খতনা সম্পর্কে আমাদের দেশে যে প্রথা প্রচলিত আছে যেমন খতনার সপ্তম দিনে তার (ছেলের) মাথার চুল কেটে গোসল দিয়ে ভাল ভাল কাপড় পরিধান করিয়ে দুলার মত সাজানো হয়। তারপর আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেয়া হয় উক্ত দাওয়াতে আংটি, কাপড়, টাকা-পয়সা ইত্যাদি আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের থেকে আদায় করা হয়। বিনিময়ে আমন্ত্রণকারী গরু ছাগল ইত্যাদি জবাই করে মেহমানদারী করেন। এগুলি সবই শরীয়ত পরিপন্থী কাজ। কেননা শরীয়তে এ জাতীয় কাজের কোনো অস্তিত্ব ও ভিত্তি নেই। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এবং আয়িম্মায়ে মুজতাহেদীনগণও ছেলে সন্তানের খতনা করাতেন। তেমনিভাবে ওলি বুজুর্গণও ছেলে সন্তানের খতনা করাতেন। কিন্তু তাকে উপলক্ষ করে এ জাতীয় কুসংস্কারমূলক কাজ কোনো দিনই করেননি। তাদের থেকে এসবের প্রমাণ না হওয়া বেদআত হওয়ার বলিষ্ঠ দলিল। তাছাড়াও এ জাতীয় কাজগুলো করা হয় শুধু নাম ও যশের জন্য, ইখলাসের পন্ধও তাতে পাওয়া যায় না। আর উপঢৌকন হিসাবে যা কিছু পেশ করা হয় তা শুধু নিজের ব্যক্তিত্বকে বজায় রাখার নিমিত্তেই পেশ করা হয়। এক পেট খেয়েছে এদিকে অন্যান্যরা ১০০-৫০০০ টাকা করে দিচ্ছে। কিন্তু তিনি কম খান নি বা খাইলেও তা তো আর কেউ দেখে নি। নাম ও সম্মান বজায় রাখার জন্য তাকেও কমপক্ষে ২০০ না হলেও ১০০ দিয়ে ইজ্জতের দরজা খোলা রাখতে হবে। আর যে বেচারা স্বগৌরবে ২০ হাজার টাকা খরচ করেছেন, তারও তো কিছু লাভ হতে হবে। কারণ, সে জানে ২০ হাজার টাকা খরচ করলে ১০ হাজার টাকা অবশ্যই লাভ হবে। আর এমন সুন্দর লাভের সুযোগও তো সব সময় পাওয়া যায় না। আর আমন্ত্রণকারী যদি জানে যে, আমার ২০ হাজার টাকা খরচ করতেও সে রাজি হবে না। তাহলে বুঝা গেল সুযোগে সৎ ব্যবহার হিসাবেই সব কিছু্ই করা হয়। এ জাতীয় অনিচ্ছাকৃত লেনদেনের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান।

পবিত্র শরীয়তের মধ্যে খতনা করা সুন্নত এবং ছওয়াবের কাজও বটে, কিন্তু ইহাতে বিভিন্ন কুসংস্কারের সংমিশ্রণ মূর্খতা ও অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়। সাধারণ ব্যক্তি আর বিশেষ ব্যক্তির মধ্যে কোনে পার্থক্য নেই কুসংস্কার সবার বেলায়ই সমান। হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণ, খতনা করা সমস্ত আম্বিয়াগণের সুন্নত এবং একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য- আবু আয়্যুব (রা.) বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- চারটি জিনিস নবীগণের সুন্নত খতনা, আতর, মিছওয়াক এবং বিবাহ। এ পবিত্র ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে জাগরিত কলঙ্কজনিত খারাপ উদ্দেশ্যের সংমিশ্রণ না করাই বিবেকের দাবী। বিশেষ করে বর্তমান যুগে এ জাতীয় কুসংস্কার থেকে শুধু ধর্মীয় ঐতিহ্য অটুট ও সবল রাখার জন্যে দূরে থাকা বিশেষ প্রয়োজন।