অন্যের কাছে দো‘আ চাওয়ার বিধান, সে ব্যক্তি জীবিত হোক কিংবা মৃত - ১

আর যদি তুমি বলো, এই নবী বা ওলী যখন আল্লাহকে ডাকবেন, তখন আল্লাহ তার ডাকে অধিক সাড়া দিবেন, আমি সরাসরি ডাকলে যে সাড়া পাবো না। বস্তুতই এটাই হলো দ্বিতীয় প্রকার।

দ্বিতীয় প্রকার: তা হলো তুমি তার কাছ থেকে কোনো কাজ না চাইবে না এবং তাকে আহ্বানও জানাবে না, কিন্তু তাকে তুমি তোমার জন্য দো‘আ করতে বলবে। যেমন তুমি জীবিত কারও কাছে গিয়ে বলবে, ‘আমার জন্য দো‘আ কর।’ যেমনটি সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ দো‘আ প্রার্থনা করতেন। এটা জীবিতদের কাছে চাওয়া জায়েয, যেমনটি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে; কিন্তু মৃত নবী, ওলী ও অন্যান্যদের কাছে দো‘আ চাওয়া জায়েয হবে না। সুতরাং এভাবে বলা জায়েয হবে না যে, ‘আমার জন্য দো‘আ কর।’ আর এটা বলাও জায়েয হবে না যে, ‘আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে কিছু চাও।’ কারণ সাহাবায়ে কেরাম ও তাবে‘ঈদের কেউ এমনটি করেন নি, এমনকি এমনটি করতে কোনো ইমামও নির্দেশ দেন নি। আর এ বিষয়ে কোনো হাদীসও আসে নি; বরং সহীহ হাদীসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, যখন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সময়ে অনাবৃষ্টি দেখা দিল তখন তিনি আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। তিনি বলেছিলেন,

«اللهم إنا كنا إذا أجدبنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا»

“হে আল্লাহ! আমরা যখন অনাবৃষ্টিতে পতিত হতাম তখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর দো‘আর মাধ্যমে প্রার্থনা করতাম। ফলে আমাদের বৃষ্টি দেওয়া হতো। আর এখন আমরা তোমার নিকট আমাদের নবীর চাচার দো‘আর মাধ্যমে চাচ্ছি। সুতরাং আমাদের বৃষ্টি দিন’ ফলে বৃষ্টি বর্ষিত হতো।”[1] তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে যান নি একথা বলতে যে, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন এবং আমাদের জন্য বৃষ্টি চান। তারা কবরের কাছে এটাও বলতেন না যে, আমরা আপনার কাছে আমাদের ওপর যা আপতিত হয়েছে সে ব্যাপারে অভিযোগ করছি এবং অনুরূপ কিছু। কখনো কোনো সাহাবী এমনটি করেন নি। বরং এটি বিদ‘আত। আল্লাহ তা‘আলাও এ ব্যাপারে কোনো দলীল-প্রমাণ নাযিল করেন নি, বরং যখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে যেতেন তখন তারা তাঁর ওপর সালাম দিতেন। অতঃপর যখন দো‘আ করতে চাইতেন তখন পবিত্র কবরকে সামনে রেখে দো‘আ করতেন না; বরং সেখান থেকে সরে যেতেন এবং কিবলামুখী হতেন। তখন তারা কেবল এক আল্লাহকেই ডাকতেন, যাঁর কোনো শরীক নেই, যেমন তারা অন্যান্য স্থানেও কেবল আল্লাহকেই ডাকতো। (অর্থাৎ তারা দো‘আ কেবল আল্লাহর কাছেই করতেন, কবরবাসীর কাছে নয়)

আর এটা এ কারণে যে মুওয়াত্তা ও অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এসেছে তিনি বলেছেন,

«اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُعْبَدُ، اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»

“হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে এমন মূর্তি-বিগ্রহ বানাবে না, যার ইবাদত করা হয়। মহান আল্লাহর অধিক ক্রোধ আপতিত হয়েছে ঐ জাতির প্রতি যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানায়।”[2]

আর সুনান গ্রন্থসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

«لاَ تَتَّخِذُوا قَبْرِي عِيدًا، وَلاَ بُيُوتَكُمْ قُبُورًا وَصَلُّوا عَلَيَّ حَيْثُ مَّا كُنْتُمْ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِي».

“তোমরা আমার কবরকে ঈদের (সম্মেলন ও আনন্দ উৎসবের) স্থান বানাবে না। তোমরা যেখানে থাক সেখান থেকেই আমার ওপর সালাম পাঠাও। কেননা তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছানো হয়”।[3]

তাছাড়া সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যে শয্যা থেকে আর আরোগ্য হন নি সে মৃত্যু শয্যায় বলেছিলেন,

«لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى، اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»

“ইয়াহূদী ও নাসারাদের ওপর মহান আল্লাহর লা‘নত, এজন্যে যে তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে”।[4] তিনি সাবধান করছেন সে কাজ থেকে যা তারা করেছে। আশেয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “যদি এ সম্ভাবনা না হতো তবে অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের কবর উন্মুক্ত ময়দানে দেওয়া হতো; কিন্তু তিনি কবরকে মসজিদ বানানো অপছন্দ করেছেন।

অনুরূপভাবে সহীহ মুসলিমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে বলেছিলেন:

«إنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ الْقُبُورَ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ فَإِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ»

“নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তীরা কবরসমূহে মসজিদ বানাতো। সাবধান, তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। কেননা আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি।”[5]

তদ্রূপ সুনান আবু দাউদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন,

«لَعَنَ اللَّه زَائِرَات الْقُبُور وَالْمُتَّخِذِينَ عَلَيْهَا الْمَسَاجِد وَالسُّرُج»

“মহান আল্লাহ কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের অভিসম্পাত দিয়েছেন এবং যারা তার উপর মসজিদ নির্মাণ ও আলোকচ্ছটার ব্যবস্থা করে।”[6]

এ কারণে আমাদের আলেমগণ বলেছেন, কোনো কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ জায়েয নেই। তারা আরও বলেন, কবরের উদ্দেশ্যে মানত করা বৈধ নয় এবং আরও বৈধ নয় কবরের পার্শ্ববর্তী লোকদের জন্য কোনো কিছু মানত করা। না কোনো অর্থ, না কোনো তেল, না কোনো মোমবাতি, কোনো পানি বা অন্য কিছু। এ সবকিছুই অবাধ্যতার মানত। অথচ সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন,

«من نذر أن يطيع الله فليطعه، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه»

“যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর অবাধ্যতার মানত করে সে সেন অবাধ্যতা না করে।”[7] (অর্থাৎ অন্যায় কাজটির মানত করলেও তা পূরণ করা যাবে না)।আর এজন্যই আলিমগণ মানতকারীর ওপর কসমের কাফফারা বর্তাবে কি? এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন, এ ব্যাপারে দু’ ধরণের বক্তব্য রয়েছে।

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০১০; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২৮৫০।

[2] মুয়াত্তা ইমাম মালেক, (১/১৮৫); মুসনাদে আহমাদ (২/২৪৬)।

[3] সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ২০৪২; মুসনাদে আহমাদ (২/৩৬৮)।

[4] সহীহ বুখারী, (৩/১৫৬,১৯৮); সহীহ মুসলিম (১/৩৭৭)।

[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩২।

[6] সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ৩২৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৩২০।

[7] সহীহ বুখারী (৮/১৭৭); আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২৮৯; জামে তিরমিযী, হাদীস নং ১৫২৬।