২৯. অন্য কাউকে দিয়ে নখ চুল কাটানো কি জায়েয হবে?

মোচ খাটো করা, নখ কাটা ও বগলের লোম পরিষ্কার অন্য যে কোন নাপিতকে দিয়ে করা জায়েয আছে, কেবল নাভির নিচের লোম ছাড়া । তবে অপারগ হলে এটাও শুধুমাত্র নিজ স্ত্রীকে দিয়ে পরিষ্কার করাতে পারবে ।

ব্লেড দিয়ে নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা উত্তম। আর বগলের নিচের লোম পরিষ্কারের জন্য টেনে ছেড়া উত্তম। তবে ব্লেড ব্যবহার করা জায়েয।

কর্তিত এসব নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা মুস্তাহাব।

নখ ও চুলের বিবিধ ক’টি মাসআলা
১. নখ বা চুল কাটলে ওযু নষ্ট হয় না, যদি লিঙ্গ স্পর্শ না করে ।
২. নখ কাটার পর আঙ্গুলের মাথা ধৌত করা মুস্তাহাব। কথিত আছে যে, নখ কাটার পর আঙ্গুলের মাথা না ধুয়ে শরীর চুলকালে এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
৩. ওযূর ধারাবাহিকতার সাথে কিয়াস করে ফকীহগণ বলেন যে, আগে হাতের এবং পরে। পায়ের নখ কাটা মুস্তাহাব। অনুরূপভাবে আগে ডান, অতঃপর বাম হাতের নখ এবং তারপরে ডান পা ও সর্বশেষে বাম পায়ের নখ কাটবে।
৪. কেউ কেউ বলেছেন, যেহেতু শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে মানুষ আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয় সেহেতু এ আঙ্গুলটির নখ আগে কাটা উত্তম। তবে এ ক্রমধারা আগে-পরে হলে গোনাহ হবে না।

ইমাম নববীর মতে, মোচ খাটো করে রাখা সুন্নাত। অপর একদল ফকীহ বলেছেন, এটা ওয়াজিব। আবার কেউ মোচ খাটো করে রাখাকে ফরযও বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি মোচ খাটো করে রাখবে না, সে আমার উম্মত নয়” (নাইলুল আউতার- ১/১৪৩)। তাছাড়া ৪০ দিনের বেশি সময় মোচ না কেটে রাখা জায়েয নয়। (মুসলিম: ২৫৮)

৩২. মোচ খাটো করবে, নাকি কামিয়ে ফেলবে?

সুন্নাত হলো খাটো করা, কামানো নয়। মোচ লম্বা করে রাখা যেমন জায়েয নেই, তেমনই ব্লেড দিয়ে তা কামিয়ে ফেলাও মাকরূহ।

এ বিষয়ে ক'টি হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১. ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন, “নবী (স) তাঁর মোচ কেটে বা খাটো করে নিতেন এবং (তাঁর পূর্ববর্তী যামানার আরেকজন নবী) ইবরাহীম খলীলুর রহমানও একই কাজ করতেন।” (তিরমিযী)
২. ইবনে উমর (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে আছে নবী করীম (স) বলেছেন,

“মোচ খাটো করে নাও এবং দাড়ি লম্বা কর।” (বুখারী ও মুসলিম) অন্য রেওয়াতে আছে, “মোচ একেবারে ছেটে ফেল।” । অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘একেবারে গোড়া থেকে মোচ কেটে ফেল। অপরদিকে উমর ইবনে আবদুল আযীযসহ একদল সাহাবা তাদের মোচ ছোট করে রাখতেন, কিন্তু অত্যন্ত বেশি খাটো করতেন না।

সুনানুল ফিতরার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দাড়ি লম্বা করা ।

হানাফী আলেমদের মতে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। অপরদিকে সৌদি আরব ও অন্যান্য হাম্বলী ফকীহদের মতে, দাড়ি রাখা ফরয। আর তা কাটা অর্থাৎ মুণ্ডন করা হারাম।

১. ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কাজ কর, দাড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর।” (বুখারী: ৫৮৯২, মুসলিম: ২৫৯)
২. নবী (স) আরো বলেছেন, “তোমরা মোচ কেটে রাখ, দাড়ি ছেড়ে দাও। আর অগ্নি উপাসকরা যা কিছু করে তার বিপক্ষে থাক।” (মুসলিম: ২৬০)

নিচের ঠোটের নিমাংশ থেকে গলার উপরে থুতনির নিচ পর্যন্ত। আর প্রস্থে চেহারার দু'পাশে যতটুকু অংশ থেকে চুল গজায়- এতটুকু হলো দাড়ির পরিধি। শায়খ বিন বায (র) সহ একদল মুহাক্কিক আলেম নিম দাড়িকেও দাড়ির অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন ।

৩৫. রাসূলুল্লাহ (স)-এর দাড়ি কিরূপ ছিল? তিনি কি তা কাটছাট করতেন?

জাবের ইবনে সামুরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)-এর দাড়িতে প্রচুর চুল ছিল (মুসলিম)। অপর এক হাদীসে আলী (রা) বলেন, তাঁর (স) দাড়ি ছিল খুব ঘন (আহমাদ)। তিরমিযীর একটি হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর দাড়ি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে কিছুটা খাটো করেছেন। কিন্তু এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে উমর আল বালখী নামে একজন মিথ্যাবাদী লোক থাকায় এটি বাতিল হাদীস হিসেবে গণ্য। অতএব নবী (স) তাঁর দাড়ি কিছুটা হলেও কাটছাট করেছেন এ মর্মে কোন বিশুদ্ধ দলীল-প্রমাণ নেই ।

৩৬. দাড়ির নির্দেশের মধ্যে আমাদের শিক্ষণীয় কী?

১. দাড়ি লম্বা করে রাখার জন্য রয়েছে সরাসরি আদেশ।
২. মুশরিকদের অনুসরণ না করে তাদের বিপরীত অবস্থানে থাকার নির্দেশ।
৩. দাড়ি না রাখা বাহ্যত মেয়েদের সাদৃশ্য বরণ করা, যা হারাম। ইমাম গাযালী (র) বলেছেন, দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং নারী পুরুষের পার্থক্য নিরূপণকারী ।
৪. দাড়ি কেটে ফেলা আল্লাহর সৃষ্টিকে জোর করে বদলে ফেলার সমতুল্য ।
৫. নবী করীম (স)-এর সাহাবাগণসহ সকল নবীদেরই দাড়ি ছিল।

দেখানো হচ্ছেঃ ৩১ থেকে ৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৫০ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 5 6 · · · 12 13 14 15 পরের পাতা »