ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
তাওহীদ ও তার প্রমাণাদি আকীদার ব্যাপারে ৫০টি প্রশ্নোত্তর ইসলামহাউজ.কম
প্রশ্ন-৫০: আমাকে কিছু উপদেশ দিন

উত্তর: আপনাকে যে উপদেশ দিব এবং যার প্রতি উৎসাহ দিব তা হল: তাওহীদকে বুঝা, তাওহীদ সম্পর্কীয় বই পুস্তক পাঠ করা, কারণ এতে আপনার জন্য তাওহীদের হাকীকত প্রকাশ পাবে, যার জন্য আল্লাহ তার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। এবং শির্কের হাকীকত প্রকাশ পাবে যা আল্লাহ ও তার রাসূল হারাম করেছেন এবং তিনি বলে দিয়েছেন যে, শির্ক তিনি ক্ষমা করবেন না। শির্ককারীর উপর জান্নাত হারাম করেছেন। যে ব্যক্তি শির্ক করবে তার আমল ধ্বংস হয়ে যাবে।

আর তাওহীদের হাকিকত জানাই আসল ব্যাপার, যার জন্য আল্লাহ তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। আর এর দ্বারাই একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ ভাবে মুসলিম হতে পারে এবং শির্ক ও শির্ককারীদের থেকে দূরে থাকতে পারে।

আমার জন্য উপকারী কিছু কথা লিখে দিন।

আপনাকে সর্ব প্রথম যে উপদেশ দিব সেটি হচ্ছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার দিকে খেয়াল করা, কেননা মানুষের যা প্রয়োজন তিনি তাহাই আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। যে সকল আমল আল্লাহর নিকটবর্তী করবে এবং জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে তিনি তা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর যে সকল আমল আল্লাহ থেকে দূরে রাখবে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী করবে তিনি তা থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। কাজেই আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত তার বান্দার উপর প্রমাণ কায়েম করে রেখেছেন। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) প্রেরিত হওয়ার পর আল্লাহর নিকট কারো কোনো ওজর বা অভিযোগ পেশ করা বাকী নেই।

আল্লাহ তাঁর এবং অন্যান্য নবীদের ব্যাপারে বলেছেন:


﴿ ۞إِنَّآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ كَمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ نُوحٖ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَ وَٱلۡأَسۡبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَٰرُونَ وَسُلَيۡمَٰنَۚ وَءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ زَبُورٗا ١٦٣ وَرُسُلٗا قَدۡ قَصَصۡنَٰهُمۡ عَلَيۡكَ مِن قَبۡلُ وَرُسُلٗا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَيۡكَۚ وَكَلَّمَ ٱللَّهُ مُوسَىٰ تَكۡلِيمٗا ١٦٤ ﴾ [النساء: ١٦٣، ١٦٤]


অর্থাৎ: নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি যেমন প্রত্যাদেশ করেছিলাম নূহ এবং তার পরে অন্যান্য নবীদের প্রতি এবং প্রত্যাদেশ করেছিলাম ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তৎবংশীয়গণের প্রতি এবং ঈসা, আইয়ূব, ইউনূস, হারুন ও সুলাইমানের প্রতি এবং আমি দাউদকে যাবূর প্রদান করেছিলাম।

আর নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট পূর্বের বহু রাসূলের প্রসঙ্গ বর্ণনা করেছি এবং বহু রাসূল রয়েছে যাদের কথা আমি আপনাকে বলিনি, এবং আল্লাহ মূসা (আঃ) এর সাথে প্রত্যক্ষ কথা বলেছেন। [সূরা নিসা ১৬৩-১৬৪]

তিনি আল্লাহর নিকট থেকে সবচেয়ে মহা যে জিনিস নিয়ে এসেছেন এবং লোকদেরকে সর্ব প্রথম যে জিনিসের নির্দেশ দিয়েছেন তা হল: এক আল্লাহর জন্য তাওহীদে ইবাদতকে স্বীকৃতি দেওয়া যার কোনো শরীক নেই এবং একমাত্র তার জন্যই একনিষ্ঠ দ্বীন কায়েম করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:


﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ ﴾ [المدثر: ١، ٣]


অর্থাৎ: হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা করুন। সূরা মুদ্দাচ্ছির ১-৩

অ-রববাকা ফাকাবিবর অর্থ: তাওহীদ এবং বিশুদ্ধ ইবাদতের দ্বারা আপনার প্রভুর মহত্ম বর্ণনা করুন যার কোনো শরীক নেই। আর এটি নামায, রোজা, যাকাত, হজ্জ এবং ইসলামের অন্যান্য বিধানাবলীর নির্দেশের পূর্বে এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কুম ফা-আনযির অর্থ: এক আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে শির্ক করা থেকে ভীতি প্রদর্শন করুন। এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যিনা, চুরি, সূদ, মানুষকে যুলুম করা এবং অন্যান্য বড় বড় পাপ থেকে ভীতি প্রদর্শনের পূর্বে।

আর এ মূলনীতিটি দ্বীন ইসলামের মূলনীতির মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি, এর জন্যই আল্লাহ সকল সৃষ্টিকে তৈরী করেছেন।

যেমন তিনি বলেন:


﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]


আমি জ্বিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য। [সূরা যারিয়াত ৫৬]

এবং এর জন্যই আল্লাহ রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যেমন তিনি বলেন:


﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ﴾ [النحل: ٣٦]


অর্থাৎ: আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছি এ মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। [সূরা নাহল ৩৬]

আর এর জন্যই মানুষ মুসলিম এবং কাফের হিসাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে, সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট এমন অবস্থায় আসবে যে সে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেনি তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি তার সাথে শরীক করবে সে দোযখে প্রবেশ করবে যদিও সে লোকদের চেয়ে বেশী ইবাদত করে থাকে। এ কথার অর্থই হল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)। কেননা ইলাহ হলেন তিনি, যাকে ডাকা হয়, যার নিকট কল্যাণ কামনা করা হয় এবং অকল্যাণ দূর করা হয়, যাকে ভয় করা হয় এবং যার উপর ভরসা করা হয় তিনিই প্রকৃত ইলাহ।