ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
জানাযা দর্পণ কবর যিয়ারতের দুআ আবদুল হামীদ ফাইযী
কবর যিয়ারতের দুআ

সুন্নাহতে কবর যিয়ারতের কয়েক প্রকার দুআ বর্ণিত হয়েছেঃ

১।

السَّلامُ عَلَيْكُمْ اهْلَ دَارِ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وأَتَاكُمْ ما تُوعَدُونَ غَداً مُؤَجَّلُونَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ

উচ্চারণঃ- আস্‌সালামু আলাইকুম আহলা দারি কাওমিম মুমিনীন, অ আতাকুম মা তূআদুনা গাদাম মুআজ্জালূন। অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লাহিকুন।

অর্থঃ- তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মুমিন কবরবাসী কওম! তোমাদের নিকট তা চলে এসেছে যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছিল, আগামী কাল (কিয়ামত) পর্যন্ত (বিস্তারিত পুরস্কার ও শাস্তি) বিলম্বিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ চাইলে আমরাও তোমাদেরই সাথে মিলিত হব। (মুসলিম ১৭৪নং)

২।

السلام عليكم أهل الديار من المؤمنين والمسلمين وإنا إن شاء الله بكم للاحقون نسأل الله لنا ولكم العافية

উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়া-রি মিনাল মু'মিনীনা অলমুসলিমীন, অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিকূন, নাসআলুল্লা-হা লানা অলাকুমুল আ-ফিয়াহ।

অর্থ-তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! আমরাও -আল্লাহ যদি চান- তোমাদের সঙ্গে অবশ্যই মিলিত হব। আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। (মুসলিম ২/৬৭১)

৩।

السلام على أهل الديار من المؤمنين والمسلمين، ويرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين وانا إن شاء الله بكم للاحقون

উচ্চারণঃ- আসসালা-মু আলা আহলিদ্দিয়া-রি মিনাল মু'মিনীনা অলমুসলিমীন, অয়্যারহামুল্লা-হুল মুস্তাকদিমীনা মিন্না অলমুস্তা'খিরীন, অইন্না ইনশাল্লা-হু বিকুম লালা-হিকুন।

অর্থ- মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। যারা আগে এসেছে এবং যারা পরে আসবে তাদের উপর আল্লাহ রহম করেন। এবং আমরাও আল্লাহ চাহেন তো অবশ্যই তোমাদের সাথে মিলিত হব। (মুসলিম ৯৭৮নং)

৪।

السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ

উচ্চারণঃ- আস্‌সালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মু'মিনীন, অইন্না ইন শাআল্লাহু বিকুম লা-হিকুন।

অর্থঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষণ হোক হে মুমিন কবরবাসী দল। আল্লাহ চাইলে আমরা তোমাদেরই সাথে মিলিত হব। (মুসলিম ২৪৯, মালেক ১/৪৯-৫০, নাসাঈ ১৫০, ইবনে মাজাহ ৪৩০৬, আহমাদ ২/৩০০, ৪০৮ প্রমুখ।

কবর যিয়ারতে গিয়ে কুরআন মাজীদ বা তার কোন অংশ পাঠ করা বিধেয় নয়। বিধেয় হলে মহানবী (ﷺ) তা করে যেতেন। পক্ষান্তরে মা আয়েশা (রাঃ) যখন মহানবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, কবর যিয়ারত করলে আমি কি বলব?” তখন মহানবী (ﷺ) তাকে দুআ শিক্ষা দিলেন; কুরআনের কোন আয়াত পড়ার কথা শিক্ষা দিলেন না। (দেখুন, মুসলিম ৯৭ ৪নং প্রমুখ।)

কবরস্থানে কুরআন পড়া যে বৈধ নয় সে কথা নবী (ﷺ) এর নিম্নের বাণীও নির্দেশ করে; তিনি বলেন, “তোমরা তোমাদের গৃহকে কবরস্থান করে রেখো না। (সুতরাং তোমরা গৃহে কুরআন পাঠ কর।” (মুসলিম ৭৮০, তিরমিযী ২৮৭৭নং, আহমাদ ২/২৮৪}

