ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
সুন্নতের আলো ও বিদআতের আঁধার ২য় অধ্যায় : বিদআতের অন্ধকার ইসলামহাউজ.কম
বিদআত প্রবর্তণের কারণ

বিদআত সৃষ্টির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন-

(১) অজ্ঞতা

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَلاَ تَقفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفؤَاد كُلُّ أُؤُلَئِكَ كَانَ عَنهُ  مَسْئُولاً.(الإسراء : 36)

অর্থঃ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় এর প্রত্যেকটির ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।[1]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنهاَ وَ مَا بَطَنَ وَاْلإِثْمَ وَ الْبَغْيَ بَغَيْرِالْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُواْ بِاللّ‍‍هِ مَالَمْ يُنَزِّلُ بِهِ سٌلْطَانًا وَ اَنْ تَقٌولُواْ عَلَى اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ. (الأعراف: 33)

অর্থঃ আপনি বলে দিন, প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অসংগত বিরোধিতা এবং কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করা, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোন দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই, এ সবই আমার রব নিষিদ্ধ করেছেন।[2]

আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ

إِنَّ اللهَ لَا يَنْتَزِعُ الْعِلْمَ مِنَ النَّاسِ اِنْتِزَاعًا، وَلكِنْ يَقْبَضُ الْعُلَماَءَ فَيُرْفَعُ  الْعِلْمُ مَعَهُمْ، وَيُبْقي فِيْ النَّاسِ رُؤُوْسًا جُهّالاً يَفْتُوْنَ بِغَيْرِ عِلْمٍ  فَيَضَِلُّوْنَ وَ يُضِِلُّوْنَ .(متفق عليه)

অর্থঃ আল্লাহ মানুষ থেকে (দ্বীনি) জ্ঞান ছিনিয়ে নেবেন না বরং আলেমগণকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন, তাদের সাথে ইল্মও উঠে যাবে। দুনিয়াতে মুর্খ নেতারা বেঁচে থাকবে তারা (কুরআন-হাদীসের) ইল্ম ব্যতীত ফতোয়া দিবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।[3]

(২) প্রবৃত্তির অনুকরণ

প্রবৃত্তির অনুকরণ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর যা মানুষকে বিদআত সৃষ্টিকারী ও আত্মপুজারী বানিয়ে দেয়।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

يَادَاودُ إِنّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِى الاَرْضِ فَاحْكٍََُِِِمِِِْْْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَ لاَ تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِِِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللهِ إِنَّ الَّذِينَ يَِضلُّوْنَ عَنْ سَبِيلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدُ بِماَ نَسُواْ يَوْمَ الْحِساَبِ. (ص: 26)

অর্থঃ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে সুবিচার কর এবং প্রবৃত্তির (খেয়াল খুশির) অনুসরণ কর না। কেননা এটা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ পরিত্যাগ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কেননা তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে।[4]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا. (الكهف: 28)

অর্থঃ আপনি তার অনুসরণ করবেন না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে অমনোযোগী করে দিয়েছি। সে আপন প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।[5]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

أَفَرَءَيتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ  وَ قَلْبَهِ و جَعَلَ عَلَى بَصَرَهِ غِشوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللهِ أَفَلاَ تَذَكَّرُونَ .(الجاثية: 23)

অর্থঃ আপনি কি ঐ ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করেছেন, যে প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ যথার্থই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপরে রেখেছেন আবরণ। অতঃপর আল্লাহর পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?[6]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَمَنْ أَضَلُّّّ مِمَّنِ اتَّبَع هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّّنَ اللهِ.( القصص: 50)

অর্থঃ আল্লাহর পক্ষ হতে হেদায়াত ব্যতীত যে আত্মপুজারী হয়, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে?[7]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

إِن يَتَّبعُونَ إِلاَّ الظَنَّ وَمَا تَهْوَى اْلأَنْفُسُ وَلَقَدْ جَآءَهُمْ مِّن رَّبِّهُمْ الْـهُدى.(النجم: 23)

অর্থঃ তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের নিকট আপন রবের পথ নির্দেশ এসেছে।[8]

(৩) সন্দিহান হওয়া

বিদআতপন্থী সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বিদআতে জড়িয়ে পড়ে।

 আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ  عَلَيْكَ الْكِتاَبَ مِنْهُ  أياتٌ مُّحْكَماتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَاب وَأَخَرُ مُتَشَابِهاتٌ فَأَمّا الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيَغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَآءَ تَأْوِيْلِهِ، وَ مَايَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلاَّ اللهُ وَالرَّاسِخُونَ  فِى الْعِلْمِ يَقٌولٌوْنَ  أمَنَّا بِهِ كُلٌّ  مِّنْ عِند رَبّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ  إِلآَّ أُولُواْ الأَلْبَابِ. (آل عمران: 7)

অর্থঃ তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন যাতে সুস্পষ্ট ও অ^কাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে। ওগুলো কিতাবের মূল আর কিছু আয়াত অস্পষ্ট। অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও (ইচ্ছামত) ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে। অথচ আল্লাহ ব্যতীত এর অর্থ কেউই জানে না। যারা জ্ঞানী তারা বলে, আমরা এতে বিশ্বাস করি। সবই আমাদের রবের নিকট হতে আগত। জ্ঞানীরা ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না।[9]

(৪) যুক্তির উপর নির্ভর করা

যে ব্যক্তি আকল বা যুক্তির উপর নির্ভর করে এবং কুরআন ও সুন্নাহ ছেড়ে দেয় অথবা কোন একটি ছেড়ে দেয়, সে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।    

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَ مَآ أتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا  نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُواْ وَاتَّقُواْ اللهَ إنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.(الحشر: 7)

অর্থঃ রাসূল তোমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।[10]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِن وَ لاَ مُؤمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَ رَسوُلُه أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمْ الْخيَرَةُ مِنْ أَمْرِِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللهَ ورَسَولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً مُّبِينًا.(الأحزاب : 36)

অর্থঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যদি কোন ব্যাপারে ফায়সালা করেন তখন কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে (অন্য কোন) সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর হুকুমের অবাধ্য হল সে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।[11]

(৫) অন্ধ অনুকরণ ও গোঁড়ামী

অধিকাংশ বিদআতপন্থী তাদের পূর্ব পুরুষ ও পীর-মাশায়েখদের তাকলীদ তথা অন্ধ অনুকরণ এবং নিজ মাজহাবের ব্যাপারে গোঁড়ামী করে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ اتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ اللهُ  قاَلُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَآ أَلْفَيْنَا عَلَيهِ آبَاءَنَا.(البقرة : 170)

অর্থঃ যখন তাদের বলা হয়, তোমরা আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ কর; তখন তারা বলে, বরং আমরা তারই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদের পেয়েছি।[12]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

بَلْ قاَلُوآْإِنّاوَجَدْنَآ آبَاءَنَا عَلَى أُمّـةٍ وَ اِنَّا عَلَى آثَارهِمْ مُّهْتَدُونَ.(الزخرف : 22)

অর্থঃ বরং আমরা পূর্বপুরুষদের একটি মতাদর্শের উপর পেয়েছি এবং তাদের পথ ধরেই আমরা হেদায়াত প্রাপ্ত হব।[13]

বিদআতপন্থীদের নিকট তাদের বিদআতী কর্মকান্ড আকর্ষণীয় করে দেয়া হয়।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

أَفَمَن زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَءَاهُ حَسَنًا فَإِنَّ اللهَ يُضِلُّ مَن يَشَآء وَ يَهْديْ مَنْ يَّشَاءُ فَلاَ تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ. (الفاطر: 8)

অর্থঃ কাউকে যদি তার মন্দ কর্ম সুন্দর করে দেখানো হয় তখন সে ওটাকে উত্তম মনে করে। আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করেন। অতএব আপনি তাদের জন্য আক্ষেপ করে নিজ প্রাণকে ধ্বংস করবেন না। তারা যা করে আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সম্মক জ্ঞাত।[14]

বিদআতপন্থীর পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

يَوْمَ تُقَلَّبُ وَجُوهُهُمْ فِىالنَّارِ يَقُولُونَ يَالَيْتَنَآ أَطَعْنَا اللهَ وأَطَعْنَا الرَّسُولا. وَقَالُواْ رَبَّنَا إنَّآ أَطَعْنَا سَادَتنَا وَكَبُرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السّبِيلا. رَبَّنَآ ءَاتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذاَبِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيْرًا.(الأحزاب:66-68)

