ইতোপূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, সহীহাইনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানের সাওম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়”।[1]

মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, «وما تأخر» এ হাদীসের সনদ হাসান। আরও এসেছে,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়”।[2]

নাসাঈ আরও বৃদ্ধি করেছেন,

«غفر له ما تقدم من ذنبه وما تأخر»

তার পূর্ব ও পরের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।[3]

ইমাম আহমাদ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন,

«فَمَنْ قَامَهَا ابْتِغَاءَهَا إِيمَانًا، وَاحْتِسَابًا، ثُمَّ وُفِّقَتْ لَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ».

“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করবে, অতঃপর সে রাত লাভ করার তাওফীকপ্রাপ্ত হবে, তার পিছনের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে”।[4]

...

গুনাহ ক্ষমা হওয়া বা গুনাহের কাফফারা হওয়ার শর্ত হলো, সাওম অবস্থায় যা কিছু থেকে বিরত থাকা জরুরি সে সব জিনিস থেকে বিরত থাকা ও নিজেকে সংরক্ষিত রাখা। জমহুরের মতে, এখানে কাফফারা বলতে সগীরা গুনাহ মাফ হবে। কেননা মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ».

“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ থেকে আরেক জুমু‘আ পর্যন্ত এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত এসব তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে”।[5] এ হাদীসের ব্যাখ্যা দু’ধরণের:

প্রথমত: গুনাহের কাফফারার জন্য শর্ত হলো কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা।

দ্বিতীয়ত: হাদীসে বর্ণিত এসব ফরযসমূহ বিশেষ করে সগীরা গুনাহর কাফফারা।

ইবন মুনযির রহ. বলেন, লাইলাতুল কদরে কবীরা ও সগীরা উভয় ধরণের গুনাহ মাফের আশা করা যায়।

কেউ কেউ বলেছেন: এর মতো সাওমের দ্বারাও কবীরা ও সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, কবীরা গুনাহ খাটি তাওবা ব্যতীত মাফ হয় না। অবশ্য আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীস প্রমাণ করে যে, উক্ত তিনটি কারণ (সালাত, জুমু‘আ ও রমযান) প্রতিটি তার পূর্ববর্তী গুনাহের কাফফারা। অতএব, লাইলাতুল কদরে সালাত আদায়ের দ্বারা পূর্বের গুনাহের কাফফারা হবে, যখন সে তা প্রাপ্ত হবে, যদিও ব্যক্তি সে দিনটি অনুভব করতে পারে নি। অন্যদিকে রমযানের সাওম পালন ও তারাবীহর সালাত আদায় দ্বারা গুনাহের কাফফারা হওয়ার বিষয়টি পুরো রমযান মাস পূর্ণ করে সেগুলো আদায় করার সাথে সম্পৃক্ত।

কেউ কেউ বলেন, রমযানের শেষ দিনের রাতে ক্ষমা করা হয়।

....

মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ وَصَلَّى الصَّلَوَاتِ وَحَجَّ البَيْتَ - لَا أَدْرِي أَذَكَرَ الزَّكَاةَ أَمْ لَا - إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ ».

“যে ব্যক্তি রমযানের সাওম পালন করল, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করল –বর্ণনাকারী বলেন, তিনি যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন কী-না জানি না- আল্লাহর ওপর কর্তব্য হলো তাকে ক্ষমা করে দেওয়া”।[6]

ইমাম যুহরী রহ. বলেন, ঈদের দিন মানুষ যখন সালাতের জন্য ঈদগাহে বের হয় তখন আল্লাহ তাদের সম্মুখে বের হয়ে বলেন, হে আমার বান্দা তোমরা আমার জন্য সাওম পালন করেছ, আমার জন্য সালাতে দাঁড়িয়েছ। আজ তোমরা ক্ষমাকৃত হয়ে ফিরে যাও। মুওয়াররিক্ব বলেন, সেদিন (ঈদের) কতিপয় লোক এমনভাবে ফিরে আসে যেমন একজন সন্তান তার মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়।

...

