ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল-ফিকহুল আকবর ইসমাতুল আম্বিয়া, সাহাবায়ে কেরাম, তাকফীর, সুন্নাত ও ইমামাত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৫. ৪. তাকফীর বিষয়ে সাহাবীগণের আদর্শ

এ সকল নির্দেশনার আলোকে সাহাবীগণ ঈমানের দাবিদারকে কাফির বলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও তাদেরকে কাফির বলার অনুমতি দেন নি। সিফফীনের যুদ্ধ চলাকালে আলী (রা)-এর পক্ষের এক ব্যক্তি মু‘আবিয়া (রা)-এর পক্ষের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়িমূলক কথা বললে আলী (রা) বলেন, এরূপ বলো না, তারা মনে করেছে আমরা বিদ্রোহী এবং আমরা মনে করছি যে, তারা বিদ্রোহী। আর এর কারণেই আমরা যুদ্ধ করছি। আম্মার ইবন ইয়াসার বলেন, সিরিয়া-বাহিনীকে কাফির বলো না, বরং আমাদের দীন এক, কিবলা এক, কথাও এক; তবে তারা আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, তাই আমরা লড়াই করছি।’’[1]

আমরা ইতোপূর্বে বলেছি যে, খারিজীগণ আলী, মুআবিয়া ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সকল সাহাবী (রাঃ) ও সকল মুসলিমকে কাফির বলে গণ্য করত এবং তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ ও লুটতরাজ চালাত। সাহাবীগণ তাদেরকে বিভ্রান্ত বলতেন, কাফির বলতেন না। যদিও বিভিন্ন হাদীসে খারিজীদের বিষয়ে বলা হয়েছে যে, তারা দীন থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাবে, তবুও সাহাবীগণ তাদেরকে কাফির বলতেন না। তাঁরা এদের সাথে মুসলিম হিসেবেই মিশেছেন, কথাবার্তা বলেছেন, আলোচনা করেছেন এমনকি এদের ইমামতিতে সালাত আদায় করেছেন। যুদ্ধের ময়দানে বা বিচারের কাঠগড়ায় ছাড়া কখনোই তাদেরকে হত্যা করার অনুমতি দেন নি।[2]

আলী (রা)-কে প্রশ্ন করা হয়: এরা কি কাফির? তিনি বলেন, এরা তো কুফরী থেকে বাঁচার জন্যই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বলা হয়, তবে কি তারা মুনাফিক? তিনি বলেন, মুনাফিকরা তো খুব কমই আল্লাহর যিক্র করে, আর এরা তো রাতদিন আল্লাহর যিক্রে লিপ্ত। বলা হয়, তবে এরা কী? তিনি বলেন, এরা বিভ্রান্তি ও নিজ-মত পূজার ফিতনার মধ্যে নিপতিত হয়ে অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছে।[3]

[1] মুহাম্মাদ ইবনু নাসর আল-মারওয়াযী, তা’যীমু কাদরিস সালাত ২/৫৪৪-৫৪৬।

[2] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/১২৫; আবূ দাউদ, আস-সুনান ৩/৭৪, ১৪৬; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ১১/১৫৫; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৮/৩১০, ৫৫৭, ৬৮৬; ইবনু তাইমিয়া, মাজমূউল ফাতাওয়া ৭/২১৭-২১৮; ড. নাসির আল-আকল, আল-খাওয়ারিজ, পৃ. ৪৭-৫৬।

[3] ইবনুল আসীর, আন-নিহাইয়াহ ফী গারিবিল হাদীস ২/১৪৯।