অর্থঃ যে দিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট পালট করা হবে সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করতাম! তারা আরো বলবে, হে আমাদের রব! আমরা নিজ নেতা ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন ও তাদের উপর লানত বর্ষণ করুন।[15]

(৬) বিদআতপন্থীদের সংশ্রব ও তাদের সাথে উঠা বসা করা

বিদআতপন্থীদের সঙ্গ দেয়া ও তাদের সাথে উঠা বসা করার দ্বারাও সমাজে বিদআত প্রচার-প্রসার লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা বিদআতের অনুসারীদের সংশ্রবকে নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَيَوْمَ يَعضُّ الظَّالِم عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِيْ اتّّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِِ سَبِيلاً. يَاوَيْلَتَي لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلاً. لَّقَدْ أَضَلّنِى عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَآءَنِى وَكَان الشَّيْطَانُ لِلإِنْساَنِ خَذُولاً.(الفرقان: 27-29)

অর্থঃ যালিমরা সে দিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়! দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম। আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল । শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।[16]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَإِذَا رَأْيَتَ الذِّيْنَ يَخُوضُونَ فِي ءَايَاتِنَا فَأَعْرَضَ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوَضُواْ فِى حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشِّيْطَانُ فَلاَ تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ.    (الأنعام : 68)

অর্থঃ যখন আপনি দেখবেন লোকজন আমার আয়াতসমূহে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করছে। তখন আপনি তাদের হতে দূরে সরে যাবেন, যতক্ষণ না তারা অন্য কোন প্রসঙ্গে নিমগ্ন হয়। শয়তান যদি এটা আপনাকে ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর আর এ যালিমদের সাথে বসবেন না।[17]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَقَدْ نَزَّل عَلَيْكُمْ فِى الْكِتَاب أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ ءَاياتِ اللهِِ يُكْفَرُبِهَا وَ يُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُواْ مَعَهُمْ حتَّى يَخُوضُوْا فِى حَديْث غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلَهُمْ إنَّّّ اللهَ جَامِعُ الْمُناَفِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا.(النساء: 140)

অর্থঃ নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের নির্দেশ করছেন যে, যখন তোমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কারো অবিশবাস ও উপহাস করার কথা শুনবে, তখন তাদের সাথে বসবে না যে পর্যন্ত না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের সাদৃশ হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন।[18]

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً.(بخاري ومسلم)

অর্থঃ নিশ্চয়ই সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের দৃষ্টান্ত হল মিশ্ক আম্বর বহনকারী ও কামারের ন্যায়। অতঃপর মিশ্ক বহনকারী হয়ত তোমাকে কিছু দেবে অথবা তুমি তার থেকে কিছু কিনবে। আর তা না হলে কমপক্ষে তার  থেকে সুঘ্রাণযুক্ত বাতাস পাবে। আর কামার হাপরে ফুৎকারের মাধ্যমে হয়ত তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে অথবা তার থেকে  তুমি দূর্গন্ধময় বাতাস পাবে।[19]

(৭) আলেমদের নিশ্চুপ থাকা ও সঠিক ইল্ম গোপন করা

এটা লোক সমাজে বিদআত ও ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُون مَآ أَنزَلْنَا منَ الْبَيّنَاتِ وَالْهُدى مِن بَعْدِ مَابَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِىالْكِتَابِ أُولئِكَ يَلْعَنُهُمُ الله ويلعنهم اللاَّعِنُونَ إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ وَأَصْلَحُواْ و بَيَّنُواْ فَأُوْلئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأنَا التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ. (البقرة: 159-160)

অর্থঃ আমি যে সকল ষ্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, তা মানুষের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐ সকল বিষয় গোপন করে, আল্লাহ তাদের উপর লানত করেন এবং অভিসম্পাতকারীগণও লানত করে থাকেন। কিন্তু তারাই লানত থেকে মুক্ত যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে ও সঠিক বিষয় প্রকাশ করেছে। আমি তাদের তাওবা কবুল করি। আমিই তওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু।[20]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ  يَكْتُمُونَ مَآ أَنزَلَ اللهُ مِنَ الْكِتَابِ وَ يَشْتَرُونَ بَهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أولئك مَا يَأْكُلُونَ فِى بُطُونِهِمْ  إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِيهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ أَلِيْمُ.(البقرة-174)

অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ যা কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন তা যারা গোপন করে ও সামান্য মূল্যে বিক্রি করে, তারা স্ব-স্ব উদরে অগ্নি ছাড়া আর কিছুই ভক্ষণ করে না। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং এদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।[21]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَاِذْ أَخَذَ اللهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ لَتُبَيِنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلاَ تَكْتُمُونَهُ  فَنَبَذُوْهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمْ  وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً  فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ.(آل عمران- 187)

অর্থঃ স্মরণ করুন, যখন আহলে কিতাবদের থেকে আল্লাহ্ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা নিশ্চয়ই এটা মানুষের কাছে প্রকাশ করবে, গোপন করবে না। এরপরও তারা তা অগ্রাহ্য করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করলো। অতএব তারা যা ক্রয় করে তা কতই না নিকৃষ্ট।[22]

 আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের একটি দলের উপর দাওয়াত ইলাল্লাহ, সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা ওয়াজিব করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَلْتَكُنْ مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَ يَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُوْلئِكَ هُمُ المُفْلِحُـونَ. (آل عمران: 104)

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে এরূপ একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। এরাই সফলকাম।[23]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ. (مسلم)

অর্থঃ তোমাদের যে কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা করে। যদি এ শক্তি না থাকে তাহলে যেন মুখ দ্বারা বাধা প্রদান করে, তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে যেন অন্তরে ঘৃণা করে। এটা ঈমানের নিম্নতম  স্তর।[24]

এ হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক মুসলিমের উপর নিজের ক্ষমতা ও শক্তি অনুযায়ী সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা ওয়াজিব।

এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইব্নে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَا مِنْ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنْ الْإِيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ.

  অর্থঃ আমার পূর্বে যত নবী এসেছেন তাদের প্রত্যেকেরই স্বীয় উম্মতের মধ্য থেকে কিছু সাথী এবং ঘনিষ্ঠ লোক ছিল। যারা তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর হুকুম মেনে চলত। পরবর্তীতে এমন এক প্রজন্ম এল, যারা যা বলত তা করত না এবং তারা এমন কাজ করত যার নির্দেশ ছিল না। যে ব্যক্তি সর্বশক্তি দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করবে সে মুমিন, যে মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করবে সে মুমিন এবং যে অন্তরে ঘৃণা করবে সেও মুমিন। এর বাইরে কারো অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।[25]

আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ  (ترمذي, أبو داود و ابن ماجة)

অর্থঃ যদি কাউকে এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে অতঃপর সে তা গোপন করে, তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে।[26]

(৮) কাফেরদের সাদৃশ অবলম্বন ও তাদের অনুসরণ করা

এটা মুসলিমদের মাঝে বিদআত ছড়ানোর বড় কারণ। এ বিষয়টি আবু ওয়াকেদ লাইছি রহ. বর্ণিত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়। তিনি বলেন, আমরা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হুনাইনের দিকে রওয়ানা হলাম। আমরা বিগত দিনের কর্মকান্ড (কুফুরী) নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কেননা তারা মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি বললেন, একটি গাছের সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে গিয়ে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য একটি ‘‘জাতে আনওয়াত’’ (এক প্রকার গাছ মুশরিকরা যার পূজা করত) এর ব্যবস্থা করে দিন যেমনটি তাদের অর্থাৎ কাফেরদের জন্য রয়েছে। তাদের একটি বরই গাছ ছিল যার পার্শ্বে তারা নীরবে বসে উপাসনা করত এবং তাতে তাদের যুদ্ধের অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। তারা এটাকে ‘‘জাতু আনওয়াত’’ বলত। যখন আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর কাছে একথা বললাম, তখন তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার! তোমরা এমন কথা বলছ, যেমন বণী ইসরাইলের লোকেরা মূসা (আঃ) কে বলেছিল।

اجْعَل لَّنا إِلـهًاكَمَا لَهُمْ ءَالِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ. (الأعراف: 138)

‘‘আপনি আমাদের জন্য মাবুদ নির্বাচন করুন, যেমন তাদের জন্য অনেক মা‘বুদ রয়েছে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা তো মূর্খ জাতি।[27]

তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের পথ অবলম্বন করবে।[28]

