ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
মানহাজ (আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ) নিত্য নতুন মানহাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উপকারী জবাব শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
প্রশ্ন-৬৩ : বর্তমানে একটি নতুন মতবাদ ও চিন্তাধারা ছড়িয়ে পড়েছে যে, কোন ব্যক্তি বিদআত প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে দলীল-প্রমাণ পেশ না করা পর্যন্ত এবং সে কোন আলিম বা মুফতীর শরণাপন্ন না হয়ে নিজে নিজের বিদআত নিয়ে পরিতৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিদাতী বলা যাবে না। এ ব্যাপারে সালাফদের মানহাজ কী?

উত্তর : বিদআত[1] হলো কিতাবুল্লাহ ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের কোন দলীল ছাড়াই দীনের মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি বা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد

‘যদি কেউ আমাদের দীনের মধ্যে কোন কিছু সংযোজন করে যা এর মধ্যে ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত’।[2] তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

وإياكم ومحدثات الأمور، فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة، وكل ضلالة في النار

‘তোমরা দীনের মধ্যে আবিষ্কৃত নতুন নতুন বিষয় থেকে সতর্ক থাকবে। কেননা প্রত্যেক নবাবিষ্কারই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণামই হলো জাহান্নাম।[3] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلاً مَا تَذَكَّرُونَ

‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ হতে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না’। (সূরা আল-আরাফ আয়াত নং-০৩)

সুতরাং বিদআত হলো দীনের মধ্যে কোন কিছু নতুন আবিষ্কার করা। বিদআতকে কোন ব্যক্তি বিশেষের মত বা প্রবৃত্তির দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। শারঈ কোন বিষয় কোন ব্যক্তি বিশেষের দিকে প্রত্যাবর্তন করে না; বরং প্রত্যাবর্তন করে কিতাবুল্লাহ এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের দিকে। লোকজন যে কাজকে চেনে সেটাই সুন্নাত আর যে কাজকে চেনে না সেটাই বিদআত- বিষয়টা এমন নয়। এমনিভাবে কোন ব্যক্তি কোন কাজকে সুন্নাত বললেই সেটা সুন্নাত হয়ে যায় না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কারো কোন চিন্তা-চেতনা ও মতামতের মুখাপেক্ষী করেননি। বরং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ ওহী দ্বারা সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী করেছেন। সুন্নাত হলো দ্বীনী যে সকল বিষয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নিকট থেকে নিয়ে এসেছেন। পক্ষান্তরে বিদআত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে আসেননি এমন কোন কথা ও কাজ যা দীনের নামে চালিয়ে দেয়া হয়। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যাচাই বাছাই করা ছাড়া কারো জন্য কোন কাজকে সুন্নাত অথবা বিদআত বলার অবকাশ নাই।

যদি কেউ অজ্ঞতাবশতঃ হক মনে করে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজ করে এবং তার নিকট বর্ণনা করার মত কেউ না থাকে তাহলে সে মা‘যুর বা ওযরগ্রস্থ বলে বিবেচিত হবে। কিন্ত সে তার কাজের বাস্তবতার কারণে বিদাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তার কাজটি বিদআত বলে গণ্য হবে। আমাদের যুবকেরা যারা এই মানহাজের উপর চলে এবং কোন বিষয়ে তাদের মনগড়া (প্রবৃত্তির আলোকে) হুকুম সাব্যস্ত করে তাদের প্রতি আমাদের উপদেশ হলো তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং ইলম ছাড়া দীন সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কথা না বলে। জাহিল বা মূর্খের জন্য হালাল-হারাম, সুন্নাত-বিদআত, হিদায়াত-ভ্রষ্টতা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলা জায়েয নয়। ইলম ছাড়া উল্লেখিত বিষয়াবলি সম্পর্কে কথা বলা শিরকের নামান্তর। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالأِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَاناً وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَالا تَعْلَمُونَ

‘বল, আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা, যা তোমরা জানো না’ (সূরা আল আ’রাফ ৭/৩৩)।

আল্লাহ তা’আলা ইলম ছাড়া তার সম্পর্কে কিছু বলাকে শিরকের সাথে উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা একাজের ভয়াবহতা আন্দাজ করা যায়। আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলা অন্য কারো ব্যাপারে মিথ্যা বলার মত নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর মিথ্যারোপ করার মত নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من كذب علي متعمداً فليتبوأ مقعده من النار

‘যে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঘর বানিয়ে নেয়’।[4]


[1]. বিদআত শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো পূর্ব নমুনা ছাড়াই কোন কিছু আবিষ্কার করা। পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দীনের নামে নব আবিষ্কৃত পদ্ধতি যে পদ্ধতি অবলম্বন করার দ্বারা ইবাদত আল্লাহর নিকট বেশি কবুল হবে মনে করা হয়। (আল ই‘তিছাম খ. ০১ পৃ. ৫০)।

[2]. সহীহ, বুখারী ২৫৫০, মুসলিম ১৭১৮

[3]. হাকিম খ.০১ পৃ.৯৭ নাসাঈ.১৫৭৭।

[4]. সহীহ, বুখারী হা/১১০ মুসলিম হা/৩।