ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আর-রাহীকুল মাখতূম হুদায়বিয়াহর উমরাহ عمرة الحديبية (فِيْ ذِيْ الْقَعْدَةِ سَنَةَ ٦ هـ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)
হিজরতকারিণী মহিলাগণকে ফেরত প্রদানে অস্বীকৃতি (الْإِبَاءُ عَنْ رَدِّ الْمُهَاجِرَاتِ):

এরপর কিছু সংখ্যক মহিলা মুহাজির আগমন করলেন। তাদের অভিভাবকগণ দাবী করল যে, হুদায়াবিয়ার যে সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এদের ফেরত প্রদান করা হোক । কিন্তু তাদের এ দাবী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রমাণের ভিত্তিতে প্রত্যাখ্যান করে দিলেন যে, এ চুক্তির শর্ত সম্পর্কে সন্ধিপত্র যে কথা লিখা হয়েছিল তা ছিল-

‏(‏وَعَلٰى أَنَّهُ لَا يَأْتِيْكَ مِنَّا رَجُلٌ، وَإِنْ كَانَ عَلٰى دِيْنِكَ إِلَّا رَدَدْتُّهُ عَلَيْنَا‏)‏

‘এ শর্ত সাপেক্ষে এ সন্ধি করা হচ্ছে যে, আমাদের যে ব্যক্তি আপনার নিকট চলে যাবে আপনি অবশ্যই তাকে ফেরত পাঠাবেন যদিও সে আপনার দ্বীনের অনুসারী হয়।[1]

অতএব, এ মহিলাগণ সন্ধিচুক্তির শর্তাবলীর আওতাভুক্ত ছিলেন না। অন্য দিকে আবার এ মহিলাগণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে কারীমও নাযিল করেন,

‏(‏يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا جَاءكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّ‏)‏، حَتّٰى بَلَغَ ‏(‏بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ‏)‏ ‏[‏الممتحنة‏ :‏ 10‏]‏

‘হে মু’মিনগণ! ঈমানদার নারীরা যখন তোমাদের কাছে হিজরাত করে আসে তখন তাদেরকে পরখ করে দেখ (তারা সত্যিই ঈমান এনেছে কি না)। তাদের ঈমান সম্বন্ধে আল্লাহ খুব ভালভাবেই জানেন। অতঃপর তোমরা যদি জানতে পার যে, তারা মু’মিনা, তাহলে তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। মু’মিনা নারীরা কাফিরদের জন্য হালাল নয়, আর কাফিররাও মু’মিনা নারীদের জন্য হালাল নয়। কাফির স্বামীরা (মাহর স্বরূপ) যা তাদের জন্য খরচ করেছিল তা কাফিরদেরকে ফেরত দিয়ে দাও। অতঃপর তোমরা তাদেরকে মাহর প্রদান করতঃ বিয়ে করলে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। তোমরা কাফির নারীদেরকে (বিবাহের) বন্ধনে আটকে রেখ না।’ [আল-মুমতাহিনাহ (৬০ : ১০]

উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর যখনই কোন মহিলা হিজরত করে আসতেন তখন রাসূলে কারীম (ﷺ) আল্লাহর এ নির্দেশের আলোকে তাঁর পরীক্ষা গ্রহণ করতেন,

‏(يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلٰى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْئاً وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِيْنَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِيْنَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِيْنَهُ بَيْنَ أَيْدِيْهِنَّ وَأَرُجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِيْنَكَ فِيْ مَعْرُوْفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ‏‏)‏ ‏[‏الممتحنة ‏:‏ 12‏]‏

‘হে নাবী! যখন মু’মিনা নারীরা তোমার কাছে এসে বাই‘আত করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শারীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, নিজেদের সন্তান হত্যা করবে না, জেনে শুনে কোন অপবাদ রচনা ক’রে রটাবে না এবং কোন ভাল কাজে তোমার অবাধ্যতা করবে না- তাহলে তুমি তাদের বাই‘আত (অর্থাৎ তোমার প্রতি আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ কর এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর; আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’ [আল-মুমতাহিনাহ (৬০ : ১২]

এ প্রেক্ষিতে মহিলাগণ এ আয়াতে বর্ণিত শর্তাবলী অনুসরণ করবে বলে যখন অঙ্গীকার করত, নাবী কারীম (ﷺ) তখন তাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করতেন। অতঃপর তাদরকে আর ফেরত দেয়া হতো না।

এ নির্দেশাবলী পালনার্থে মুসলিমগণ নিজ নিজ কাফেরা মুশরিকা স্ত্রীগণকে তালাক প্রদান করেন। ঐ সময় উমারের দাম্পত্যে দুই অংশীবাদী মহিলা ছিল। তিনি তাদের দু’ জনকে তালাক প্রদান করেন। এদের একজনকে বিবাহ করেন মুওয়াবিয়া এবং অন্য জনকে বিবাহ করেন সফওয়ান বিন উমাইয়া।

[1] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৩৮০ পৃঃ।