সাওম ও অন্যান্য ইবাদত যে কেউ পুরোপুরি হক আদায় করে পালন করবে সে আল্লাহর প্রতিদানপ্রাপ্ত উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হক আদায় না করে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও গাফলতিসহ আদায় করবে তার জন্য দুর্ভোগ। দুনিয়ার পরিমাপেই যদি তাদের জন্য দুর্ভোগ হয় তাহলে আখিরাতের পরিমাপে তাদের জন্য কী পরিমাণ দুর্ভোগ হবে তা কল্পনাই করা যায় না। কবি বলেছেন:

ويحصدُ الزَّارعُونَ ما زرعوا
    

غدًا توفّى النفوسُ ما عَمِلت

وإن أساءُوا، فبئْسَما صنعوا
    

إِن أحسنوا أحسنوا لأنفسِهمُ

আগামী দিন সব আত্মাকে তাদের কৃতফল দেওয়া হবে। শস্য বপনকারী যা বপন করেছে তা সে তুলবে। তারা যদি নিজের জন্য উত্তম কাজ করে থাকে তাহলে সে উত্তমই পাবে। আর যদি নিজের জন্য খারাপ কিছু করে থাকে তাহলে কতই না নিকৃষ্ট কাজ সে করল।

সৎপূর্বসূরীগণ কোনো কাজ পরিপূর্ণ ও নিঁখুতভাবে করতে কঠোর পরিশ্রম করতেন। কাজটি সুন্দরভাবে করার পরে তা কবুল করানোর জন্য তৎপর ছিলেন এবং আল্লাহ কর্তৃক ফেরত দেওয়ার ভয় করতেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমরা আমল করার সাথে আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারেও খুব গুরুত্ববান হও। কেননা তাকওয়া ব্যতীত আমল কবুল হয় না।[7] তোমরা কি শুনো নি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ٢٧﴾ [المائ‍دة: ٢٧]

“আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২৭]

ফুদালাহ রহ. বলেন, আল্লাহ আমার থেকে এক শস্যদানা পরিমাণ আমল কবুল করা আমার কাছে দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ٢٧﴾ [المائ‍دة: ٢٧]

“আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২৭]

মালিক ইবন দীনার রহ. বলেন, আমল কবুল না হওয়ার ভয় আমল করার চেয়ে অধিক কঠিন।

‘আতা আস-সুলামী রহ. বলেন, ভালো আমল কবুল না হওয়ার মারাত্মক ভয় হচ্ছে তা একমাত্র আল্লাহর জন্য না হওয়া।

আব্দুল আযীয ইবন আবী রাওয়াদ রহ. বলেন, আমি তাদেরকে (আলিমদেরকে) এমন পেয়েছি যে তারা সৎ আমলের ব্যাপারে কঠোর পরিশ্রম করত। যখন তারা ভালো কাজটি সম্পন্ন করত তখন তারা চিন্তা করত আমলটি কি কবুল হলো নাকি কবুল হয় নি?

কোনো এক সৎপূর্বসূরী বলেন, তারা (আলিমগণ) ছয় মাস রমযান মাস পাওয়ার জন্য দো‘আ করতেন আর ছয় মাস তাদের আমল কবুল হওয়ার জন্য দো‘আ করতেন।

কোনো এক সৎপূর্বসূরীর চেহারায় ঈদের দিন দুশ্চিন্তা দেখা গেল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এটি তো আনন্দ ও খুশির দিন। তিনি বললেন, তোমরা ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি তো আল্লাহর বান্দা মাত্র। তিনি আমাকে আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমার আমল কবুল হয়েছে কি হয় নি তা তো আমি জানি না।

