পথে) ধন সম্পদ দান করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে ও আল্লাহর নাফরমানি থেকে দূরে থেকেছে। এবং সত্য কথাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। অচিরেই তাকে আমি সহজ পথের সুযোগ-সুবিধা দেবো। অর্থাৎ তাকে আনুগত্যের কাজ করার তাওফীক দিবো এবং তার জন্য উহা সহজ করে দিবো। আর যে কৃপণতা করেছে, আল্লাহ থেকে বেপরোয়া হয়ে গেছে। এবং সত্যকে মিথ্যা গণ্য করেছে। অচিরেই তাকে আমি কঠিন পথের সন্ধান দেবো’’৷ (সূরা লাইলঃ ৫-১০) অর্থাৎ আমি তাকে কুফরী ও নাফরমানীর পথ সহজ করে দেবো। ফলে তার জন্য ঈমান ও আনুগত্যের পথে চলা দুষ্কর হয়ে যায়।

কুরআনের অনেক স্থানেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন কোন ব্যক্তি ভাল ও ন্যায় পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তাআলা তার উপর অনুগ্রহ করেন এবং তাকে সেই পথে চলার তাওফীক দান করেন।

আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কুফরী ও নাফরমানীর পথে চলে, আল্লাহ তাকে তার অবস্থাতেই ছেড়ে দেন এবং এটি সেই তাকদীর অনুযায়ীই হয়ে থাকে, যা আল্লাহ তাআলা স্বীয় ইলম মোতাবেক আগেই লিখে রেখেছেন। (ইবনে কাছীর)