কবর যিয়ারত করতে গিয়ে মওতাদের জন্য (একাকী) হাত তুলে দুআ করা বিধেয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাত্রে নবী (ﷺ) বাড়ি হতে বের হয়ে গেলেন। তিনি কোথায় গেলেন তা দেখার জন্য আমি (দাসী) বারীরাহকে তার পশ্চাতে পাঠালাম। বারীরাহ দেখল, তিনি বাকী’তে গিয়ে নিচের দিকে দাঁড়িয়ে হাত তুললেন। অতঃপর ফিরে এলেন। বারীরাহ আমাকে সে খবর দিল। সকালে নবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাত্রে আপনি কোথায় বের হয়েছিলেন?’ বললেন, “বাকী’তে গিয়ে সেখানকার কবরবাসীর জন্য দুআ করতে যেতে আমি আদিষ্ট হয়েছিলাম।” (আহমাদ ৬/৯২, মালেক ১/২৩৯-২৪০)

মুসলিম শরীফ প্রভৃতির এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি নিজে তাঁর পশ্চাতে গিয়ে দেখলেন, বাকী’তে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দন্ডায়মান থাকলেন। অতঃপর তিন বার হাত তুললেন। (মুসলিম ৯৭৪নং)

অবশ্য মওতার জন্য দুআ করার সময় কবরসমূহকে সম্মুখ করা বৈধ নয়। বরং কেবলাহ মুখেই দুআ করতে হবে। কারণ মহানবী (ﷺ) কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, মিশকাত ১৬৯৮নং)

আর দুআ হল নামাযের মগজ ও মূল বস্তু। অতএব দুআরও নির্দেশ নামাযের মতই। নবী (ﷺ) বলেন, “দুআই হল ইবাদত।” (আবু দাউদ ১৪৭৯, তিরমিযী ৩৩৭২, ইবনে মাযাহ ৩৮ ২৮, আহমাদ ৪/২৬৭)

কবর যিয়ারত করার জন্য কোন নির্ধারিত দিন-কাল নেই। নির্দিষ্ট করে ঈদের দিন বা জুমআর দিন (পিতা-মাতার) কবর যিয়ারত করা এবং তদনুরূপ শবেবরাত (?) এর দিন বা রাতে যিয়ারত করা ও কবরের উপর বাতি জ্বালানো বিদআত। তেমনি দাফনের পর দিন হতে শুরু করে কয়েক সকাল নতুন কবর যিয়ারত করা ও তারপর ত্যাগ করে দেওয়া বিধেয় নয়। কেবল কয়েক সকাল এবং নতুন কবর নির্দিষ্ট করা বিদআত।

মুসলিমদের কবরসমুহের মধ্যবর্তী স্থানে (কবরের ফাঁকে ফাঁকে) জুতা পরে চলা বৈধ নয়।

বাশীর বিন হানযালাহ বলেন, 'একদা আমি নবী (ﷺ) এর সাথে পথ চলছিলাম। চলতে চলতে কবরস্থানে এলে তিনি দেখলেন, এক ব্যক্তি পায়ে জুতো পরেই কবরের ফাঁকে ফাঁকে চলছে। তা দেখে তিনি বললেন, “হে লোমহীন জুতা-ওয়ালা! তোমার জুতা খুলে ফেল।” লোকটি তাকিয়ে দেখে নবী (ﷺ)-কে চিনতে পারল এবং সঙ্গে সঙ্গে জুতা খুলে দুরে ছুঁড়ে দিল। (আবু দাউদ ৩২৩০, নাসাঈ ২০৪৭, ইবনে মাজাহ ১৫৬৮ নং)

অবশ্য কোন কার্যক্ষেত্রে কবরের মাঝে-মাঝে যেতেই হলে এবং মাটি অত্যধিক গরম থাকলে অথবা কাঁটায় পা ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জুতো পরে যাওয়া প্রয়োজনে বৈধ। (সাবউন সুআলান ৪৮ পৃঃ)

যেমন বৈধ নয়, কবরের উপর বেয়ে চলা, কবরের উপর বসা, কবরের উপর দিয়ে সাধারণ রাস্তা তৈরী করা, কবরের উপর কোন প্রকার নোংরাদি ফেলা, কবরের মাটিতে ফসল উৎপাদন করা, নিজের কাজে ব্যবহার করা, তার উপর কোন প্রকার খেলা, পুরানো কবর স্থানকে খেলার মাঠ করা ইত্যাদি।

