ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ১. পরিচিতি ও আলোচিত কারণসমূহ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
১. ৮. বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধন

ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রধান কারণ বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর নির্বিচার অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। এ নিধনযজ্ঞের বড় একটি দিক ইস্রায়েল রাষ্ট্রের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্যে হত্যাযজ্ঞ, যা আমরা উপরের অনুচ্ছেদে আলোচনা করেছি। এছাড়াও চেচনিয়া, কাশ্মীর, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, চীন ও অন্যান্য বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নির্বিচার জুলুম, অত্যাচার ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ (ethnic cleansing) চলছে। আর আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ, জাতিসংঘ, পাশ্চাত্য দেশগুলি ও আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম এ নিধনযজ্ঞের বিষয়ে নীরব অথবা নিধনযজ্ঞের সরব সমর্থক। এর বিরুদ্ধে প্রায় কেউই সরব নয়।

এ পরিস্থিতিতে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের অদম্য আবেগই জঙ্গিবাদের জন্ম দিচ্ছে। মানুষ যখন নির্বিচার অত্যাচারের প্রতিবাদে আইনগতভাবে কিছুই করতে না পারে তখন বে-আইনীভাবে প্রতিশোধ গ্রহণের চেষ্টা করে এবং তার বে-আইনী কর্মকে ‘আদর্শিক’ ছাপ দেয়। এছাড়া সারা বিশ্বের মুসলিম মানস এ নিধনযজ্ঞের অবসান ও মুসলিম সভ্যতার বিজয় কামনা করছে। জঙ্গিবাদীরা এদেরকে সহজেই বুঝাতে পারছে যে, তাদের পথই নিধনযজ্ঞের অবসানের ও বিজয়ের পথ। এক্ষেত্রে ইসলামী বিধিবিধান বিচার, আলিমদের মতামত গ্রহণ, ফলাফল বিচার ইত্যাদির চেয়ে আবেগই বেশি কার্যকর। এরূপ আবেগ ও হতাশা থেকেই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইস্রায়েল বা অন্য কোনো দেশের অন্যায় বা জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ বা জুলুমের প্রতিকার করতে আবেগী যুবক সাধারণ মার্কিন নাগরিককে বা মার্কিনীদের সাথে সহযোগী বলে অন্য কোনো দেশ ও ধর্মের কোনো মানুষকে হত্যা করেন।

তার এ কর্মটি ইসলামের দৃষ্টিতে একটি কঠিন অন্যায় ও পাপ। কারণ: (১) ইসলাম অন্যায়ের প্রতিবাদ অন্যায় পদ্ধতিতে করতে অনুমতি দেয় না, (২) ইসলাম একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি প্রদানের অনুমতি দেয় না এবং (৩) ইসলাম কোনো ব্যক্তি দল বা গোষ্ঠীকে বিচার বা শাস্তির দায়িত্ব নিজে গ্রহণের অনুমতি দেয় না। এজন্য কখনোই কোনো দেশের প্রাজ্ঞ আলিম ও মুফতীগণ এরূপ প্রতিশোধ বা প্রতিবাদ বৈধ বলেন না। তাঁরা এ সকল ক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে, শান্তিপূর্ণভাবে সহিংসতা বর্জন করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপনের উৎসাহ দেন। তবে আবেগী যুবক তো তাদের ‘‘ফাতওয়া’’ নিয়ে কাজে নামেন নি। বরং আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করেছেন এবং আলিমগণের ফাতওয়াকে দুর্বলতা বা দালালি বলে গণ্য করেছেন। তার আবেগের পক্ষে অন্য আরেক আবেগী ‘আধুনিক অর্ধ-আলিম ধর্মগুরু’ বা মুফতীর ‘ফাতওয়া’ তার কাছে যুগোপযোগী, সঠিক ও দ্রুত ফললাভের সহায়ক বলে মনে হয়েছে।