উহাইব রহ. একদল লোককে ঈদের দিন হাসতে দেখে তাদেরকে তিনি বললেন, ঐসব সাওম পালনকারীদের আমল যদি কবুল করা হয় তাহলে তাদের আনন্দ-হাসি আল্লাহর শুকর আদায়কারীদের কাজ নয়। আর যদি তাদের আমল কবুল করা না হয় তাহলে তাদের এ কাজ তো ভীতি-সন্ত্রস্ত লোকদের কাজ নয়। (অর্থাৎ কবুল হলে শুকরিয়া আদায় করা, আর কবুল না হলে কান্নাকাটি করা উচিত, হাসা-হাসি করা নয়)হাসান রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা রমযানকে বান্দার জন্য প্রতিযোগিতার ময়দান হিসেবে দিয়েছেন। তারা এ মাসে আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতিযোগিতা দিয়ে থাকেন। সুতরাং যারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে তারা সফলকাম আর যারা পিছিয়ে থাকবে তারা ব্যর্থ ও অকৃতকার্য হবে। তাই যেদিন সৎকর্মশীলকে সফলতার পুরস্কার ও ব্যর্থদেরকে তিরস্কার করা হবে সেদিন (ঈদের দিন) প্রতিযোগী হাসি-তামাশা করবে এটা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬০।

[3] সুনান নাসাঈ আল-কুবরা, হাদীস নং ২৫২৩।

[4] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২২৭১৩, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন; তবে দুটি ইবারত ব্যতীত। সে দুটি ইবারত হলো (أَوْ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ) এবং (وَمَا تَأَخَّرَ)।

[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩।

[6] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫৩০, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

[7] হিলইয়াতুল আওলিয়া, ১/৭৫।

 আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রমযানের শেষ দিন রাতে ডেকে বলতেন, হায় আফসোস! আমি তো জানি না, কার আমল কবুল হয়েছে যাকে আমি অভিনন্দন জানাবো, আর কার আমল কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে যাকে আমি সমবেদনা জানাব। হে যার আমল গ্রহণ করা হয়েছে, তোমার জন্য সুসংবাদ, আর হে যার আমল কবুল না হয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, দো‘আ করছি আল্লাহর তোমার মুসিবত দূর করে দিন।

রমযান মাসে ক্ষমা ও মাগফিরাতের অনেক উপকরণ রয়েছে। ক্ষমার অন্যতম উপায় হচ্ছে, রমযানের সাওম পালন করা ও কিয়াম তথা তারাবীহর সালাত আদায় করা, বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে সালাত আদায়।

ক্ষমার আরেকটি উপায় হচ্ছে, সাওম পালনকারীদেরকে ইফতার করানো এবং দাস-দাসী ও কর্মচারীর কাজের চাপ কমানো।

তাছাড়া ক্ষমার আরেকটি উপায় হলো, আল্লাহর যিকির করা। কেননা হাদীসে এসেছে, আল্লাহর যিকিরকারী ক্ষমাপ্রাপ্ত এবং তাঁর কাছে প্রার্থনাকারীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।

ক্ষমার আরেকটি উপায় হলো, আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করা, তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করা, আর সাওম পালনকারীর সিয়াম অবস্থায় ও ইফতারির মুহূর্তে করা দো‘আ কবুল করা হয়। ...

ক্ষমার আরেকটি উপায় হলো, সাওম পালনকারীর জন্য ফিরিশতাগণ ইফতার করার আগ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। রমযানে যেহেতু ক্ষমার অনেক উপায় রয়েছে, তাই এত উপায় থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি ক্ষমা পেল না সে প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত। কা‘ব ইবন উজরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন,

«احْضَرُوا الْمِنْبَرَ فَحَضَرْنَا فَلَمَّا ارْتَقَى دَرَجَةً قَالَ: آمِينَ ، فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّانِيَةَ قَالَ: «آمِينَ» فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ الثَّالِثَةَ قَالَ: آمِينَ، فَلَمَّا نَزَلَ قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَقَدْ سَمِعْنَا مِنْكَ الْيَوْمَ شَيْئًا مَا كُنَّا نَسْمَعُهُ قَالَ: إِنَّ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَرَضَ لِي فَقَالَ: بُعْدًا لِمَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يَغْفَرْ لَهُ قُلْتُ: آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّانِيَةَ قَالَ: بُعْدًا لِمَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ قُلْتُ: آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّالِثَةَ قَالَ: بُعْدًا لِمَنْ أَدْرَكَ أَبَوَاهُ الْكِبَرَ عِنْدَهُ أَوْ أَحَدُهُمَا فَلَمْ يُدْخِلَاهُ الْجَنَّةَ قُلْتُ: آمِينَ».

