যে অন্তর মানুষের প্রশংসা ও গুণগান পাওয়ার ভালোবাসা ও লোকদের কাছে কিছু পাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করে সে অন্তরে ইখলাস একত্রিত হয় না, যেমনিভাবে পানি ও আগুন একত্রিত হয় না, গিরগিটি ও তিমি যেমন এক হয় না। তোমার অন্তর যখন ইখলাস অর্জনের কথা বলবে তখন তুমি তোমার অন্তরের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাছে গিয়ে আগে তাকে না পাওয়ার ছুরি দিয়ে জবাই করে দাও। মানুষের প্রশংসা ও গুণকীর্তন পাওয়ার আশাকে আখিরাত পাওয়ার প্রেমিকদের যুহুদ তথা তাপস্য করো। তোমার উচ্চাভিলাষকে যখন তুমি জবাই করতে সক্ষম হবে এবং মানুষের প্রশংসা ও গুণকীর্তন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে পারবে তখন তোমার জন্য ইখলাস অর্জন সহজ হয়ে যাবে।

যদি তুমি জিজ্ঞেস করো, উচ্চাভিলাষ এবং মানুষের প্রশংসা ও গুণকীর্তন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে ত্যাগ করা আমার জন্য সহজ? আমি বলল, উচ্চাভিলাষকে খতম করার সহজ উপায় হচ্ছে তুমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে যে, মানুষ যা কিছুই আশা করে তার ভাণ্ডার আল্লাহর কাছেই রয়েছে, তিনি ব্যতীত কেউ এর মালিক নয়, তিনি ব্যতীত কেউ তা বান্দাহকে দিতে পারে না।

অন্যদিকে মানুষের প্রশংসা ও গুণকীর্তন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার সহজ উপায় হচ্ছে, তোমার অকাট্য ইলম যে, আল্লাহ ব্যতীত কারো প্রশংসা কোনো উপকারে আসবে না, ব্যক্তিকে সুসজ্জিত করতে পারে না, তিনি ব্যতীত কারো নিন্দা কাউকে ক্ষতিও করতে পারে না। যেমন একজন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন,

إِنَّ حَمْدِي زَيْنٌ وَإِنَّ ذَمِّي شَيْنٌ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ»

“আমার প্রশংসায়ই একজন প্রশংসিত হয় আর আমার নিন্দায়ই একজন নিন্দিত হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এতো আল্লাহ তা‘আলারই এখতিয়ার।”[1] অতএব, যার (মানুষের) প্রশংসায় প্রশংসিত হওয়া এবং যার নিন্দায় নিন্দিত হওয়ার কিছু আসে যায় না তার প্রশংসা বা নিন্দা থেকে যুহুদ (বিমূখ হও) করো; বরং যার (আল্লাহর) প্রশংসায় সব কিছু সুন্দর ও প্রশংসিত হয় তার প্রশংসা পেতে আগ্রহী হও এবং যার নিন্দায় সব কিছু নিন্দিত হয় সে নিন্দা থেকে বেঁচে থাকতে সচেষ্ট হও। ধৈর্য ও ইয়াকীন ব্যতীত এগুলো অর্জন করতে সক্ষম হবে না। যখনই তোমার থেকে ধৈর্য ও ইয়াকীন হারিয়ে যাবে তখন তোমার অবস্থা এমন হবে যে, যে ব্যক্তি যানবাহন ব্যতীত অথৈ সমুদ্র পাড়ি দিতে ইচ্ছা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ فَٱصۡبِرۡ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّٞۖ وَلَا يَسۡتَخِفَّنَّكَ ٱلَّذِينَ لَا يُوقِنُونَ ٦٠ ﴾ [الروم: ٦٠]

“অতএব, আপনি সবর করুন। নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা হক। আর যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে না তারা যেন তোমাকে অস্থির করতে না পারে।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৬০]

﴿ وَجَعَلۡنَا مِنۡهُمۡ أَئِمَّةٗ يَهۡدُونَ بِأَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُواْۖ وَكَانُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا يُوقِنُونَ ٢٤ ﴾ [السجدة : ٢٤]

“আর আমি তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা করেছিলাম, তারা আমার আদেশানুযায়ী সৎপথ প্রদর্শন করত, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখত।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ২৪]

[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৬৭; আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। নাসায়ী, হাদীস নং ১১৫১৫।