ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আর-রাহীকুল মাখতূম খায়বার ও ওয়াদিল কুরা যুদ্ধ (মুহাররম, ৭ম হিজরী) غَزْوَةُ خَيْبَرَ وَوَادِيْ الْقُرٰي (‏في المحرم سنة ٧ هـ)) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)
গণীমতের মাল বন্টন (قِسْمَةُ الْغَنَائِمِ):

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইচ্ছা করেছিলেন খায়বার হতে ইহুদীদের বিতাড়িত করতে এবং সেই শর্তেই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু ইহুদীগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আরয পেশ করল এ জমিন তাদের থাকতে দেয়ার জন্য। তারা বলল, ‘আমাদের এ জমিনে থাকতে দিন, আমরা এর দেখাশোনা করব। কারণ, এ জমিন সম্পর্কে আপনাদের তুলনায় আমদের দক্ষতা এবং অভিক্ষতা অনেক বেশী। এদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবীগণ (রাঃ)-এর নিকট এমন দাস ছিল না যারা এ জমিন দেখাশোনা এবং চাষাবাদ ও বুননের কাজকর্ম করতে পারবে। তাছাড়া, সাহাবীগণ (রাঃ)-ও এমন অবসর ছিল না যে, তাঁরা এ সকল কাজকর্ম করতে পারবেন। এ কারণে নাবী কারীম (ﷺ) এ শর্তে খায়বারের ভূমি ইহুদীদের হাত ছেড়ে দিলেন যে সমস্ত ক্ষেত খামার ও বাগ-বাগিচার উৎপাদনের অর্ধাংশ ইহুদীদের দেয়া হবে এবং তিনি যতদিন চাবেন ততদিন এ ব্যবস্থা বজায় থাকবে (যখন প্রয়োজন বোধ করবেন তখন তাদের বিতাড়িত করা হবে) উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ)-কে নিয়োজিত করা হয়।

খায়বারের লব্ধ সম্পদ ছত্রিশ অংশে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। এর প্রতি অংশ পুনরায় একশত অংশে বিভাজন করে বন্টনের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে মোট সম্পদ বন্টন করা হতো তিন হাজার ছয়শ অংশে। এর মধ্য হতে অর্ধেক অর্থাৎ এক হাজার আটশ অংশ ছিল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবীগণের (রাঃ)। সাধারণ মুসলিমগণের মতোই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাত্র একটি অংশ গ্রহণ করতেন। অবশিষ্ট এক হাজার আটশ অংশ (অর্থাৎ দ্বিতীয়ার্ধ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুসলিমগণের সামাজিক প্রয়োজন এবং আপাৎকালীন সময়ের জন্য পৃথক করে রাখতেন। খায়বারের লব্ধ সম্পদ এ কারণে আঠার শত অংশে বন্টনের ব্যবস্থা ছিল যে, হুদায়বিয়াহয় অংশগ্রহণকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এটা ছিল এক বিশেষ দান। উপস্থিত অনুপস্থিত সকলের জন্যই অংশের ব্যবস্থা ছিল। হুদায়বিয়াহয় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দ শত। খায়বার আসার সময় এরা দুশ ঘোড়া সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। যেহেতু আরোহী ছাড়া ঘোড়ারও অংশ নির্ধারিত ছিল এবং প্রতিটি ঘোড়ার জন্য দু’টি অংশ ধার্য ছিল। সেহেতু লব্ধ সম্পদ আঠারশ অংশে বন্টন করা হয়েছিল। দুইশ ঘোড়সওয়ারকে তিন তিন অংশ হিসেবে ছয়শ অংশ এবং বারশ পদাতিককে এক এক অংশ হিসেবে বার শত অংশ সর্ব মোট আঠারশ অংশে বন্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[1]

খায়বারের যুদ্ধ লব্ধ সম্পদের আধিক্যের কথা সহীহুল বুখারীর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে প্রমানিত হয়েছে। তিনি এ কথাও বলেছেন, যে পর্যন্ত না খায়বার বিজয় করতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম সে পর্যন্ত পরিতৃপ্তি হতে পারিনি। অনুরূপ প্রমাণ আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসেও পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ‘যখন খায়বার যুদ্ধে মুসলিমগণ বিজয়ী হলেন তখন আমরা বললাম এখন পেট পুরে খেজুর খেতে পারব।[2]

[1] যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১৩৭-১৩৮ পৃঃ, ব্যাখ্যাসহ ।

[2] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬০৯ পৃঃ।