“তোমরা মিম্বার নিয়ে আসো, ফলে আমরা মিম্বার নিয়ে আসলাম। যখন তিনি মিম্বারের প্রথম সিঁড়িতে উঠলেন, বললেন, আমীন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে আবার বললেন, আমীন। অনুরূপভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। তিনি মিম্বার থেকে নেমে আসলে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে আমরা আজ যা শুনলাম ইতোপূর্বে কখনও এরূপ শুনি নি। তিনি বললেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার কাছে আসলেন, তিনি বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমযান পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, আমি বললাম, আমীন। আমি যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠলাম জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো অথচ সে আপনার ওপর দুরুদ ও সালাম পেশ করল না। আমি বললাম, আমীন। আবার আমি যখন তৃতীয় সিঁড়িতে উঠলাম তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে বৃদ্ধ অবস্থায় তার পিতামাতা দু’জনকে বা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা যত্ন করে জান্নাতে যেতে পারল না। আমি বললাম, আমীন।”[1]

কাতাদা রহ. বলেন, বলা হয়ে থাকে যে ব্যক্তি রমযানে ক্ষমা পেল না সে এরপরে আর ক্ষমা পাবে না।... কেননা যে ব্যক্তি রমযানে ক্ষমা পেল না সে কখন ক্ষমা পাবে? যার লাইলাতুল কদরে তাওবা ফিরিয়ে দেওয়া হবে তার তাওবা কখন কবুল করা হবে? রমযানে সংশোধন না হলে সে কখন সংশোধিত হবে? যার অজ্ঞতা ও অলসতার রোগ রয়েছে সে কখন সে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করবে? কবি বলেছেন:

واختصَّ بالفوزِ بالجنات مَنْ خَدَما
    

رحَّلَ الشَّهرُ وَا لهْفَاهُ وانــــصرمَا

مثلي، فيا ويْحهُ، ياعُظْمَ ما حُــرِما
    

وأصبح الغافلُ المسكينُ منكسرا

تراهُ يحصد إلاّ الهمّ والنَّـــــدَمَـا
    

من فاته الزرعُ في وقت البذارِ فما

রমযান চলে যাচ্ছে, সে শেষ হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। যে ব্যক্তি রমযানকে কাজে লাগিয়েছে তার জন্য জান্নাত অবধারিত। আমার মত গাফিল, মিসকীন ভেঙ্গে পড়ছে। তার জন্য আফসোস, সে কত বড় জিনিস থেকে বঞ্চিত। চারা বপনের সময়ই যদি সেটি বপন না করা যায়, তাহলে ফসল তোলার সময় তো দুঃখ-দুশ্চিন্তা আর অনুশোচনা ব্যতীত কিছুই পাবে না।

রমযান মাসের প্রথমে রহমত, মাঝে মাগফিরাত আর শেষে আছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। হাদীসে এসেছে,

«إِذَا كَانَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ».

“রমযান মাস আসলে রহমাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়”।[2]

«وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ».

“আর বহু লোককে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ থেকে থাকে”।[3]

তবে রমযানের প্রথম ভাগে রহমতের অংশ বেশি, মধ্য ভাগে মাগফিরাত ও শেষ ভাগে রয়েছে সেসব লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি যারা গুনাহের ভারে জর্জরিত ও যাদের ওপর কবীরা গুনাহের কারণে জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে।

...

ফিতরের দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদের দিন। কেননা সেদিন সাওম পালনকারী কবীরা গুনাহগারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেদিন গুনাহগারগণ সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিত হয়। এমনিভাবে ইয়াওমুন নাহর তথা কুরবানীর দিন হলো মুসলিমের জন্য বড় ঈদের দিন। কেননা এ ঈদের পূর্বে রয়েছে আরাফার দিন। আর ‘আরাফার দিনে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দু’দিনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে তার জন্য এ দিন দু’টি সত্যিকারের ঈদের দিন; কিন্তু যার মুক্তি মিলবে না তার জন্য এ দিন দু’টি শুধুই পরিতাপ আর শাস্তি ভোগ করার প্রতিশ্রুতির দিন।

ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি যেহেতু রমযানের সাওম পালন ও সালাত আদায়ের সাথে জড়িত, তাই আল্লাহ তাঁর তাকবীর ও শুকরিয়াস্বরূপ দিনগুলো পরিপূর্ণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ١٨٥﴾ [البقرة: ١٨٥]

“আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫] সুতরাং যিনি বান্দাকে সাওম পালন ও সালাত আদায়ে তাওফিক দান করেছেন, এসব কাজে যিনি তাদের সাহায্য করেছেন এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন তাঁর শুকরিয়া হচ্ছে, তাঁর যিকির করা, তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা এবং যথাযথ তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করা।

ওহে সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন, সাবধান তুমি (গোনাহ থেকে) স্বাধীন হওয়ার পরে আবার (গোনাহের) গোলামীর কাতারে ফিরে যেওনা। তোমার মনিব তোমাকে জাহান্নামের কিনারা থেকে দুরে সরিয়ে নিয়েছেন তুমি কি সেটার কিনারায় উপনীত হতে চাও? তোমার মাওলা তোমাকে সেখান থেকে রক্ষা করেছেন, তুমি কি সেটায় পড়তে চাও? তুমি কি তা থেকে পাশ কাটিয়ে চলবে না?

মুহসিনীন তথা সৎকর্মশীলদের জন্য তাঁর রহমতের অঙ্গিকার থাকলেও পাপীরা তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। তাঁর মাগফিরাত মুত্তাকিনদের জন্য হলেও যালিমগণ তাঁর মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত হয় না। কবি বলেছেন:

فمن الذي يرجوُ ويدعو المذنبُ؟
    

إن كانَ لا يرجوكَ إلا مُحسنٌ

তোমার (আল্লাহর) কাছে যদি সৎকর্মশীলরাই পাওয়ার আশা করে, তাহলে গুনাহগাররা কার কাছে গুনাহ মাফের আশা করবে এবং কাকে ডাকবে?

কেন আমাদের রবের কাছে ক্ষমার আশা করে না? আর কেনই বা তাঁর সহিষ্ণুতার প্রত্যাশা করে না?

হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার ব্যাপারে তার মায়ের চেয়েও অধিক দয়াশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا٥٣﴾ [الزمر: ٥٢]

“বলুন ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]

[1] মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৭২৫৬, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম কেউ উল্লেখ করেননি। ইমাম যাহাবী রহ. সহীহ বলেছেন। আবূ হুরাইরা, আনাস ও জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে অনুরূপ বর্ণনা আছে। দেখুন, তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৫। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৭৯।

[3] তিরমিযী, হাদীস নং ৬৮২, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, এ পরিচ্ছেদে আব্দুর রহমান ইবন ‘আউফ, ইবন মাস‘ঊদ ও সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবন মাজাহ, ১৬৪২। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। নাসাঈ, ২১০৭।

হে অপরাধী গুনাহগার (আমরা সকলেই গুনাহগার) তোমার পাপের কারণে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমার মতো কত পাপীকে রমযানের এ দিনগুলোতে কত মানুষকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তাই তোমার রবের ব্যাপারে সুধারণা কর, তাঁর কাছে তাওবা কর। কেননা নিজেকে নিজে ধ্বংসকারী ব্যতীত অপর কাউকে আল্লাহ ধ্বংস করেন না। কবি বলেছেন:

برفع يَدٍ بالليل والليلُ مظلمُ

إذا أوجعتْك الذنوب فداوِها

قنوطك منها من ذنوبك أعظم

ولا تقنطن من رحمة الله، إنما

তুমি গুনাহের রোগে রোগাক্রান্ত হলে রাতের অন্ধকারে হাত তুলো। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমার গুনাহের চেয়ে তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া অধিক মারাত্মক অপরাধ।

যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চায় তার উচিৎ জাহান্নাম থেকে নাজাতের যেসব উপায় আছে সেগুলো অনুসরণ করা। আবু কিলাবা রহ. জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশায় তার এক সুন্দরী দাসীকে রমযানের শেষ দিনে মুক্ত করে দেন।

...