এ হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, যেমনি কাফিরদের সাদৃশ বনী ইসরাইলদের উপরোক্ত অসংগত প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিল তেমনি সাহাবীদেরকেও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দ্বারা বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন একটি গাছের প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করেছিল। এভাবেই অধিকাংশ মানুষ কাফিরদের অনুসরণ বা সাদৃশ অবলম্বন করতে গিয়ে  বিদআত ও শিরকে লিপ্ত হয়। যথা- মিলাদ মাহফিল, জানাযা সংক্রান্ত বিদআত, কবরের উপর বিল্ডিং নির্মাণ ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এ সকল বিষয় বা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ প্রবৃত্তি পূজা ও বিদআতেরই অন্তর্ভুক্ত।

এ বিষয়টি আবু সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণিত হাদীস দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ؟(متفق عليه)

    অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমরা পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও তা করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইহুদী-খৃষ্টানদের? তিনি বলেন, তাদের ব্যতীত আর কাদের?[29]

ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘‘السَنَنُ ’’ অর্থ রাস্তা। হাদীসের শব্দ شبر، ذراع و جحر الضب  তথা বিঘত, হাত ও গুইসাপের গর্তে প্রবেশ দ্বারা এ উম্মতের পুর্বেকার লোকদের সাথে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ ও অন্যায়ের মাঝে হুবহু মিল থাকার উপমা দেয়া হয়েছে, কুফরীতে মিল থাকার উপমা নয়। এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মু‘জিযা বাস্তবায়িত হল। কেননা তিনি যে সংবাদ দিয়ে গেছেন, তা আজ সংঘটিত হচ্ছে।

প্রকাশ থাকে যে,  বিঘত, হাত, রাস্তা ও গর্তে প্রবেশ এ সবই শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ ও নিন্দিত বিষয়ে তাদের (কাফেরদের) অনুসরণ-অনুকরণ করার কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপমা হিসেবে তুলে ধরেছেন, অথচ তিনি অমুসলিমদের সাদৃশ অবলম্বন করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

بُعٍثْتُ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ بِالسَّيْفِ حَتّى يَعْبُدَ اللهَ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَجَعَلَ رِزْقِيْ تَحْتَ ظِلِّ رَمْحِيْ وَجَعَلَ الذِلُّ وَالصِّغَارَ عَلى مَنْ خَالَفَ أَمْرِيْ، وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.  

(أحمد)

অর্থঃআমি কিয়ামতের পূর্বে তরবারীসহ প্রেরিত হয়েছি যাতে (মানুষ) এক আল্লাহর ইবাদত করে যার কোন অংশিদার নেই। আর তিনি আমার জীবিকাকে বর্শার ছাঁয়ার নিচে রেখেছেন। যারা আমার দ্বীনের পরিপন্থী কাজ করবে তাদের জন্য রেখেছেন অপমান ও লাঞ্ছনা। আর যারা কোন জাতির সাদৃশ অবলম্বন করবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।[30]

(৯) দুর্বল ও বানোয়াট হাদীসের উপর নির্ভর করা

এ ধরণের হাদীসের উপর নির্ভর করার ফলে অধিকাংশ বিদআত সৃষ্টি হয় ও তার প্রচার-প্রসার ঘটে। অধিকাংশ বিদআতপন্থীই অনির্ভরযোগ্য, দুর্বল ও মিথ্যা হাদীসের উপর নির্ভর করে। তারা এমন হাদীসের উপর নির্ভরশীল যা হাদীস বিশারদগণের নিকট অগ্রহণযোগ্য। তারা সহীহ হাদীস পরিত্যাগ করে। যার ফলে অনিবার্য ক্ষতি, ধ্বংস ও বিপদে পতিত হয়। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকর্ম সম্পাদন ও অসৎকর্ম পরিত্যাগ সম্ভব নয়।[31]

(১০) বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন

এটাও বিদআত প্রসারের অন্যতম কারণ এবং শিরকে লিপ্ত হওয়ারও কারণ। কেননা আদম (আঃ) এর পরবর্তী ১০ যুগ পর্যন্ত লোকজন তাওহীদ ও আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। তারপর থেকে লোকজন তৎকালীন নেক্কার ব্যক্তিবর্গের দিকে ঝুঁকে গিয়ে তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন করতে করতে এক পর্যায়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের ইবাদত শুরু করে দেয়। এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের দিকে আহবান কল্পে নূহ (আঃ) কে প্রেরণ করেন, এরই সূত্র ধরে তাওহীদের বানী নিয়ে নবী-রাসূল (আঃ) প্রেরণের ধারাবাহিকতা শুরু হয়।

