সমস্ত কল্যাণের মূল হলো এ কথা জানা যে, আল্লাহ যা কিছু ইচ্ছা করেন তা হবেই এবং তিনি যা কিছু চান না তা কখনওই হবে না। অতএব, এ ইয়াকীন রাখা যে, সৎকাজ আল্লাহর অন্যতম নি‘আমত, তাই এর জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং আল্লাহর কাছে বিনীত মিনতি করা যে, তিনি যেন কখনও এ নি‘আমত ছিন্ন না করেন। আর অসৎকাজ তাঁর অপমান ও শাস্তিস্বরূপ। সুতরাং আল্লাহর কাছে করজোরে আকুতি-মিনতি করা যে, তিনি যেন অসৎকাজ ও তার মধ্যে বাধা প্রদান করেন। সৎকাজ করা ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নিজের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া।

আল্লাহকে যারা যথাযথভাবে জেনেছে তারা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, সমস্ত কল্যাণের মূল হলো বান্দার প্রতি আল্লাহর তাওফীক, আর সব অন্যায় কাজের মূল হলো আল্লাহ বান্দাকে একাকী ছেড়ে দেওয়া। তারা আরও একমত যে, তাওফীক হলো আল্লাহ তোমাকে তোমার নিজের ওপর নির্ভরশীল করবেন না। আর আল্লাহ তোমাকে পরিত্যাগ করা হলো তোমাকে ও তোমার নফসকে একা ছেড়ে দেওয়া। যেহেতু সব কল্যাণের মূল হলো আল্লাহর তাওফীক (আর এ তাওফীক আল্লাহর হাতে, বান্দার হাতে নয়) সুতরাং এ তাওফীকের চাবিকাঠি হলো দো‘আ, আল্লাহর কাছে অভাবী হওয়া, সত্যিকারার্থে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়া, তাঁর প্রতি আসক্ত হওয়া এবং তাঁর প্রতি বিরাগভাজন হওয়া। আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে এ চাবি দান করেন তখন তিনি তার জন্য কল্যাণের দরজা খুলে দেন। আর বান্দা যখন এ চাবি হারিয়ে ফেলে তখন তার কল্যাণের দরজা দুলতে দুলতে অন্যের কাছে চলে যায়।

আমিরুল মুমিনীন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি কখনও দো‘আ কবুল হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না; শুধু দো‘আ করার আশা করি। কেননা আমি যখনই দো‘আ করার ইচ্ছা করি তখন আমার অন্তর এ কথা জানে যে, দো‘আ কবুল হওয়া দো‘আর সাথেই থাকে।’

বান্দার নিয়াত, অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য ও আগ্রহ অনুসারে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্য হয়। অতএব, বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য বান্দার অভিপ্রায়, দৃঢ়তা, আগ্রহ ও আশঙ্কা অনুযায়ী হয়ে থাকে। আবার বান্দার নিয়ানুসারে আল্লাহ তাদেরকে পরিত্যাগ করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওতা‘আলা (যিনি সর্ববিজ্ঞ ও সৃষ্টিকুলের সর্বজ্ঞ) উপযুক্ত জায়গাতেই তাওফীক দান করেন এবং উপযুক্ত কারণেই তাকে পরিত্যাগ করেন। তিনি সর্বজ্ঞাত ও বিজ্ঞ। কেউ তাঁর শুকরিয়া না করলে এবং তাঁর কাছে স্বীয় অভাব প্রকাশ ও দো‘আয় অবহেলা করলে তাকে আল্লাহ নি‘আমত দান করেন না। আর যে ব্যক্তি তাঁর শুকরিয়া আদায়, যথার্থ অভাব প্রকাশ ও দো‘আ করবে সে আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাঁর সাহায্যে তাঁর নি‘আমত লাভে জয়ী হবে।

আর কল্যাণ লাভের মূল শর্ত হচ্ছে ধৈর্যধারণ। কেননা ধৈর্যধারণ করা ঈমানের সেরূপ অংশ, মাথা যেমন শরীরের অংশ। যখন মাথা কর্তিত হয় তখন শরীরের অবশিষ্টতা থাকে না।