ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী الأصل الخامس: الإيمان باليوم الآخر - পঞ্চম মূলনীতি: শেষ দিবসের প্রতি ঈমান শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
الروح مخلوقة - রূহ একটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, উম্মাতের সালাফগণ, ইমামগণ এবং সমস্ত আহলে সুন্নাতের ঐক্যমতে মানুষের রূহ একটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি। মুসলিমদের একাধিক ইমাম এটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের ইজমা বর্ণনা করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়ার ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রূহ যে একটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি অনেক পদ্ধতিতেই তা সাব্যস্ত করা যায়। অতঃপর তিনি ১২টি পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন।

(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴾ ﴿اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ‘‘প্রত্যেক জিনিষের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ’’ এ কথার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, كل شيئ এর মধ্যে যে عموم (ব্যাপকতা) রয়েছে মানুষের রূহও তার অন্তর্ভুক্ত। তাই রূহও আলাদা একটি সৃষ্টি। সুতরাং উপরোক্ত ব্যাপকতা থেকে কোনোভাবেই রূহকে আলাদা করা হয়নি। তবে আল্লাহর ছিফাতগুলো উপরোক্ত ব্যাপকতার মধ্যে গণ্য নয়। কেননা সেগুলো তার অতি সুন্দর নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা পূর্ণতার বিশেষণে বিশেষিত একক মাবুদ। তার পবিত্র সত্তা পূর্ণতার বহু গুণে গুণান্বিত। তিনিই একমাত্র স্রষ্টা। তিনি ছাড়া বাকীসব সৃষ্টি।

(২) আল্লাহ তা‘আলা যাকারীয়া (আঃ)কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,

﴿كَذَٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِن قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا﴾

‘‘এভাবেই হবে। তোমার রব বলেন, এ তো আমার জন্য সামান্য ব্যাপার মাত্র। এর আগে আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি। তখন তুমি কিছুই ছিলে না’’। (সূরা মারইয়াম: ৯)

 দেহ এবং রূহকে একসাথে মিলিয়ে এখানে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে যাকারীয়া (আঃ) এর রূহ ও দেহকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, সে কিছুই ছিল না, অতঃপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু তার শরীরকে সম্বোধন করা হয়নি। রূহ বিহীন শরীর সম্বোধন বুঝে না। তাই তাকে সম্বোধন করে কিছু বলা হয় না এমনকি তার বিবেক-বুদ্ধিও থাকেনা। সুতরাং কেবল মাত্র রূহ সম্বোধন বুঝে, অনুধাবন করে এবং তাকে সম্বোধন করা হয়।

(৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ﴾

‘‘আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করি, অতঃপর তোমাদেরকে মানবাকারে রূপদান করি, অতঃপর ফেরেশতাদেরকে বলি, তোমরা আদমকে সেজদাহ করো। তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সেজদাহ করলো। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না’’। (সূরা আরাফ: ১১)

এ সংবাদটি আমাদের রূহসমূহ এবং দেহসমূহ সৃষ্টি করাকেও শামিল করে। যেমন বলেছেন অধিকাংশ আলেম। অথবা শুধু রূহের ব্যাপারে এটি বলা হয়েছে দেহ সৃষ্টি করার আগেই। যেমন এক শ্রেণীর লোক ধারণা করে থাকে। উভয় অবস্থাতেই উক্ত সম্বোধনটি রূহ সৃষ্টি করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট।

(৪) কুরআন ও সহীহ হাদীছের সুস্পষ্ট দলীলগুলো প্রমাণ করে যে, রূহ ও শরীর মিলেই মানুষ আল্লাহর বান্দায় পরিণত হয়। রূহ ব্যতীত শুধু দেহের উপর আব্দ তথা বান্দা কথাটি প্রযোজ্য হয় না। বরং রূহের ইবাদতই হলো মূল আর শরীর হলো তার অনুগামী। এমনিভাবে শরী‘আতের হুকুম-আহকামের ক্ষেত্রেও রূহকে সম্বোধন করা হয়েছে। শরীরও তার অনুগামী। রূহ মানুষকে পরিচালিত করে এবং যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করে। সুতরাং ইবাদতের ক্ষেত্রেও দেহ রূহএর অনুগামী।

(৫) আল্লাহ তা‘আলা সূরা দাহারের প্রথম আয়াতে বলেন,

﴿هَلْ أَتَىٰ عَلَى الْإِنسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْئًا مَّذْكُورًا﴾

‘‘মানুষের উপরে কি অন্তহীন মহাকালের এমন একটি সময় অতিবাহিত হয়নি যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না?’’। সুতরাং মানুষের রূহ যদি অনন্ত-অবিনশ্বর অসৃষ্ট সত্তা হতো, তাহলে তার ব্যাপারে এটি বলা হতো যে, সে সর্বদাই ছিল। সুতরাং মানুষ হয় রূহ সহকারে; শুধু দেহকে মানুষ বলা হয় না।

(৬) সহীহ বুখারী এবং অন্যান্য কিতাবে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«الْأَرْوَاحُ جُنُودٌ مُجَنَّدَةٌ فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ وَمَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ»

‘‘রূহগুলো সমবেত একটি সেনাবাহিনীর মত। রূহজগতে এগুলোর মধ্য থেকে যারা পরস্পর পরিচিত থাকে, তারা দুনিয়াতে এসেও পরস্পরের সাথে মিলিত হয় এবং যারা রূহজগতে পরস্পর অপরিচিত থাকে, দুনিয়াতে এসেও তাদের পরস্পরের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়’’। সমবেত রূহগুলো মাখলুক ছাড়া অন্য কিছু নয়।

(৭) রূহএর অন্যতম বিশেষণ এ যে, সেটা মৃত্যু বরণ করে, সেটাকে কবয করা হয়, আটকিয়ে রাখা হয় এবং পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ বিশেষণগুলো কেবল নশ্বর ও প্রতিপালিত সৃষ্টির জন্যই প্রযোজ্য হতে পারে।