রোগমুক্তি, উদ্দেশ্য হাছিল, কারো কুনজর থেকে বেঁচে থাকা, প্রভৃতি কারণে আমাদের দেশে যে তাবীজ ঝোলানো হয়, তাও মূলত: এক প্রকার শির্ক। উকবাহ ইবন আমরের সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

ان الرقى التمائم والتولة من الشرك

নিশ্চয় মন্ত্র, তাবিজ ও যা স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীর নিকট প্রিয় করে তোলার জন্য নেওয়া হয়, তা ব্যবহার করা শির্ক।[1]

সমস্যা সমাধান, বিপদমুক্তি, রোগ থেকে আরোগ্য লাভ, উদ্দেশ্য হাছিল প্রভৃতি করতে আমাদের দেশে যে আংটি রিং, সুতা পড়া, গাছ বা তৃণের অংশ, কড়ি প্রভৃতি ঝুলানো হয় তা মুলত: এই শির্কেরই অন্তর্ভুক্ত।[2] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে একটি রিং পরানো দেখে বলেছিলেন:

انز عها فإنها لا تزيدك إلا وهنا فإنك لو مت وهى عليك ما افلحت ابدا.

তুমি এটি খুলে ফেল, কেননা এটি তোমাকে দুর্বল থেকে আরো দুর্বল করবে, আর যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যাও, তাহলে তুমি কখনো মুক্তি পাবে না।[3]

কুরআনের অংশ বিশেষ লিখিত তাবীজ ব্যবহার বৈধ কিনা এ সম্পর্কে আলিমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস, আয়িশাহ (রা.), আবু জাফর আল বাকির ও ইমাম আহমদ(রা.) এর একটি বর্ণনা অনুযায়ী এটি ব্যবহার বৈধ। তারা পূর্বে উল্লেখিত যে হাদীসে তাবীজ কে শির্ক বলা হয়েছে তা শুধু মাত্র কুরআন ব্যতীত অন্যান্য শির্কী তাবীজকে বুঝান হয়েছে বলে মনে করেন। পক্ষান্তরে আব্দুলাহ ইবন মাসউদ, ইবন আব্বাস (রা.), হুযাইফা, উকবাহ ইবন আমির, ইবন আকিম (রা.), তাবিঈদের একটি দল, ইবন মাসউদের ছাত্ররা ও ইমাম আহমদের একটি বর্ণনা অনুযায়ী কুরআনের অংশবিশেষ লিখিত তাবীজও অবৈধ। তাদের মতে হাদীসে যেহেতু কুরআনের অংশ বিশেষ অথবা অংশবিশেষ নয়, এমন কোনো পার্থক্য না করেই সকল প্রকার তাবীজকে শির্ক বলা হয়েছে সেহেতু যে কোনো প্রকার তাবীজ শির্কের অন্তর্ভুক্ত।[4]

আমাদের দৃষ্টিতে যদি কোনো মুর্তিকে পূজা নাও করা হয়, তাহলেও তা শির্কের মাধ্যম হওয়ার কারণে ভেঙ্গে ফেলাই ইসলামের নির্দেশ। সে জন্যই তাবীজ শির্কের মত স্পর্শ কাতর বিষয়ের দিকে ব্যবহারকারীকে নিতে পারে, এই কারণে কুরআনের অংশবিশেষ লিখিত তাবীজও বর্জনীয়। অন্য দিকে যেহেতু এটি সংশয় পূর্ণ সেহেতু এটি বর্জন করাও হাদীসের অনিবার্য শিক্ষা। বর্ণিত হয়েছে:

«الحلال بين والحرام بين وبينهما مشتبهات لايعلمها كثير من الناس فمن اتقى المشتبهات استبرا لدينه وعرضه، و من وقع في الشبهات كراعي يرعى حول الحمى يو شك أن يو اقعه»

“যা হালাল তা সুস্পষ্ট। আর যা হারাম তাও সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। এই দুইয়ের মধ্যে অবস্থান করছে সন্দেহপূর্ণ বিষয়সমূহ, যা অনেকেই জানে না, যে এই সকল সন্দেহ পূর্ণ বিষয় থেকে বেঁচে থাকল, সে তার দীন ও সম্মানকে হেফাজত করল। আর যে এই সন্দেহ পূর্ণ বিষয়ে পতিত হল, সে ঐ রাখালের মত যে তার পশুকে সংরক্ষিত এলাকার পার্শ্বেই চরায়, আর সে কারণেই সেখানে প্রবেশের আশংকা থাকে।[5]

খাদ্য ক্ষুধা নিবৃত্তির মাধ্যম, তেমনি ঔষধ রোগ মুক্তির মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার হওয়াকে শরিয়াত অনুমোদন দিয়েছে। তবে ঔষধই রোগ মুক্ত করে, এই বিশ্বাসে ঔষধ ব্যবহারও মূলত: শির্কের অন্তর্ভুক্ত। ঔষধ ব্যবহারের সময় এটি একটি মাধ্যম মাত্র, আরোগ্য দানের মালিক আল্লাহ এই বিশ্বাস লালন করা অপরিহার্য। এজন্য ঔষধ খাওয়ার সময় দো‘আ শিখানো হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহই রোগ মুক্তিদাতা।[6]
আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সাধকদের চ্যালেঞ্জের নামে অহরহ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হচ্ছে, এসব বিজ্ঞপ্তি দ্বারা এই কথাই বোঝানো হয় যে, চাকরী না পাওয়া, মামলায় পরাজিত হওয়া, সন্তানলাভ না করা, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ প্রভৃতি জটিল সমস্যাও যেন ঐ সব সাধকগণ সমাধান করে থাকেন। আসলে এসব সমস্যার সমাধানকারী আল্লাহ ব্যতীত কাউকে মনে করা শির্কেরই নামান্তর।

>
[1] .আহম্মদ ইবন হাম্বল, প্রাগুক্ত, ৪খ, পৃ. ১৫৪।

[2] . ড. ছালিহ আল-ফাওযান, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮২।

[3] . ইবন মাজাহ, প্রাগুক্ত, ২খ, পৃ. ২৮৫।

[4] . শাইখ সুলাইমান, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৭-১৬৮।

[5] . ইমাম আল বুখারী, প্রাগুক্ত, ১ খ, পৃ. ২৬।

[6] . ইমাম মুসলিম, প্রাগুক্ত, ৪ খ, পৃ. ১৭২২।