সুতরাং রমযানে সায়িমকে ইফতার করানো, অধীনস্ত কর্মচারীর কাজ হালকা করে দেওয়া, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা এর সাক্ষ্য দেওয়া এবং ইসতিগফার পড়া জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়।

তাওহীদের কালেমা গুনাহকে নিঃশেষ করে দেয়। তাওহীদের কালেমা উচ্চরণকারীর পূর্বের ও পরের গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। এ কালেমা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে। যে ব্যক্তি এ কালেমা সকাল সন্ধ্যা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। যে ব্যক্তি এ কালেমা ইখলাসের সাথে অন্তর থেকে বলবে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।

ইসতিগফারের কালেমা ক্ষমা পাওয়ার অন্যতম উপায়। কেননা ইসতিগফার মানে ক্ষমার দো‘আ। সাওম অবস্থায় ও ইফতারের সময় সায়িমের দো‘আ আল্লাহ কবুল করেন। হাসান রহ. বলেন, তোমরা অধিক পরিমাণে ইসতিগফার করো। কেননা তোমরা জানো না কখন রহমত নাযিল হয়। লুকমান আলাইহিস সালাম তার সন্তানকে বলেছেন: হে আমার প্রিয় সন্তান! তুমি তোমার যবানে ইসতিগফার চালু রাখো। কেননা আল্লাহর কাছে এমন কিছু সময় আছে যে সময় দো‘আকারীর দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। কোনো এক লোক বলেছেন: ইবলিশ শয়তান বলে, আমি গুনাহের দ্বারা মানুষকে ধ্বংস করেছি, আর তারা আমাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও ইসতিগফার দ্বারা ধ্বংস করেছে। সব ভালো আমলের উত্তম পরিণাম হলো ইসতিগফার। ইসতিগফারের দ্বারাই সালাত, হজ, কিয়ামুল লাইল ও সব ধরণের মজলিশ শেষ কর। মজলিশ যদি আল্লাহর যিকিরের হয় তাহলে ইসতিগফার তাতে সীলমোহরের কাজ করবে, আর যদি মজলিশে কোনো ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে ইসতিগফারের দ্বারা তার কাফফারা হয়ে যাবে। এমনিভাবে ইসতিগফারের দ্বারাই রমযানের সাওম পালন সমাপ্তি করা উচিৎ।

উমার ইবন আব্দুল আযীয বিভিন্ন জায়গায় এ ফরমান জারি করেন যে, রমযান মাস, সদকা ও সদকা ফিতর ইসতিগফারের মাধ্যমে শেষ করা। কেননা সদকা ফিতর সায়িমের সাওমের ভুল-ত্রুটি ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে পবিত্রতা। আর ইসতিগফার সায়িমের অনর্থক ও অশ্লীল কাজের কাফফারাস্বরূপ।

উমার ইবন আব্দুল আযীয তার এক চিঠিতে লেখেন, তোমাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম যেমন বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ٢٣﴾ [الاعراف: ٢٣]

“হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৩] আল্লাহর নবী নূহ আলাইহিস সালাম যেভাবে বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿وَإِلَّا تَغۡفِرۡ لِي وَتَرۡحَمۡنِيٓ أَكُن مِّنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ٤٧﴾ [هود: ٤٧]

“আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৪৭]

মূসা আলাইহিস সালাম যেভাবে বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿رَبِّ إِنِّي ظَلَمۡتُ نَفۡسِي فَٱغۡفِرۡ لِي١٦﴾ [القصص: ١٦]

‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নফসের প্রতি যুলুম করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন”। [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ১৬]

যুন নূন যেভাবে বলেছেন তোমরাও সেভাবে বলো,

﴿لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ٨٧﴾ [الانبياء: ٨٧]

“আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭]

সাওম জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢালস্বরূপ। অনর্থক কথাবার্তা সে ঢালকে নষ্ট করে দেয় আর ইসতিগফার সে জ্বলন্ত ঢালকে রক্ষা করে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। সুতরাং মুমিন রমযানে সাওম ও কিয়ামুল লাইলে কঠোর পরিশ্রম করে। রমযান শেষ হওয়ার উপক্রম হলে এবং লাইলাতুল কদর আসলে সে শুধু আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করে, যেমনিভাবে অল্প আমলকারী অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়।