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কারো কোন কবরকে (পদদলিত করা অথবা তার) উপর বসা অপেক্ষা আঙ্গারের উপর বসে কাপড় পুড়ে চামড়া পুড়ে যাওয়া উত্তম।” (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী ৪৭৯, আহমাদ ২/৩১১ ইত্যাদি)

এই জন্যই -পদদলন ও অসম্মানের হাত হতে হিফাযতের উদ্দেশ্যে- কবরস্থানের চতুঃসীমা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ওয়াজেব। যিয়ারতে গিয়ে কবর স্পর্শ করা, স্পর্শ করে গায়ে হাত ফিরানো, কবর চুম্বন করা, কবরের (মাযারের) গায়ে গাল, বুক পেট ইত্যাদি লাগিয়ে তাবারুক গ্রহণ, কবর তাওয়াফ করা, কবরকে পিছন না করা, কবর স্থানে প্রবেশ করে উল্টপায়ে বের হওয়া, কবরের মাটিতে আরোগ্য আছে মনে করা ও তা খাওয়া বা ব্যবহার করা, কোন নেক ব্যক্তির কবরের পাশে দুআ করলে তা কবুল হবে মনে করা এবং সেই আশায় দুআ করা, কবরস্থ ব্যক্তিকে অসীলা করে দুআ করা, কবরের সামনে ঝুঁকা ও সিজদা করা (!) নামাযের মত দুই হাত বুকে বেঁধে বিনয়ের সাথে খাড়া হওয়া, কবরবাসীর নামে ফাতেহা পড়া, তার নিকট প্রয়োজন ভিক্ষা করা, চিরকুটে আবেদন লিখে কবরের উপর বা পাশে ফেলা, কোন কবর যিয়ারতে হজ্জের সমান নেকী আছে মনে করা বা, কোন ওলীর কবর যিয়ারতকে গরীবদের হজ্জ ধারণা করা, কবরের উপর পুষ্পার্ঘ দান, চাদর চড়ানো, আতর ছড়ানো, মিষ্টি বিতরণ, কবরকে মসজিদ বানানো, ঈদ বা খুশীর মিলন ক্ষেত্র বানানো, কবরের উপর উরস বা মেলা করা, বাদ্য ও নৃত্য-গীতের সমারোহ করা, কবরের উদ্দেশ্যে দুর থেকে সফর করা, কবরের নিকট বা উপরে বাতি ও ধূপধুনো দেওয়া, মাটির হাতি-ঘোড়া পেশ করা, নযর-নিয়ায মানা ও পেশ করা হারাম, বিদআত ও শির্ক। (আহকামুল জানাইয দ্রষ্টব্য)

কোন যিয়ারতকারীর মাধ্যমে নবী (ﷺ) বা ওলীগণের কবরে সালাম পাঠানো, কবরস্থানের গাছপালাকে পবিত্র জ্ঞান করা এবং তার ডাল-পাতা না ভাঙ্গা। আর ভাঙ্গলে কোন অমঙ্গল হবে এই আশঙ্কা করা, কবরের দিকে সম্মুখ করে নামায পড়া, (যদিও কিবলা ঐ দিকে) কবরগাহে বা মাযারের নিকট নামায পড়া বা কোন ইবাদত করা বিদআত ও অবৈধ। যেহেতু কবরস্থানে বা যে মসজিদে কবর আছে সে মসজিদে নামায হয় না। পড়লে পুনঃ পড়া ওয়াজেব। (তাহযীরুস সাজিদ দ্রষ্টব্য)

পরিশেষে আল্লাহ আমাদেরকে বিদআতের সকল প্রকার অন্ধকার থেকে দূরে সরিয়ে সুন্নাহর আলোক সজ্জিত পথ প্রদর্শন করুন। সমগ্র মুসলিম জাহানকে শির্কের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিয়ে তওহীদের উন্মুক্ত ও অনাবিল নিঝরে পরিপ্লত করুন। যাতে মরণের সময় যেন সকলে মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। আমীন।