ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদী অপতৎপরতা : প্রতিরোধের উপায় বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদী অপতৎপরতা ইসলামহাউজ.কম
প্রয়াত ড. আহমদ শরীফ

বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদকে প্রকাশ্যে বলে বেড়াবার বিষয় হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের প্রয়াত জ্ঞানপাপী ড. আহমদ শরীফ। সারা জীবন তিনি তাঁর ছাত্রদের মধ্যে নাস্তিক্যবাদ প্রচার করেন। মারা যাবার আগে তিনি নিজের দেহখানি মেডিকেলে চিকিৎসা সেবার জন্য দান (?) করে যান। মহৎ শিরোনামে মূলত একজন নাস্তিককে আল্লাহর সৃষ্ট মাটি তার পেটে ধারণে অস্বীকার জানায়। সারা জীবনের পাপের ফসল স্বরূপ আল্লাহ তাঁকে মাটির ঘরেও জায়গা পাওয়া থেকে বঞ্চিত রাখেন।

তাঁর জন্ম ১৯২১ খৃস্টাব্দে ১৩ ফেব্রুয়ারিচট্টগ্রামজেলার পটিয়া উপজেলার সূচক্রদণ্ডী গ্রামে। পিতার নাম আব্দুল আজিজ ও মাতার নাম মিরাজ খাতুন। তাঁর পিতা আব্দুল আজিজ ছিলেন চট্টগ্রামের প্রধানতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট স্কুলের একজন করণিক। এ মুসলিম পরিবারের অন্দর মহলে শিক্ষার আলো ঢুকিয়েছিল উনিশ শতকেই। তাঁর ষষ্ঠ পূর্ব্বপুরুষ কাদের রজা সন্তানের জন্য কাজী দৌলতেরসতী ময়না লোরচন্দ্রানীপুঁথিটি নিজ হাতে নকল করেছিলেন। তাঁর পিতামহ আইন উদ্দিন (১৮৪০-১৯৩৭) ছিলেন সরকারি জজ কোর্টের নকল নবিস। চট্টগ্রামের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম এন্ট্রাস পাস করা এবং বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি বলে খ্যাতআব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদছিলেন তাঁর কাকা ও পিতৃপ্রতিম। জন্মের পর থেকে আহমদ শরীফ সাহিত্যবিশারদ ও তাঁর স্ত্রীর কাছে পুত্র স্নেহে লালিত-পালিত হয়েছেন। ফলত অনেকের কাছেই তিনি সাহিত্য বিশারদের সন্তান হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ৭ নভেম্বর সালেহা মাহমুদের সঙ্গে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁর মৃত্যু ২৪শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯। [বাংলা ইউকিপিডিয়া]

আহমদ শরীফ ১৯৩৮ সালে পটিয়া হাইস্কুল হতে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪০ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ হতে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পাস করেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২য় বিভাগে ৪র্থ স্থান অধিকার করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালেসৈয়দ সুলতান তাঁর গ্রন্থাবলী ও তাঁর যুগ শীর্ষকঅভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর লিখিত পুস্তকের সংখ্যা শতাধিক। তাঁর প্রথম সম্পাদিত গ্রন্থলায়লী মজনু ১৯৫৭ খৃস্টাব্দে প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ খৃস্টাব্দে মৌলিক গ্রন্থবিচিত চিন্তাপ্রকাশ করেন। তাঁর লিখিত গ্রন্থের মধ্যে স্বদেশ অন্বেষা, মধ্যযুগের সাহিত্য সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ,বাংলার সুফি সাহিত্য,বাঙালির চিন্তা-চেতনার বিবর্তন ধারা,বাংলার বিপ্লবী পটভূমি,এ শতকে আমাদের জীবনধারার রূপ রেখা, নির্বাচিত প্রবন্ধ, প্রত্যয় ও প্রত্যাশাএবং বাঙালি ও বাংলা সাহিত্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। [প্রাগুক্ত]

ইউকিপিডিয়ায় তাঁর জীবনী আলোচনায় ‘ধর্মবিরোধিতা’ নামে একটি স্বতন্ত্র উপশিরোনাম লিখিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘তিনি জন্মসূত্রে মুসলমান হলেও স্বঘোষিত নাস্তিক। কুসংস্কার, ক্ষুধা, রোগ শোকে জর্জরিত, ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন অবহেলিত সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দ্রোহী পুরুষ ড. আহমদ শরীফকে ধর্মান্ধরা শাস্ত্র ও প্রথা বিরোধিতার কারণেমুরতাদ ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে এক অসিয়তনামার মাধ্যমে তার মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদান করার কথা লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন। সে অসিয়তনামায় লেখা ছিল, ‘চক্ষু শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণ প্রতীক, কাজেই গোটা অঙ্গ কবরের কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাইতো বাঞ্ছনীয়’। তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য দান করে দেয়া হয়।’

নাস্তিকরা সংখ্যায় কম আর বিগত শতাব্দীর বাম সংগঠনগুলো রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ বা কোণঠাসা হলেও তাদের শিক্ষায় দীক্ষিত এবং তাদের মতবাদে পরিপুষ্ট লোকেরাই বর্তমান বাংলাদেশের সিংহভাগ মিডিয়ার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কর্ণধার। কিছু ব্যতিক্রম বাদে নাস্তিক্যবাদীরাই এ দেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবী। ফলে তাদের শতধা বিভক্ত সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে সমর্থকের সংখ্যা হাস্যকর হলেও দেশের কর্তা ও পরিচালকদের প্রতি তাদের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। সতীর্থ মিডিয়াগুলো বরাবর তাদের ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মহাগুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করে। ইসলামপন্থীদের অবহেলা ও অনুপস্থিতির সুযোগে আজকের বাংলাদেশে যত ধারার মিডিয়া আছে সবগুলোয়ই তাদের প্রভাব ও দাপট ধ্রুব সত্য। তাদের পরিচালিত মিডিয়াগুলোর প্রতাপ এতোটাই বেশি যে এর বিপরীত দাঁড়ানো অনেক অনেক কঠিন ব্যাপার।