৪৬. সপ্তম দিবসে খাৎনা করা সুন্নাত কি না?

রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর দৌহিত্র হাসান ও হুসাইন (রা)-কে সপ্তম দিনে মাথার চুল কাটা, আকীকা করা ও নাম রাখার সাথে তাদের খাৎনাও করিয়েছিলেন মর্মে বায়হাকী (৮/৩২৪) ও তাবরানীতে (১/১৭৬) দুটো হাদীস রয়েছে । কিন্তু হাদীস দুটোকে মুহাদ্দেসীনে কেরাম দুর্বল বলেছেন। তা ছাড়া অপর একদল ফকীহ বলেছেন, সপ্তম দিবসে খাৎনা করা ইহুদীদের অভ্যাস। অতএব তাদের সাথে মিল রেখে সেদিন এটা করা মাকরূহ হবে ।

৪৭. লিঙ্গের কী পরিমাণ অংশ কর্তন করা আবশ্যক?

লিঙ্গের মাথার অগ্রভাগ যে পরিমাণ অংশ বাড়তি চামড়া দিয়ে ঢেকে থাকে, এর পুরোটাই কর্তন করতে হবে। বাড়তি চামড়ার অভ্যন্তরে সুপারির দানার মতো গোলাকৃতি অংশটুকুকে আরবীতে ‘হাশাফাহ' বলে। কোন কোন ফকীহ বলেছেন, উক্ত হাশাফার অর্ধাংশ বা কিছু অংশ উন্মুক্ত করলেই চলবে । কিন্তু ইমাম নববী (র) বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ চামড়া এতটুকু পরিমাণ কেটে ফেলতে হবে, যাতে করে হাশাফাহ পুরোটাই খোলা থাকে।

১. কোন শিশু যদি মাতৃগর্ভ থেকেই লিঙ্গের মাথা খোলা অবস্থায় জন্ম নেয় তাহলে তার আর খাৎনা করার প্রয়োজন নেই।

২. কোন শিশু এটাকে অতিরিক্ত ভয় করলে খাৎনা বিলম্বে করতে কোন গোনাহ নেই ।

৩. খাৎনার জন্য কোন বালকের সতর খোলা জায়েয আছে। অনুরূপভাবে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রোগীর সতর খুলতে পারবে। তবে শুধু ঐ পরিমাণ খুলবে যতটুকু প্রয়োজন, এর বেশি নয় ।

৪. শুধু তিন কারণে মানুষকে কষ্ট দেওয়া জায়েয । আর তা হলো
(ক) তার উপকারের জন্য। যেমন- চিকিৎসা, অপারেশন ইত্যাদি।
(খ) বিধিসম্মত শাস্তি প্রদানের জন্য।
(গ) একান্ত প্রয়োজন অবস্থায়। এখানে খাৎনাজনিত কাজটি ঐ বান্দার জন্য বাধ্যতামূলক। তাই খাৎনা তার জন্য কিছুটা কষ্টকর হলেও তা করা জায়েয।

৫. খাৎনাবিহীন ব্যক্তি ইমামতি করতে শরী'আতে কোন বাধা-নিষেধ নেই ।

৪৯. আঙুলের গিরাসমূহ ধৌত করার হুকুম কী?

আঙুলের গিরাসমূহের মধ্যে কখনো কখনো ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে। সে জন্য আলেমগণের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগুলো পরিষ্কার করা মুস্তাহাব।

৫০. ইস্তিনজা করা ও ইস্তিজমারের মধ্যে পার্থক্য কী?

পেশাব-পায়খানা করার পর পানি দ্বারা পবিত্র হওয়াকে বলে ইস্তিনজা। আর পাথর, মাটি বা টিস্যুপেপার দ্বারা পবিত্র হওয়াকে বলে ইস্তিজমার। উক্ত বিষয়ে পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং এ নিয়ে শেষ হলো আমাদের স্বভাবজাত সুন্নাতের আলোচনা। শরী'আহর এসব বিধি-বিধান সহীহ সুন্নাহর আলোকে আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দিন এবং ভুলত্রুটি থেকে হেফাযতে রাখুন।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন কিছু কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, যা প্রতিটি মানুষের স্বভাব ও অভ্যাসের সাথে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত। এগুলো ছিল সকল নবী-রাসূলদের সুন্নাত । এসব আমলের মধ্যে রয়েছে দীনী ও দুনিয়াবী কল্যাণ এবং শারীরিক সৌন্দর্য। শরী'আর পরিভাষায় এগুলোকে স্বভাবজাত সুন্নাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মিসওয়াক করা ।

বেশির ভাগ ফুকাহাদের নিকট মিস্ওয়াকের হুকুম হলো সুন্নাত ।

রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “মিসওয়াকের মধ্যে রয়েছে মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।” (নাসাঈ: ৫)

৫৩. কোন কোন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (স) মিস্ওয়াক করতেন?

১. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর: হুযাইফা (রা) বর্ণনা করেন যে, “নবী (স) যখন রাতে (তাহাজ্জুদের জন্য) ঘুম থেকে উঠতেন তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।” (বুখারী: ২৪৫, ইফা: ২৩৮, মুসলিম: ২৫৪)

২. ওযূর পূর্বে: আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, “যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক ওযুর পূর্বে মিস্ওয়াক করার জন্য নির্দেশ প্রদান করতাম।” (মুয়াত্তা মালেক: ১১৫)

৩. নামাযে দাঁড়ানোর মুহূর্তে: আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যদি আমার উম্মত বা মানুষের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রতি সালাত শুরুর সাথে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।” (বুখারী: ৮৮৭)।

৪. বাহির থেকে ফিরে ঘরে ঢুকার পর: আয়েশা (রা) বলেন যে, “নবী (স) (বাহির থেকে ফিরে এসে) যখনই ঘরে ঢুকতেন (তখন প্রথম যে কাজটি করতেন তা হলো) তিনি দাঁত মাজতে শুরু করতেন।” (মুসলিম: ২৫৩)।

৫. কুরআন পাঠ শুরু করার পূর্বে । (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ২/৪৮৭)

৬. মসজিদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বক্ষণে।

৭. জুমুআর দিন এবং যেকোন সমাবেশে যোগদানের আগে । (মুসলিম: ৮৪৬)

৮. মৃত্যুর মুহূর্ত ঘনিয়ে এলে ।

৯. মুখের গন্ধ দূরীকরণের জন্য (নাসাঈ: ৫)।

৫৪. কি কি কারণে সাধারণত মুখে দুর্গন্ধ হয়?

(ক) দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেলে,
(খ) দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকলে,
(গ) পেট খালি থাকলে,
(ঘ)। অধিক কথা বললে,
(ঙ) অতিরিক্ত ঘুমালে ।
এ বিষয়গুলো আরো দলীল দেখুন হাদীস নং যথাক্রমে মুসনাদে আহমাদ- ১/২১৪, তারগীব১/৯১ এবং তারগীব- ১/৯০।

দেখানো হচ্ছেঃ ৫১ থেকে ৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৫০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 7 · · · 12 13 14 15 পরের পাতা »