ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা নবম অধ্যায় - হত্যা ও যুদ্ধ-জিহাদ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৯. ৮. ৩. ৭. প্রতারণামূলকভাবে বাল-পূজারীদের হত্যা

যেহু নিজে প্রতিমাপূজা বাদ না দিলেও আহাবের প্রতিপক্ষ হিসেবে বাল দেবতার নবীদের, পূজারীদের ও পুরোহিতদেরকে হত্যা করেন। তিনি প্রতারণাপূর্বক তাদের একত্রিত করেন। তিনি বলেন, তিনি নিজে বাল দেবতার পূজার মহোৎসব করবেন, যদি কেউ তাতে অনুপস্থিত থাকে তবে তাকে হত্যা করা হবে। বাহ্যত এরূপ ঘোষণায় বাল দেবতার ভক্তরা ছাড়াও সাধারণ দুর্বল ঈমানের ভাল মানুষেরাও রাজার ভয়ে জমা হয়েছিলেন। এরপর কোনোরূপ অনুতাপ, অনুশোচনা, পাপ-স্বীকার, আত্মপক্ষসমর্থন বা তাওবার সুযোগ না দিয়ে সকলকে তিনি হত্যা করেন।

‘‘তারপর যেহূ সমস্ত লোকদের জমায়েত করে তাদেরকে বললেন, ‘আহাব বাল দেবতার পূজা সামান্যই করেছেন, কিন্তু যেহূ তার পূজা করবে অনেক বেশী। এখন বাল দেবতার সব নবী, পূজাকারী ও পুরোহিতদের আপনারা ডেকে আনুন। দেখবেন যেন কেউ বাদ না পড়ে, কারণ বাল দেবতার উদ্দেশ্যে আমি একটা মস্তবড় পশুবলির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। এতে কেউ যদি না আসে তাকে হত্যা করা হবে।’  কিন্তু আসলে যেহূ বাল দেবতার পূজাকারীদের ধ্বংস করবার জন্যই এই ছলনা করেছিলেন। যেহূ বললেন, ‘বাল দেবতার উদ্দেশ্যে একটা সভা ডাকা হোক’। কাজেই সেই কথা লোকেরা ঘোষণা করে দিল। যেহূ তখন ইসরাইলের সব জায়গায় খবর পাঠালেন। তাতে বাল দেবতার সমস্ত পূজাকারীরা এসে হাজির হল, কেউই অনুপস্থিত রইল না। তারা বাল দেবতার মন্দিরে ঢুকলে পর এমন ভীড় হল যে, মন্দিরের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত লোকেরা ভরে গেল। তখন যেহূ পোশাক- রক্ষককে বললেন, ‘বাল দেবতার পূজাকারী সকলের জন্য পোশাক নিয়ে আসুন’। তাতে সে তাদের জন্য পোশাক বের করে আনল। তারপর যেহূ ও রেখবের ছেলে যিহোনাদব বাল দেবতার মন্দিরে ঢুকলেন। যেহূ বাল দেবতার পূজাকারীদের বললেন, ‘আপনারা ভাল করে খুঁজে দেখুন যাতে মাবুদের গোলামদের মধ্যে কেউ এখানে আপনাদের মধ্যে না থাকে, শুধু বাল দেবতার পূজাকারীরাই থাকবে।’

তখন তারা পশুবলি ও পোড়ানো-উৎসর্গ করতে গেলেন। যেহূ আশিজন লোককে এই বলে সাবধান করে দিয়ে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন, ‘আমি তোমাদের হাতে যাদের ভার দিচ্ছি তাদের একজনকেও কেউ যদি পালিয়ে যেতে দেয় তবে পালিয়ে যাওয়া লোকের বদলে তার প্রাণ যাবে।’ যেহূ পোড়ানো-উৎসর্গ শেষ করবার সংগে সংগে পাহারাদার ও সেনাপতিদের হুকুম দিলেন, ‘তোমরা ভিতরে ঢুকে ওদের হত্যা কর; একজনও যেন পালিয়ে যেতে না পারে।’ তখন তারা তলোয়ার দিয়ে তাদের কেটে ফেলল। পাহারাদার ও সেনাপতিরা লাশগুলো মন্দিরের বাইর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভিতরের ঘরে গেল।’ বাল দেবতার মন্দির থেকে পূজার পাথরগুলো তারা বের করে এনে পুড়িয়ে দিল। তারপর তারা বাল দেবতার পূজার পাথরটা চুরমার করে দিল এবং মন্দিরটা ভেঙে ফেলল। লোকেরা তখন থেকে আজ পর্যন্ত সেটাকে পায়খানা-ঘর হিসাবে ব্যবহার করে আসছে।’’ (২ বাদশাহনামা ১০/১৮-২৭)

আধুনিক সমালোচকরা এটাকে ভিন্নধর্ম, ভিন্নধর্মের ধর্মস্থান ও ভিন্নধর্মের অনুসারীদের প্রতি বাইবেলীয় ধার্মিকতার আদর্শ বলে গণ্য করেন।