ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা দ্বিতীয় অধ্যায় - পাণ্ডুলিপি, প্রামাণ্যতা ও অভ্রান্ততা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
২. ১৩. ৪. পলীয় পত্রাবলির রচয়িতা প্রসঙ্গে গবেষকগণ

আমরা বলেছি যে, নতুন নিয়মের ৬ষ্ঠ পুস্তক থেকে ১৯তম পুস্তক: মোট  চৌদ্দটা পুস্তক পলের নামে প্রচলিত। এগুলোর মধ্যে তেরটা পুস্তকে তাঁর নাম বিদ্যমান। তবে ভাষা, তথ্য ও ঐতিহাসিক নিরীক্ষার মাধ্যমে বাইবেল গবেষকরা এগুলোর মধ্য সাতটা পুস্তক পলের রচিত এবং সাতটা তাঁর লেখা নয় বলে উল্লেখ করেছেন। উইকিপিডিয়ায় ‘বাইবেলের লেখকত্ব’ (Authorship of the Bible) প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গে লেখেছে:

“The Epistle to the Romans, First Corinthians and Second Corinthians, Galatians, Philippians, 1 Thessalonians and the Epistle to Philemon are almost universally accepted as the work of Paul– the superscripts to all except Romans and Galatians identify these as coming from Paul and at least one other person, a practice which was not usual in letters of the period, and it is not clear what role these other persons had in their composition. There is some support for Paul's authorship of the three "Deutero-Pauline Epistles," Ephesians, Colossians, and 2 Thessalonians. The three Pastoral epistles – First and Second Timothy and Titus, are probably from the same author, but most historical-critical scholars regard them as the work of someone other than Paul. The Church included the Letter to the Hebrews as the fourteenth letter of Paul until the Reformation. Pauline authorship is now generally rejected, and the real author is unknown.”

‘‘রোমীয়, ১ করিন্থীয়, ২ করিন্থীয়, গালাতীয়, ফিলিপীয়, ১ থিষলনীকীয় এবং ফিলীমন: এগুলো পলের রচনা বলে প্রায় সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। রোমীয় এবং গালাতীয় ছাড়া অন্য সবগুলোর শীর্ষদেশের লেখনি প্রমাণ করে যে, এগুলো পল এবং অন্তত আরো এক ব্যক্তি থেকে এসেছে। সে যুগের চিঠিপত্রের ক্ষেত্রে এ রীতিটা প্রচলিত ছিল না। পত্রগুলোর রচনায় এ দ্বিতীয় ব্যক্তির ভূমিকা কতটুকু ছিল তাও পরিষ্কার নয়। ইফিষীয়, কলসীয় ও ২ থিষলনীকীয়- এ তিনটা পত্রের ক্ষেত্রে পলের দ্বিতীয় পর্যায়িক রচয়িতা হওয়ার বিষয়ে কিছু সমর্থন বিদ্যমান। যাজকীয় পত্রত্রয়: ১ ও ২ তীমথিয় এবং তীত একই লেখকের হতে পারে, তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক-সমালোচক গবেষকের মতে এ পত্রগুলো পলের নয়, বরং অন্য লেখকের রচনা। ইব্রীয় বা ইবরানী পত্রটাকে খ্রিষ্টান চার্চ পলের চৌদ্দতম পত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল সংস্কার পর্যন্ত। বর্তমানে সাধারণভাবে স্বীকৃত যে এটা পলের লেখা নয়। এটার প্রকৃত লেখক অজ্ঞাতপরিচয়।’’

উইকিপিডিয়ার পলীয় পত্রাবলির রচয়িতা (Authorship of the Pauline epistles) প্রবন্ধে এ বিষয়ে আরো তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এ থেকে আমরা দেখছি যে, নতুন নিয়মের যে তেরটা পুস্তক বা পত্রের মধ্যে লেখক হিসেবে পলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মাত্র সাতটা পত্র প্রকৃতপক্ষে তাঁর রচিত। অন্যগুলো তাঁর নামে অজ্ঞাত লেখকের রচিত ‘বেনামি’ পুস্তক মাত্র। বিশেষত নতুন নিয়মের ১৯ নং পুস্তক ‘ইব্রীয়’, ‘হিব্রু’ বা ‘ইবরানী’ পুস্তক। হিব্রু বলতে এখানে  হিব্রুভাষী ইহুদি বা বনি-ইসরাইল জাতি উদ্দেশ্য। ইহুদিদেরকে উদ্দেশ্য করে এ পুস্তকটা রচিত। পুস্তকটার পূর্ণ নাম: ‘ইব্রীয়/হিব্রু/ ইবরানীদের (ইহুদিদের) প্রতি প্রেরিত শিষ্য সাধু পলের পত্র’ (The Epistle of St. Paul the Apostle to the Hebrews)। কিং জেমস ভার্শন ও পূর্ববর্তী সকল বাইবেলেই পাঠক এ নামটা দেখবেন। পুস্তকটার মধ্যে লেখকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে দ্বিতীয়-তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা দাবি করেছেন যে, এ পুস্তকটা সাধু পল ইহুদিদের উদ্দেশ্যে হিব্রু ভাষায় রচনা করেছিলেন। পরে তা গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বর্তমানে বাইবেল বিশেষজ্ঞরা পাণ্ডুলিপিগত ও ঐতিহাসিক গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যে, দুটো দাবিই ভিত্তিহীন অসত্য। এ পত্রটা হিব্রু ভাষায় রচিত হয়নি। এটা মূলতই গ্রিক ভাষায় রচিত এবং এর লেখক অজ্ঞাত পরিচয়। এজন্য বর্তমানে বিভিন্ন ভাষার বাইবেলে পুস্তকটার নাম লেখা হচ্ছে ‘ইব্রীয়গণের প্রতি পত্র’ (The Letter to the Hebrews)। বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দস ও অন্যান্য সংস্করণে স্বীকার করা হয়েছে যে, পুস্তকটার লেখক অজ্ঞাত পরিচয়।

পলীয় পত্রাবলির বর্তমানে বিদ্যমান প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপির খণ্ডতে টুকরোগুলো (earliest known fragment) ২০০ থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লেখা। (উইকিপিডিয়া, Dating the Bible)