সীমালংঘন ব্যক্তি পর্যায়েও হতে পারে। যথা-ইমাম ও অলীদের নিষ্পাপ মনে করা এবং তাদেরকে প্রাপ্য মর্যাদার চেয়ে উঁচু মর্যাদায় আসীন করা। এ ধরণের বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে তাদের ইবাদতও করা হয়।

সীমালংঘন দ্বীনের মাঝেও হতে পারে। যথা-আল্লাহর দেয়া বিধানে অতিরঞ্জন অথবা কোন বিষয়ে কঠোরতা কিংবা অন্যায়ভাবে কাউকে কাফির  বলে আখ্যায়িত করা।

সীমালংঘন বলতে বুঝায় : বিশ্বাস ও আমলের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করা। এটা কারো প্রশংসা বা দূর্নাম বর্ণনার ক্ষেত্রে অত্যধিক বাড়াবাড়ির ফলে হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করতে গিয়ে আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্য করে বলেনঃ

يَااَهْلَ الكِتَابِ لاَ تَغْلُوأ فِى دِينِكُمْ. (النساء: 171)

অর্থঃ হে আহলে কিতাবরা! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না।[32]

তেমনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন করতে নিষেধ করেছেন।

ইবনে আববাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

وَإِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِي الدِّينِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ الْغُلُوُّ فِِِي الدِّينِ.(نسائي)

অর্থঃ তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন থেকে বিরত থাক, কেননা তোমাদের পূর্ববতী লোকেরা দ্বীনের ব্যাপারে সীমালংঘন করার ফলে ধ্বংস  হয়েছে।[33]

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দ্বীনের মধ্যে সীমালংঘনই শিরক ও বিদআত সৃষ্টি এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের অন্যতম কারণ।

দ্বীনের মধ্যে সীমালংঘনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ.(بخاري)

অর্থঃ তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না যেমনিভাবে খ্রীষ্টানরা  ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি আল্লাহর বান্দা, তাই আমাকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল বলবে।[34]

[1] ইসরাঃ ৩৬
[2] আ‘রাফঃ ৩৩
[3] বুখারী : ৭৩০৭ ও মুসলিম : ২৬৭৩
[4] ছোয়াদঃ ২৬
[5] কাহাফঃ ২৮
[6] জাছিয়াঃ ২৩
[7] কাছাছঃ ৫০
[8] নাজমঃ ২৩
[9] আলে-ইমরানঃ ৭
[10] আল-হাশর : ৭
[11] আহযাব : ৩৬
[12] আল-বাকারাঃ ১৭০
[13] যুখরুফঃ ২২
[14] ফাতির : ৮
[15] আহযাবঃ ৬৬-৬৮
[16] ফুরকানঃ ২৭-২৯
[17] আনআমঃ ৬৮
[18] নিসাঃ ১৪০
[19] বুখারী : ৫৫৩৪ ও মুসলিম : ২৬২৮
[20] বাকারাঃ ১৫৯-১৬০
[21] বাকারাঃ ১৭৪
[22] আলে-ইমরানঃ ১৮৭
[23] আলে-ইমরানঃ ১০৪
[24] মুসলিম : ৪৯
[25] মুসলিম : ৫০
[26] তিরমিযী :২৬৪৯ ও আবু দাউদ : ৩৬৫৮ ইবনে মাজাহ: ২৬৬
[27] আ‘রাফ : ১৩৮
[28] তিরমিযী : ২১৮০
[29] বুখারী : ৭৩২০ ও মুসলিম : ২৬৬৯
[30] আহমদ : ২/৫০
[31] ফতোয়া ইবনে তাইমিয়াঃ ২২নং খন্ড; ৩৬১-৩৬৩, ইতিসামঃ আল্লামা শাতেবী ১মঃ ২৮৭-২৯৪
[32] নিসাঃ ১৭১
[33] নাসাঈ : ৫/২৬৮
[34] বুখারী : ৩৪৪৫