ইয়াহইয়া ইবন মু‘আয রহ. বলেন, সে ব্যক্তি প্রকৃত আল্লাহর পরিচয় লাভকারী (‘আরিফ) নয় যার একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর ক্ষমা চাওয়া হবে না। যে ব্যক্তি মুখে ইসতিগফার করল; কিন্তু তার অন্তর গুনাহের কাজ আবার করার দৃঢ় সংকল্প, সে রমযান শেষ হলেই আবার পাপে ফিরে যাবে তার সাওমও প্রত্যাখান করা হবে এবং তার সাওম কবুলের দরজাও বন্ধ হয়ে যাবে।

কা‘ব রহ. বলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করল আর সে মনে মনে ভাবল যে রমযান শেষ হলে তার রবের অবাধ্যতা করবে তাহলে তার সাওম প্রত্যাখান করা হবে। আর যে ব্যক্তি সাওম পালন অবস্থায় এ নিয়াত করল যে রমযান মাস শেষ হলে আর গুনাহ করবে না তাহলে তার সাওম কবুল করা হবে এবং সে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবে।

জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এটা অন্যতম দো‘আ ছিল, তিনি বলেছিলেন,

«حَوْلَهَا نُدَنْدِنُ».

“আমিও জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্যই দো‘আ করি এবং সেটার আশেপাশেই ঘুরে থাকি”।[1] সুতরাং সাওম পালনকারী দো‘আ করার সময় তা কবুল হওয়ার আশা করবে এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দো‘আ করা ছেড়ে দিবে না। ... সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপহার পাবে সে সর্বদা সৌভাগ্যবানই হবে, এরপরে সে কখনও হতভাগা হবে না। দো‘আ কবুল হওয়ার সময় আল্লাহর সুবাস ছড়িয়ে দেয়। তখন ব্যক্তির জান্নাত চাওয়া উচিৎ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া উচিৎ। তার দো‘আ কবুল হলে সে আজীবনের জন্য সফলকাম হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَ١٨٥﴾ [ال عمران: ١٨٥]

“সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫]

কবি বলেছেন: যে ব্যক্তি দুনিয়া দ্বারা সৌভাগ্যবান সে প্রকৃত সৌভাগ্যবান নয়, বরং সে-ই আসল সৌভাগ্যবান যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।

হে আল্লাহর বান্দা! রমযান মাস চলে যাচ্ছে। আর মাত্র কয়েক দিন বাকী। যারা রমযানের হক আদায় করছ তারা অবশিষ্ট দিনগুলোও ভালোভাবে পূরণ করো। আর যারা এতদিন সাওম পালন ছেড়ে দিয়েছ তারা ভালোর সাথে রমযানকে শেষ করো। শেষ পরিণতি হিসেবেই ব্যক্তির আমল ধর্তব্য। সুতরাং রমযানের বাকী দিনগুলোকে গনীমত হিসেবে গ্রহণ করো এবং তাকে সর্বোত্তম অভিবাদন দিয়ে গ্রহণ করো।কত হতভাগাকে নসীহত করা হয়, কিন্তু সে নসীহত গ্রহণ করে না। কত মানুষকে সংশোধনের দিকে আহ্বান করা হয়, কিন্তু সে সংশোধনের ডাকে সাড়া দেয় না। কত পথিক চলে গেছে, কিন্তু সে এখনও বসে আছে। যখন সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে, মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে তখন নিজের বাড়াবাড়ির জন্য অনুশোচনা ছাড়া কিছুই থাকবে না।... রমযান মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের চোখের অশ্রু ঝড়ছে, রমযান চলে যাওয়ার বেদনায় তারা ব্যথিত। সম্ভবত রমযানের বিদায়ের ব্যাপারে একটু চিন্তা-ভাবনা জ্বলন্ত আগুন নিভে যাবে, সম্ভবত এটি তাওবার সময়, হয়ত সাওমের দ্বারা সব আগুন নিভে যাবে, হয়ত যে ব্যক্তি সৎকাফেলার দল থেকে বিচ্ছিন্ন তারা সে কাফেলায় যোগ দিবে, হয়ত যার ওপর জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।

>
[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৯২। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে